পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি তানসেন ঐসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সঙ্গীতকার তানসেনের নাম ভারতবর্ষে সকলেই জানে। কিন্তু তানসেন কেবল যে একজন যুগাবতার সঙ্গীত-রচয়িত ও গায়ক ছিলেন তাহা নহে,—তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর কবিও ছিলেন, ইহ। তাহার রচিত ধ্রুপদ গানের বাণী বা কথা হইতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় । বিভিন্ন রাগে তিনি যে সব গান রচিয়া গিয়াছেন, সেগুলি তাহার অতুলনীয় কবিত্ব-শক্তির পরিচায়ক । ভারতের কালোয়াতী অর্থাৎ কলাবস্তগণের মধ্যে প্রচলিত সঙ্গীত-রীতিই এদেশের প্রাচীন (অর্থাৎ মুখ্যতঃ মুসলমান-পূৰ্ব্ব যুগের ) সঙ্গীত-রীতির ধারা রক্ষা করিয়া বিদ্যমান । এই কলাবস্ত-সঙ্গীতই ভারতের classical অর্থাৎ প্রাচীন কাল হইতেই উচ্চকোটির বলিয়া গৃহীত সঙ্গীত। ভারতের কলাবস্ত-সঙ্গীত দুইটী বিভাগে বা রূপে মিলে—হিন্দুস্তানী বা উত্তর ভারতীয়, এবং কর্ণাটী ব। দক্ষিণ ভারতীয়। বিগত কয় শতকের ইতিহাসে, উত্তর ভারতীয় চালের সঙ্গীতে তানসেন, এবং দক্ষিণ ভারতীয় চালের সঙ্গীতে ঐরামের ভক্ত তেলুগুজাতীয় গায়ক ত্যাগরায় ( ইহায় মৃত্যু খ্ৰীষ্টাব্দ ১৮৪৭-এ হয় )—এই দুই জনের নাম সৰ্ব্বপ্রধান। একজাতীয় হইলেও, হিন্দুস্থানী ও কর্ণাটা সঙ্গীতের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য আছে । সাধারণত: লোকের ধারণা ঘে কর্ণাটী সঙ্গীভই শুদ্ধতর, ইহাতে বাহির হইতে মুসলমানদের আনত তুকী ও ইরাণী উপাদান প্রবেশ করে নাই ; কিন্তু হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে পারস্ত তুরস্ক ইরাক ও আরয হইতে আহৃত উপাদান কিছু কিছু মিলিয়৷ ইহার প্রাচীন বা হিন্দু বিশুদ্ধিকে নষ্ট করিয়া দিয়াছে। উত্তয় ভারতের ধ্ৰুপদ সঙ্গীতে যে বাহিরের জিনিস ততটা আসিতে পারে নাই, ইহাও একরকম সৰ্ব্ববাদিসন্মত। প্রাচীন হিন্দু সঙ্গীতের রূপটা ধ্ৰুপদেই অনেকটা অব্যাহত আছে। তানপুরা পাখোয়াজ ও বীণাযোগে গীত ধ্রুপদে আমরা সহস্ৰ কি তদধিক বৎসর পূৰ্ব্বেকার কালের হিন্দুসঙ্গীতের একটু আভাস পাই। খেয়াল, টপ্পা ও ঠুমরী, এগুলি পরবর্তী কালে মুসলমান বাদশাহদের দরবারে ধ্রুপদের অtধারের উপরেই স্বই—ভারতের নান স্থানীয় প্রাদেশিক তথা ভারতবর্হিভূত নানা বিদেশী জিনিস এগুলিতে আসিয়া গিয়াছে । শুদ্ধ ধ্ৰুপদের ঋজু, সবল ও বিরাট মহিমার তুলনা ভারতীয় সঙ্গীতে নাই,—অন্যদেশের সঙ্গীতেও এরূপ বস্তু বিরল ৷ আমরা আজকাল যে ধ্রুপদ শুনি, ভtহার মূল হিন্দুযুগে গিয়া পহুছাইলেও, মুখ্যভঃ ইহা খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চদশ হইতে সপ্তদশ শতকের বস্তু। ভারতে ভাষায় ও শিল্পে যে ধরণের বিকাশ বা ক্রম-বিবৰ্ত্তন পাই, সে ধরণের বিকাশ ভারতীয় সঙ্গীতেও অপেক্ষিত বলিয়া মনে করিলে অন্যায় করা হয় না। সংস্কৃত, তাহার বিকারে প্রাক্লজ, এবং প্রাকৃতের বিকারে হিনী বাঙ্গালা প্রভূতি আধুনিক আধা ভাষা। মৌর্ধ্যযুগের ও স্বল্পযুগের শিল্পে ভারতীয় হিন্দু-শিল্পের পত্তন ; কুষাণ ও অন্ধ যুগের শিল্পেয় মধ্য দিয়া গুপ্ত যুগের ও তৎপরবর্তী দুষ্ট চায়ি শত বৎসরের চরম উন্নতির অবস্থায় তাহার বিকাশ ; তদনন্তয় পয়বৰ্ত্তী যুগেয় জটিলতর ধারায় হিন্দু-শিল্পের আংশিক অবনয়ন। সঙ্গীত-সম্বন্ধেও এরূপ ক্রম বা ধারা আমরা অকুমান করিতে পারি ; কিন্তু এই ধারার শেষ অবস্থা, যাহা অধুনা-প্রচলিত ধ্রুপদে পাই, তদপেক্ষা প্রাচীনতর অন্ত অবস্থার কোনও নিদর্শন রক্ষিত হয় নাই। ধ্ৰুপদকে নিম্ন-মধ্য-যুগের হিন্দু শিল্পের সহিত তুলিত করা যায় ; কিন্তু ইহার পূর্ববরূপ উধ্ব-মধ্যযুগ, বা গুপ্ত বা কুষাণ যুগের শিল্পের সঙ্গে যাহার তুলনা করা যায়, তাহা আমরা পাইতেছি না । যাহা হউক, গোপাল নায়ক, আমীয় খুসরেী, হরিদাস স্বামী, বৈজু বাওর, তানসেন, সদারজ, শোরী মিয়। প্রভূতির নিকট আমরা চির-কৃতজ্ঞ, কারণ প্রাচীন ভারতীয়