পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] নিৰ্ব্বাসিতের আত্মকথা ›ኳሙፃ • . নির্বাসিতের আত্মকথা আজ জীবনের পঞ্চম অঙ্ক অভিনীত হইবার পূৰ্ব্বেই যখন পাশে বসিয়াছিলাম তাহার নাম বীরেন। ক্টোকৃড়ান যবনিকা ফেলিতে হইবে তখন এই ক্ষুদ্র জীবনের কাহিনীটা আমি লিখিয়া যাইব । এ কাহিনী লিখিবার কোন প্রয়োজন আছে কি না জানি না, কিন্তু এই সুদূরে সব শেষ হইবার পূৰ্ব্বে আমার হৃদয়ট অভিমানে ফুলিয়া উঠিতেছে, ঠোঁট দুটা কঁপিযা কঁাপিয়া উঠিতেছে ; কাহার উপর এ অভিমান জানি না, কিন্তু যদি এ জীবনের পরেও আমার কিছু বাচিয়া থাকে এবং এ পৃথিবীর কথা শুনিতে পায় তাহা হইলে আমি ঠিক জানি যে যদি এ কাহিনী পড়িয় কেহ সহাতৃভূতিব স্ববে “আহ|” বলে, তাহা হইলে আমার সেই অমর অবশেষ নিশ্চয়ই ফুকারিয়া কাদিয়া উঠিবে। আমার বয়স এই ২৬ বৎসর। চার বংসর আগে আমার জীবন মুখের অমৃতে কানায় কানায় ভরিয়া উঠিয়াছিল, ভাবিয়ছিলাম এ অমৃতের এক তিল কোন দিনই বুঝি কম পড়িবে না ; যেদিন কেশের উপর শুভ্র তার পরোয়ানা জারি করিয়৷ মৃত্যুর দূত আসিবে, সেদিনও বুঝি এই অমৃত এমনই কানায় কানীয় উপ চাইয় পড়িবে । আজ সেই মৃত্যুর দূত ত কাচ চুলের মুঠি ধরিয়া তাহাব পরোয়ান জারি করিতেছে, কিন্তু জীবনে সে অমৃত কই ? কণ্ঠ যে শুষ্ক, মন যে শুকুনো পাতর চেযেও নীরস । যাক সে কথা - আজ কেন আমি এই আন্দামানে মৃত্যুর কালে গহবরের মুখে আসিয়া পা বাড়াইয়াছি তাঁহাই বলি—সে এক রমণীর জন্য। অদ্ভুত এক নারী ! তেমন মেয়ে বাঙালীর মধ্যে কেন কোন জাতির মধ্যে আছে কি না জানি না । সে আজ কোথায় বলিতে পারি না, কিন্তু তাহার জলন্ত রূপ আজও আমার চোখের সম্মুখে ঠিক সেইভাবেই জলিতেছে—বোধ হয় মৃত্যুর পরেও এই ভাবেই জ্বলিবে । 箏 ● 豪 礙 মফঃস্বলের এক কলেজ হইতে আই-এসসি পাস করিয়া প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম দিনই যে ছেলেটির চুল অযত্নবিন্যস্ত, স্বন্দর পুষ্ট শরীরটিতে যত্বের অভাব স্বম্পষ্ট, নাকটি টিকোণে বাক, চোখ দুটি তত টানা নয় কিন্তু তীক্ষু । অধ্যাপক কথায় কর্ণায় সেদিন নেপোলিয়নের কথা আনিয়া ফেলিলেন। অধ্যাপকটি নেপোলিয়নের একটি গোড় ভক্ত । তিনি নেপোলিয়নেব বীরত্ব, নেপোলিয়নের নিৰ্ভীকতা সম্বন্ধে বেশ প্রাণেব সহিত বলিতেছিলেন, আর বীরেন শুনিতেছিল সমস্ত মনঃপ্রাণ দিয়া—তাহার শৰীবট। এক একবার আবেগে শিহরিয়া শিহরিয়া উঠিতেছিল । তাহার সহিত বন্ধুত্ব সেই দিনই হইয়া গেল ; সেদিন আমার স্বদিন কি দুদিন আজও আমি ঠিক কবিয়া উঠিতে পারি নাই । সে ছিল যেন একটা স্থিব শক্তির অফুরন্ত ভাণ্ডার । সে আমাকে দেখাইয়াছিল একটা বিদ্যুতের চমক্‌ যাহা একবার তীব্র আলো দিয়াই চির-অন্ধকারে ডুবাইয়া দেয় । একটা বংসবের মধ্যে একমাস বোধ হয় তাহার সঙ্গছাড়া থাকি নাই, শুধু সে আসিলেই আমার সমস্ত বিশ্ব পূর্ণ হইয়া উঠিত—ভাবিয়ছিলাম আমি তাহাকে সম্পূর্ণ বুঝিয়াছি, সম্পূর্ণ পাইয়াছি। কি ভুল ! তাহাকে সম্পূর্ণ পাইয়াছিলাম সত্য, কিন্তু একটুও বুঝি নাই । আজ যখন তাহাকে বুঝিতে পারিয়াছি তখন তাহা হইতে কত দূরে ! তাহাব বিশেষত্ব ছিল তাহার অল্প কথা । এত কম কথা কহিতে আমি অfর কাহাকে ও শুনি নাই । আমরা দুজনে প্রায়ই বেড়াইতে বাহির হইতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্ট। পাশাপাশি চলিয়াছি, তাহার মুখে একটিও কথা নাই, আমিও যেন তাহার মৌনিতায় মুগ্ধ ও পূর্ণ হইয়া থাকিতাম, কথার অভাব বোধ করিতাম ন । সেদিন শনিবার, কলেজ সকাল-সকাল বন্ধ হইয়াছিল । বীরেনকে সেদিন ক্লাসে দেখি নাই । ছুটির পর মেসের বাসায় নিজের ধরটিতে বসিয়া আছি, এমন সময় বীরেন