পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sማb” স্বশীলা আপন মনে খানিকক্ষণ বকিয়া বউটর দিকে চাহিয়া বলিল-তার পর, তোর রান্ধাবান্না ? বউটি বাটটা আঁচল দিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছিল, বাহির করিয়৷ কুষ্ঠিতভাবে বলিল—সেদিনকার সেই তেল নিয়ে গিয়েছিলাম দিদি, তা আমাদের এখনও আন হয়নি। আজ রাধ বার নেই—একসঙ্গে দুদিনের দিয়ে যাব—সেইজষ্ঠে– সুশীলা বলিল-আচ্ছা, নিয়ে আয় দেখি বাটি। দেখি কি আছে, আমাদেরও বুঝি তেল আনা হয়নি । পাত্রে যতটুকু তেল ছিল স্বশীল সবটুকু এই কুষ্ঠিতা দরিদ্র গৃহলক্ষ্মীটিকে টালিয়া দিল । বউটি চলিয়৷ যাইবার সময় মিনতিপূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল—লক্ষ্মী দিদি, দা ও রান্না চড়িয়ে— স্বশীলা বলিল—তুই পালা দেখি—আমি ওদেব মজা না দেখিয়ে আজ আর কিছুতে ছ’ড় চিনে— , বেলা ১২টার সময় মোক্ষদ ঠাকুরুণ আসিয়া দেখিয়া শুনিয়া হৈ চৈ বাধাইয়া দিলেন-প্রকৃতই ইহাতে রাগ হইবারই কথা। একটু পরে রামতনু আসিলেন, তিনি ব্যাপার দেখিয়া দালানে গিয়া আপন - মনে তামাক টানিতে স্বরু করিলেন। ঝগড়া ক্রমে খুব চাগাইয়া উঠিল, মোক্ষদা উচ্চৈঃস্বরে মুশীলার কুলজী গাহিতে লাগিলেন—সুশীলাও যে খুব শাস্তশিষ্ট, এ অপবাদ তাহাকে শক্রতেও দিতে পারিত না, কাজেই ব্যাপার যখন খুব বাধিয়া উঠিয়াছে এমন সময় কোথা হইতে কিশোরী আসিয়া হাজির হইল— যদিও আজ তাহার ফিরিবার কথা ছিল না, তবুও কাজ মিটিয়া যাওয়াতে সে আর সেখানে অপেক্ষা করে নাই। মোক্ষদা ছেলেকে পাইয়া হঁাকডাক অা ও বাড়াইয়া দিলেন। কিশোরী এত বেলায় বাড়ী আসিয়া এ অশাস্তির মধ্যে পড়িয়া অত্যন্ত চটিয়া গেল—তাহার সমস্ত রাগ গিয়া পড়িল স্ত্রীর উপর। হাতের গোড়ায় একখানা শুক্না চেল-কাঠ পড়িয়া ছিল, সেইটা লইয়াই লাফাইয়। সে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠিল—মুশীলা তখনও বসিয়া বাটুনা বাটিতেছিল—স্বামীকে শুকুনা কাঠ হাতে লইয়া বীরদৰ্পে রান্নাঘরে লাফাইয়া উঠিতে দেখিয়া ভয়ে তাহার মুখ শুকাইয়া প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩e • ২৩শ ভাগ; ২য় খণ্ড গেল-আত্মরক্ষার অন্য কোন উপায় না দেখিয়া হাত দুটাে তুলিয়। নিজের দেহটা আড়াল করিবার চেষ্ট। করিল—কিশোরী প্রথমতঃ স্ত্রীর. খোপা ধরিয়| এক হেঁচ কা টান দিয়া তাহাকে মাটিতে ফেলিয়া দিল, তাহার পর তাহার পিঠে কয়েক ঘা চেলা-কাঠের বাড়ি মারিয়া তাহার গলা ধরিয়া প্রথমে এক ধাক্কা মারিল রান্নাঘরের দাওয়ায় এবং তথা হইতে এক ধাক্কা মারিল একেবারে উঠানে। ধাক্কার বেগ সাম্‌লাইতে না পারিয়া । স্বশীল মুখ খুবড়ি উঠানে পড়িয়া গেল—মার আরওঁ । চলিত, কিন্তু রামতনু তামাক খাইতে খাইতে ছেলের কাণ্ড দেখিয়া হঁ। ই করিয়া আসিয়া পড়িলেন । পাশের বাড়ীর বউটি তখন শ্বশুর ও স্বামীকে খাওয়াইয়া সবে নিজে খাইতে বসিতেছিল, হঠাৎ এবাড়ীর মধ্যে মারের শব্দ শুনিয়া সে খাওয়া ফেলিয়া স্বশীলাদের খিড়কীতে ছুটিয়া আসিয়া উকি মারিয়া দেখিল—স্বশীল উঠানে দাড়াইয়া আছে; সৰ্ব্বাঙ্গে ধূলা, বাটনার পাত্রের উপর পড়িয়া গিয়াছিল, কাপড়ে চোপড়ে হলুদের ছোপ ; মাথার খোপা এক ধারে খুলিয়া কতক চুল মুখের উপর, কতক পিঠের উপর পড়িয়াছে ; গাঙ্গুলীবাড়ী হইতে দুটো ছেলে ব্যাপার দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিয়াছে, আরও দু একজন পাড়ার মেয়ে সামনের দরজায় গিয়া উকি মারিতেছে—ওদিকে পাচীলের উপর দিয়৷ মুখ বাড়াইয়া তাহার নিজের শ্বশুর রামলোচন মজ দেখিতেছেন । চারিদিকের কৌতুহলদৃষ্টির মাঝখানে, সৰ্ব্বাঙ্গে হলুদের ছোপ ও ধূলিমাখা, বিস্রস্তকুন্তলা, অপমানিত দিদিকে অসহায়ভাবে উঠানে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয় তাহার বুকের মধ্যে কিরকম করিয়া উঠিল-কিন্তু সে একে ছেলে চুষ ভাঙ্গতে অত্যন্ত লজ্জাশীল, শ্বশুর ভাস্কর এবং এক-উঠান লোকের মধ্যে বাড়ীর ভিতর ঢুকিতে না পারিয়া প্রথমটা সে খিড়কীর বাহিরে আকুলিবিকুলি করিতে লাগিল, কিন্তু গাজুলী-বাড়ীর প্রৌঢ় গাঙ্গুলী মহাশয়ও যখন হকা-হাতে,—কি হে রামতনু, বলি ব্যাপারখানা কি শুনি, বলিয়া বাড়ীর মধ্যের উঠানে আসিয়া হাজির হইলেন, তখন সে আর থাকিতে