পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ) । রাজপথ Yost রাজপথ [ 58 j স্থমিত্রার জন্মদিনোৎসবের ঘটনার পর মাস দুই অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে । ইহার মধ্যে সুরেশ্বর বিমান ও সুমিত্রা কয়েকবার মিলিত হইয়াছে এবং তদবসরে তিন জনের ঘাতপ্রতিঘাত ও সংঘর্ষের ফলে পরস্পরের সম্পর্কে প্রত্যেকের মানসিক অবস্থা ক্রমশঃ জটিলতর হইয়া উঠিয়াছে। একত্র হইলেই একটা কোনও প্রসঙ্গ উপলক্ষ্য করিয়া তিন জনের মধ্যে তর্ক আরম্ভ হয়, এবং মনের গভীরতলনিহিত বিরোধ ভাষার মধ্যে আলোড়িত হইয়া ভাসিয়া উঠে এবং প্রকাশ পায় । এই বিরোধটা প্রকাশ পাইত বিমান এবং স্বরেশ্বরের মধ্যে সৰ্ব্বদা, সুরেশ্বর ও সুমিত্রার মধ্যে সময় সময়, এবং বিমান ও স্থমিত্রার মধ্যে কদাচিৎ । বিমানবিহারী সৰ্ব্ববিষয়ে এবং সৰ্ব্বতোভাবে সুমিত্রার সহিত ঐক্য রাখিয়া চলিত । সুরেশ্বর এবং সুমিত্রার মধ্যে প্রায়ই তর্ক এবং দ্বন্দ্ব ঘটিত বলিয়া সে মনে করিত’ সুমিত্রার পক্ষ অবলম্বন করিয়া সে তাহার চিত্ত অধিকার করিয়া রাখিবে। কিন্তু মাহুষের মন যে অতটা সহজ নহে তাহ সে জানিত না। বিরুদ্ধাচরণে সৌহৃষ্ঠ না বাড়িলেও আকর্ষণ বাড়ে ; ঐক্যের চেয়ে বিরোধ অধিকতর মৰ্ম্মস্পর্শী । - স্রোতস্বতী যখন সমতল ভূমির উপর দিয়া বহিয়া চলে তখন প্রশাস্ত থাকে, কিন্তু যখন বন্ধুর ভূমির উপর দিয়া যায় তখন দুৰ্দ্দাস্ত হইয়া উঠে । সেই প্রাক্কতিক রিধির অক্ষুব্ধপ নিয়মে বিমানের সহিত কথাবাৰ্ত্তায় "স্বমিত্রাকে বৃেশ শাস্ত মনে হইত, কিন্তু স্বরেশ্বরের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তার সময়ে সে অধীর হইয়া উঠিত। স্বরেশ্বর কিন্তু সে সময়ে তাহার ধৈর্ঘ্য ও সহিষ্ণুভ হইতে একটুও ভিত্তিচু্যত হইত না। জলে আর পাথরে সংঘর্ষ বাধিলে জল অধীর উচ্ছ্বসিত হুইয়া উঠে, কিন্তু সেই সফেন উচ্ছ্বাসের মধ্যে পাথর স্তন্ধ হইয়াই থাকে। কিন্তু এই বিরোধ এবং সংঘর্ষের ক্তিত্তর-দিয়াই জল্পে অল্পে অলক্ষিতে স্বরেশ্বরের প্রতি সুমিত্রীর একটা গভীর আকর্ষণ বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । অধিকাংশ দিনই বিমানবিহারী এক আসিয়া তাহার সহিত সন্ধ্যা অতিবাহিত করিয়া যাইত, কিন্তু সে-সকল দিনে বিমানবিহারীর সহিত একটানা একস্থরা নিবিরোধ নিৰ্ব্বিবাদ কথাবাৰ্ত্তায় অল্পক্ষণের মধ্যেই সুমিত্রার বিরক্তি ধরিয়া যাইত। না থাকিত তাহার মধ্যে উত্তেজনা, না থাকিত তাহার মধ্যে উদ্দীপনা, না থাকিত বিতর্ক, না থাকিত বিচার। কেবল মিল, কেবল ঐক্য। দুই ঘণ্টার প্রসঙ্গ দুই মিনিটে শেষ হইত। স্বমিত্র সময়ে সময়ে তর্ক উঠাইবার চেষ্টা করিত, কিন্তু য়ে তর্ককে নিরোধ করিতে বিমানবিহারীর কিছুমাত্র দ্বিধা বা বিলম্ব হইত না ; শুধু অপ্রতিবাদের দ্বারাই মহে, প্রয়োজন হইলে স্বীয় মত বর্জন করিয়াও বিমানবিহারী স্বমিত্রার সহিত একমত হইত। কিন্তু স্থমিত্রার উচ্ছল প্রকৃতি তাহাতে তৃপ্তি পাইত না । সুরেশ্বরের সবল এবং সপ্রতিবাদ বিরোধের তুলনায় বিমানবিহারীর নিৰ্ব্বিবাদ ঐক্য স্থমিত্রার নিতাস্ত ফিক মনে হইত। কোন এক মাসিকপত্রে নারীনিগ্রহ-শীর্ষক স্বমিত্রার একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল। প্রবন্ধের বক্তব্য, পুরুষ বহুকাল হইতে কৌশলে নারী-জাতিকে তাহাদের সাধারণ ও স্বাভাবিক অধিকার হইতে বঞ্চিত করিয়া আসিয়াছে ; তাহার ফলে ক্রমশঃ নারীজাতি দুৰ্ব্বল ও আশ্রয়ার্থ হইয়া উঠিয়াছে ; নচেৎ নারীজাতি কখনই, ইত্যাদি, ইত্যাদি। যেদিন প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় সেদিন সন্ধ্যাকালে স্বরেশ্বর ও বিমান উভয়েই স্থমিত্রাদের বাড়ীতে বেড়াইতে আসিয়াছিল। বিমান সে প্রবন্ধের উল্লেখ করিয়া উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করিল ; বলিল প্রবন্ধটি যুক্তি- ও বিচারগৌরবে অপূৰ্ব্ব হইয়াছে। ইহার পূৰ্ব্বে আর কেহ এমন অখণ্ডনীয়রূপে নারী-জাতির সপক্ষে ওকালতী করিতে পারে নাই। -