পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬e জেনেচে এবং সে কাবণটা বুদ্ধিব দ্বার নিবারণ করেচে, সে-দেশে বসন্ত মারীরূপ ত্যাগ করে দৌড় মেরেচে। আর যে-দেশের মাতু্য মা-শীতলাকে বসন্তের কারণ বলে’ চোখ বুজে ঠিক করে’ বসে থাকে, সে দেশে মা-শীতলাও থেকে যান, বসন্তও যাবার নাম করে না । সেখানে মা-শীতলা হচ্চেন মানসিক পরবশতার একটি প্রতীক, বুদ্ধির স্বরাজচুতির লক্ষণ । আমার কথার একটা মস্ত জবাব আছে । সে হচ্চে এই যে, দেশের একদল লোক ত বিদ্যশিক্ষা করেচে। তারা ত পৰীক্ষণ পাস করবার বেলায় জাগতিক নিয়মের নিত্যতা অমোঘতা সম্বন্ধে ব্যাকরণ বিশুদ্ধ ইংরেজি ভাষায় সাক্ষ্য দিয়ে ডিগ্রি নিয়ে আসে । কিন্তু আমাদের দেশে এই ডিগ্রিধারীদেরই ব্যবহারে কি আত্মবুদ্ধির পরে, বিশ্ববিধির পরে, বিশ্বাস সপ্রমাণ হচ্চে ? তারাও কি বুদ্ধিব অন্ধতায় সংসারে সকলরকমেরই দৈন্য বিস্তার কবে না ? স্বীকার করতেই হয়, তাদের অনেকের মধ্যেই বুদ্ধিমুক্তির জোর বড় বেশি দেখতে পাইনে ; তারাও উচ্ছ,স্থলভাবে যা’-তা মেনে নিতে প্রস্তুত ; অন্ধভক্তিতে অদ্ভুত পথে অকস্মাৎ চালিত হতে তারা উন্মুখ হয়ে আছে ; আধিভৌতিক ব্যাপারের আদিদৈবিক ব্যাখ্যা করতে তাদের কিছুমাত্র সঙ্কোচ নেই ; তারাও নিজের বুদ্ধিবিচারের দায়িত্ব পরের হাতে সমর্পণ করতে লজ। বোধ করে না, আরাম বোধ করে । তার একটা প্রধান কারণ এই যে, মৃঢ়তার বিপুল ভারাকর্ষণ জিনিষটা ভয়ঙ্কর প্রবল। নিজের সতর্ক বুদ্ধিকে সৰ্ব্বদা জাগ্রত রাখতে সচেষ্ট শক্তির প্রয়োজন হয়। যে-সমাজ দৈব গুরু ও অপ্রাকৃত প্রভাবের পরে আস্থাবান নয়, যে সমাজ বুদ্ধিকে বিশ্বাস করতে শিখেচে, সে সমাজে পরস্পরের উৎসাহে ও সহায়তায় মানুষের মনের শক্তি সহজেই নিরলস থাকে।. আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রণালীর দোষে একে ত শিক্ষা অগভীর হয়, তার উপরে সেই শিক্ষার ব্যাপ্তি নিরতিশয় সঙ্কীর্ণ। এইজন্যে সৰ্ব্বজনের সম্মিলিত মনের শক্তি আমাদের মনকে অগ্রসরতার দিকে, আত্মশক্তির দিকে উন্মুখ করে’ রাখতে পারে না । সে সহজেই অলস হয়ে পড়ে এবং প্রচলিত প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, `මණ්• • { ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড বিশ্বাস ও চিরাগত প্রথার হাতে গা ঢেলে দিয়ে ছুটি পায়। তার পরে অশিক্ষিতদের সঙ্গে আমাদের প্রভেদ ঘটে এই যে, তারা আপন অন্ধবিশ্বাসে বিনাদ্বিধায় সহজ ঘুম ঘুমোয়, আমরা নিজেকে ভুলিয়ে আফিংয়ের ঘুম ঘুমোই ; আমরা কুতৰ্ক করে লজ নিবারণ করতে চেষ্টা করি, জড়ত বা ভীরুত্ববশত যে কাজ করি তার একটা স্বনিপুণ বা অনিপুণ ব্যাখ্য। বানিয়ে দিয়ে সেটাকে গর্বের বিষয় করে’ দাড় করাতে চাই । কিন্তু ওকালতির জোরে দুর্গতিকে চাপা দেওয়া যায় না । দেশকে মুক্তি দিতে গেলে দেশকে শিক্ষা দিতে হবে এ কথাটা হঠাৎ এত অতিরিক্ত মস্ত বলে' ঠেকে যে এ’কে আমাদের সমস্যার সমাধান বলে’ মেনে নিতে মন রাজি হয় না। এইখানে গীতার উপদেশ আমাদের মনে করিয়ে দিতে হয় যে, কাজেরই অধিকার আমাদের, ফলের অধিকার নয়। আশুফলের প্রতি অতিশয় লোভ করে’ই আমরা জাদুকরের শরণাপন্ন হই; ফলের বদলে ফলের মরীচিকা দেখে নুত্য করতে থাকি। তাতে সময়ও নষ্ট হয়, বুদ্ধিও নষ্ট হয়, ফলও নষ্ট হয় । তাতে বৰ্ত্তমানকে ভোলাতে গিয়ে ভবিষ্যৎকে মাটি করি । দেশের মুক্তি কাজটা খুব বড় অথচ তার উপায়টা খুব ছোট হবে একথা প্রত্যাশা করার ভিতরেই একটা গলদ আছে । এই প্রত্যাশার মধ্যেই রয়ে গেছে ফকির পরে বিশ্বাস ; বাস্তবের পরে নয়, নিজের শক্তির পরে নয়। সৌভাগ্যক্রমে অনেককাল পরে একটা সদৃষ্টান্ত আমাদের হাতের কাছে এসেচে। সেটা সম্বন্ধে আলোচনা করলে আমার কথাটা পরিষ্কার হবে —বাংলা দেশ ম্যালেরিয়ায় মরচে। সে মার কেবল দেহের মার নয়, এই রোগে সমস্ত দেশটাকে মন-মর করে দিয়েচে । আমাদের মানসিক অবসাদ, চারিত্রিক দৈন্য, অধ্যবসায়ের অভাব এই রোগজীর্ণতার ফল । ম্যালেরিয়া থেকে যদি আমরা উদ্ধার পাই তা হলে কেবল যে আমরা সংখ্যা হিসাবে বাড়ব তা নয়, শক্তি হিসাবে বেড়ে উঠব। তখন, কেবল যে দুইজনের কাজ একজনে করতে পারব তাও নয়, এমনপ্রকৃতির কাজ এমন-ধরণে করতে পারব যা এখন পারিনে। অর্থাৎ, কেবল যে কাজের পরিমাণ বাড়বে