পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] রাজপথ 6: রাজপথ ১২ } বস্ত্র পরিবর্তন করিবার নামে জয়ন্তী ও সুরেশ্বরের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া সুমিত্র একেবারে প্রমদাচরণের নিকট উপস্থিত হইল। প্রমদাচরণ তখন নিজ কক্ষে একট। আরাম-কেদারায় চক্ষু মুদ্রিত করিয়া শুইয়: ছিলেন। পদশকে চাহিয়া সুমিত্রাকে দেখিয়া কহিলেন—, “কি মা ? কিছু বলবার আছে ?” সুমিত্র পিতার শিরোদেশে উপস্থিত হইয়া চেয়ারে ৬র দিয়া দাড়াইয়া কহিল,—“বাব, আজ আমাকে একটা গদণ্ডের স্ব উপহার দেবে ? দাম বেশী নয় বাবা ; শাড়ী আর ব্লাউস্, দুইয়ে টাকা সাত-আটের মধ্যে হবে ।” ক্ষণ কাল চিস্ত করিয়া প্রমদাচরণ কহিলেন,—“টাকার জন্যে কিছু ত নয, কিন্তু তোমার মা খন্দরের স্থটু পছন্দ করবেন কি ?” সুমিত্রা কহিল,—“ম নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না, কিন্তু আমার ভারি ইচ্ছা হয়েছে বাবা ! থদরের শাড়ী পবা কি এমনই অপরাধ, যে, তোমাকে এ অনুরোধ করা আমার অন্তায় হচ্ছে ? তা যদি হয় তা হ’লে অবশ্য আমি অতুরোধ কবুব ন! l" প্রমদাচরণ মৃদু হাসিয়া স্নেহভরে কহিলেন, —“এ তোমার একটুও অন্যায় অনুরোধ নয় মুমিত্র। । নিজের দেশের তৈরী কাপড় পরলে যদি অন্যায় হয় তা হ’লে পরের দেশের কাপড় পরার মত পাপ আর কি হ’তে পারে ? কিন্তু তোমার মা ও-সব বিষয়ে বিচার করে’ ত কিছু দেখতে চান না—এই হয়েছে বিপদ!" বলিয়৷ প্রমদাচরণ চিন্তা করিতে লাগিল । সুমিত্র। ক্ষণকাল নীববে দাড়াইয়। থাকিয়া কহিল,— “ত হ’লে না হয় থাকৃ, বাবা । খন্দরের কাপড় এনে বাড়ীতে যদি একটা অশান্তি হয় তা হ’লে কাজ নেই ; থাক্‌ ৷” প্রমদাচরণ মনে-মনে জয়ন্তীর সহিত কাল্পনিক বিতর্ক করিতেছিলেন । থদর ব্যবহারেঙ্গ সপক্ষে প্রমদ চৰণের প্রযুক্ত সমস্ত যুক্তি ও তর্ক জয়ন্তী যতই অবহেলার সহিত অগ্রাহ করিতেছিলেন প্রমদাচরণ ততই অবুঝ জয়ন্তীর প্রতি মনে-মনে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিতেছিলেন । এমন সময়ে সুমিত্রার কথা কর্ণে প্রবেশ করিব মাত্র রুক্ষস্বরে বলিয়া উঠিলেন,—“না, না, থাকবে কেন ?—এ যে জয়ন্তীর অন্যায় কথা !" জয়ন্তীর প্রতি এই অকারণ ক্রোধ প্রকাশ হইতে দেখিয়া সুমিত্র। হাসিয়া ফেলিল , বলিল,—“মা ত এখনও কোনো কথা বলেননি বাব| !” প্রমদাচরণ ঈষৎ অপ্রতিভ হইয়া হাসি মুখে কহিলেন, “বলেন নি, কিন্তু আমি ত তাকে জানি, নিশ্চয়ই । বলবেন । যা হোক সে পরের কথা পরে হবে, কিন্তু, রাত হ’য়ে গেল, এখন কি খন্দরের সুন্টু পাওয়া যাবে ?" স্বমিত্ৰা কহিল,—“ত পাওয়া যাবে। এখন পূজার সময়ে অনেক রাত পয্যন্ত দোকান খোলা থাকে। আমাদের বাড়ীর কাছেই কলেজ-স্ট্রীটু মার্কেটে অনেক দোকানে খন্দরের ভাল ভাল কাপড় পাওয়া যায় । দশ পনের মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বে।” তখন প্রমদাচবণ র্তাহার বাজার-সরকার বিপিনকে ডাকাইয়া খন্দরের শাড়ী ও ব্রাউস্ কিনিয়া আনিতে আদেশ করিলেন। স্বমিত্ৰা কহিল,—“খুব শীঘ্ৰ বিপিন-বাবু, পনের মিনিটের মধ্যে আপনার আসা চাই। আর দেখুন, জমি সাদা হবে ; নক্সা-করা বা রং-করা হলে চলবে না। দেখে যেন জিনিসটা খদ্দর বলেই মনে হয়, বেনারসী অন্য কোনো রকম কাপড় বলে ভুল হ’লে চলবে না।” বিপিন প্রস্থান করিলে প্রমদাচরণ একবার সুমিত্রার মুখের দিকে চাহিয়, তাহার পর অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরাইয়া কহিলেন,—“সুরেশ্বর কি এসেছেন সুমিত্রা ?” খন্দরের প্রসঙ্গের অব্যবহিত পরেই সুরেশ্বরের বিষয়ে এই অনুসন্ধানে সুমিত্রীর মুখ অরিক্ত হইয়া উঠিল । খন্দরের প্রসঙ্গ হইতেই সুরেশ্বরকে প্রমদাচরণের মনে