পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্য। ] ম্যালেরিয়াবাহিনী ডোবা, সেইগুলো ভরাট না কুরলে তোমার পিলের ভরাট ছুটবে না । মুস্কিলের ব্যাপার এই যে, পিলের উপরেই আমাদের যত রাগ, ডোবার উপরে নয়। আমরা বলি, আমাদের সনাতন ডোবা, ওগুলি যদি লুপ্ত হয় তা হলে ভূতকালের পবিত্র পদচিহ্নের গভীরতাই লোপ পাবে। সেই গভীরতা বর্তমানের অবিরল অশ্রধারায় কানায় কানায় পূর্ণ হয় হোক, কিন্তু আমাদের লোকালয় চিরদিন যেন ডোবায় ডোবায় শতধা হয়ে থাকে । পাঠকেরা অধৈর্য্য হয়ে বলবেন, আর ভূমিকা নয়, এখন আমাদের বিশেষ সমস্যাটা কি বলে’ই ফেল । বলতে সঙ্কোচ হচ্চে ; কারণ, কথাটা অত্যন্ত বেশি সহজ । শুনে সবাই অগ্রদ্ধা করে’ বলবেন—ও ত সবাই জানে! এইজন্তেই রোগের পরিচয় সম্বন্ধে ডাক্তার-বাবু অনিদ্রা ন। বলে’ যদি ইন্‌ ম্‌নিয়া বলেন, তা হলে মনে হয় তাকে ষোলো টাকা ফি দেওয়া ষোলে। আন সার্থক হল । আসল কথা, আমরা এক নই, আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদের অস্ত নেই। প্রথমেই বলেছি—ভেদটাই দুঃখ, ঐটেই পাপ । সে ভেদ বিদেশীর সঙ্গেই হোক আর স্বদেশীর সঙ্গেই হোক। সমাজটাকে একটা ভেদবিহীন বৃহৎ দেহের মত ব্যবহার করতে পারি কখন ? যখন তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে বোধশক্তি ও কৰ্ম্মশক্তির প্রাণগত যোগ থাকে ; যখন তার পা কাজ করলে হাত তার ফল পায়, হাত কাজ করলে পা তার ফল পায়। কল্পনা করা যাক, স্থষ্টিকৰ্ত্তার স্বষ্টিছাড়া ভুলে দেহের আকৃতিধারী এমন একটা অপদাৰ্থ তৈরি হয়েছে যার প্রত্যেক বিভাগের চারদিকে নিষেধের বেড়া ; যার ডান-চোখে বা-চোখে, ডান-হাতে বঁ-হাতে ভাস্করভাত্রবৌয়ের সম্পর্ক, যার পায়ের শিরার রক্ত বুকের কাছে উঠতে গেলেই দাব ডানি খেয়ে ফিরে যায়, যার তর্জনীটা কড়ে-আঙুলের সঙ্গে এক পংক্তিতে কাজ করতে গেলে- প্রায়শ্চিত্তের দায়িক হয়, যার পায়ে তেল মালিশের দরকার হলে’ ডান-হাত হরতাল করে’ বসে। এই অত্যন্ত নড়বড়ে পদার্থটা অন্ত পাড়ার দেহটার মত হযোগ স্থবিধ ভোগ করতে পায় না। সে দেখে অন্য সমস্ত। 娜 - ১৪৯ দেহটা জুতো জামা পরে’ লাঠি ছাতা নিয়ে পথে অপথে বুক ফুলিয়ে বেড়ায়। তখন সে ভাবে যে, ঐ দেহটার মত জুতো জামা লাঠি ছাত জুটুলেই আমার সব দুঃখ ঘুচ বে। কিন্তু স্বষ্টিকৰ্ত্তার ভুলের পরে নিজের ভুল যোগ করে দিয়ে সংশোধন চলে না । জুতো পেলুে ও তার জুতো খসে পড়বে, ছাতি পেলেও তার ছাতি হাওয়ায় দেবে উড়িয়ে, আর মনের মত লাঠি যদি সে কোনোমতে জোগাড় করতে পারে অন্য পাড়ার দেহটি সে লাঠি ছিনিয়ে নিয়ে তার নড়বড়ে জীবলীলার প্রহসনটাকে হয়ত ট্র্যাজেডিতে সমাপ্ত করে দিতে পারে । এখানে জুতো জামা ছাতি লাঠির অভাবটাই সমস্যা নয়, প্রাণগত ঐক্যের অভাবটাই সমস্যা । কিন্তু বিধা তার উক্ত দেহরূপী বিদ্রুপটি হয়ত বলে থাকে যে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অনৈক্যের কথাটা এখন চাপ থাক, আপাতত সবার আগে যদি কোনো গতিকে একটা জামা জোগাড় করে’ নিয়ে সৰ্ব্বাঙ্গ ঢাকৃতে পারি তা হলে সেই জামাটার ঐক্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ঐক্য আপনা-আপনি ঘটে উঠবে। আপনিই ঘটবে এ কথা বলা হচ্চে নিজেকে ফাকি দেওয়া। এই ফাকি সৰ্ব্বনেশে ; কেননা, নিজকৃত ফাকিকে মানুষ ভালবাসে, তাকে যাচাই করে দেখতেই প্রবৃত্তি হয় না। মনে আছে, আমার বয়স যখন অল্প ছিল তখন দেশে দুই বিরোধীপক্ষের মধ্যে একটা তর্ক প্রায় শোনা যেত,—আমরা কি নেশন, না, নেশন নই। কথাটা সম্পূর্ণ বুঝ তুম তা বলতে পারিনে, কিন্তু আমরা নেশন নই এ-কথ! যে-মানুষ বলত রাজা হলে তা’কে জেলে দিতুম, সমাজপতি হলে তার ধোবা নাপিত বন্ধ করতুম। তার প্রতি অহিংস্রভাব রক্ষা করা আমার পক্ষে কঠিন হ’ত। তখন এ সম্বন্ধে একটা বাধা তর্ক এই ছিল যে, সুইজরল্যাণ্ডে তিন ভিন্ন জাত পাশাপাশি রয়েচে তবুও ত তারা এক নেশন, তবে আর কি ! শুনৈ ভাবৃতুম,—ষাকৃ, ভয় নেই। কিন্তু মুখে ভয় নেই বললেও আসলে ভয় ঘোচে কই । ফঁাসির আসামীকে তার মোক্তার যখন বলেছিল—“ভয় কি, দুর্গা বলে ঝুলে পড়" তখন সে সাত্বনা পায়নি ; কেননা দুর্গা বলতে সে রাজি কিন্তু ঐ ঝুলে পড়াটাতেই আপত্তি। স্বই