পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b-● ميخ* ও হাত দিয়া ঠেকাইতে গিয়া হাতের কাচের চুড়ি ভাদিয়া হাতও ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে। তাহার সেই স্বামী, যে স্বামী ৫৬ বৎসর পূৰ্ব্বে এমন সব রাতে তাহাকে সমূহ রাত ঘুমাইতে দিত না, সে পান খাইতে চাহিত না বলিয়া কত ভুলাইয়া পান মুখে গুজিয়া দিত-সেই স্বামী এরূপ করিল ? পান খাওয়ানোর কথাটিই স্বশীলার বার-বার মনে আসিতে লাগিল। রাত্রের জ্যোৎস্ব ক্রমে আরো ফুটিল । তখন চৈত্রমাসের মাঝামাঝি, দিনে তখন নতুন-কচি-পা তাওঠা গাছের মাথার উপর উদাস অলস বসন্ত-মধ্যাহ্ন ধোয়া ধোয়া রৌদ্রের উত্তরীয় উড়াইয়া বেড়ায়, দীর্ঘ দীর্ঘ দিনগুলো প্রস্ফুট-গ্ৰস্তন-সুরভির মধ্য দিয়া চলিয়া চলিং নদীর ধারের সিমুলতলায় সন্ধ্যার ছায়ার কোলে গিয়া ঢলিয়া পড়ে, পাড়াগায়ের আমবনে বঁাশবনে জ্যোৎস্ব-ঝরা বাতাসে সারারাত কত কি পার্থীর আনন্দ-কাকলী, বসন্তলক্ষ্মীর প্রথম প্রহরের আরতির শেষে বনের গাছপাল৷ তখন আবার নূতন করিয়া টাটুকা ফুলের ডালি সাজাইতেছে । - শুইয়। শুইয়া স্বশীল ভাবিল, জগতে কেউ তাহাকে ভালবাসে না— কেবল ভালবাসে তাহার মৌরীফুল । মৌরীফুল পত্র লিখিয়াছে, তাহার কথা মনে করিয়া সে রোজ রাত্রে কাদে, তাহাকে না দেখিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া তাহার কষ্ট হইতেছে । সত্য সত্য যদি কেউ তাহাকে ভালবাসে তো সে ওই মৌরীফুল—আর ভালবাসে ওই ছোট বউটী । আহা, ছোট বউএর বড় কষ্ট ! ভগবান দিন দিলে সে ছোট বউএর দুঃখ ঘুচাইবে । কিন্তু স্বামী যে তাহাকে বিদায় করিয়া দিতেছে ? ও কিছু না, অভাবে পড়িয়া উহার মাথা খারাপ হইয়া যাইতেছে, নইলে সেও কি এমন ছিল ? মৌরীফুলের বর তো কত জায়গায় বেড়ায়, মৌরীফুলকে একখানা পত্র লিখিয়৷ দেখিলে হয়, যদি উহার কোন চাকরী করিয়া দিতে পারে। চাকরী হইলে সে আর তার স্বামী একটা আলাদা বাসায় থাকিবে, আর কেহই সেখানে থাকিবে না,...মাঠের ধারের ছোট ঘরখানি সে মনের মত করিয়া সাজাইয় স্থাখিবে, উঠানে কুমড়ার মাচা বাধিবে, বাজার-খরচ প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, లిరిe 影 হুসিয়ার, [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড - কমিয়া যাইবে । লোকে বলে সে গোছাল নয়, একবার বাসায় যাইলে সে দেখাইয়া দিবে যে গোছাল কিনা... আচ্ছা, ওই বাড়ীখানায় যদি আগুন লাগে ! " না— আগুন দিবে কে ? ছোট বউ ! উন্থ, দিতে তাহার শাশুড়ী ঠাকুরুণই দিবে, যেরকম লোক ! জানালার বাহিরে জ্যোৎস্নায় ওগুলা কি ভাসিতেছে ? সেই যে তাহার স্বামী গল্প করিত জ্যোৎস্না-রাত্রে পরীরা সব খেলা করিয়া বেড়ায়, তাহারা নয় তো ? তাহার বিবাহের রাত্রে কেমন বঁাশী বাজিয়াছিল, কেমন সুন্দর বঁাশী, ও-রকম বঁ।শী নদীর ধারে কত পড়িয়া থাকে...আচ্ছা পিওনে মৌরীফুলের একখানা চিঠি দিয়া গেল না ? লাল চৌকা খাম, খুব বড়, সোনার জল দেওয়া, আতর না কি মাখান • পরদিন সকাল বেল পুত্রবধুর উঠিবার দেরী হইতে লাগিল দেখিয়া মোক্ষদ ঠাকুরুণ ঘরের মধ্যে উকি মারিয়া দেখিলেন পুত্রবধূ জরের ঘোরে অঘোর অচৈতন্য অবস্থায় ছেড়। মাদুরের উপর পড়িয়া আছে, চোখ দুটো জবাফুলের মত লাল । সেদিন সমস্ত রাত একভাবেই কাটিয়া গেল, তাহার দিকে বিশেষ কেহ নজর করিল না, তার পরদিন বেগতিক বুঝিরা রামতন্তু ডাক্তার আনিলেন । দুপুরের পর হইতে সে জরের ঘোরে ভুল বকিতে লাগিল—সত্যি মৌরীফুল তা নয়, ওরা যা বলছে—আমি অন্য ভেবে— সন্ধ্যার কিছুপূৰ্ব্বে সে মারা গেল । তাহার মৃত্যুতে গাঙ্গুলী-পাড়ার হাড় জুড়াইয়া গেল, পাড়ার কাকচিলগুলাও একটু স্বস্থির হইল। কিছুদিন পরেই কিশোরীর দ্বিতীয় পক্ষের বউ মেঘলতা ঘরে আসিল । দেখিলে চোখ জুড়ায় এমন মুন্দর মেয়ে, কৰ্ম্মপটু, গোছাল । দ্বিতীয়বার বিবাহের অল্পদিন পরেই যখন কিশোরী পালেদের ষ্টেটে ভাল চাকরীট পাইল, তখন নতুন বেীএর লক্ষ্মীভাগ্য দেখিয়া সকলেই খুব খুসি হইল। - সংসারের অলক্ষ্মীস্বরূপ আগের পক্ষের বউএর নাম সে সংসারে আর কোনদিন কেহ করে নাই । ত্র বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়