পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ) থোড়ের নাম ‘ভারালি', মূলে সেই শব্দ। এমন কি এই থোড় ও ধানগাছের থোড় সেই গোহির হওয়া আশ্চর্য · , নয়। কলাগাছের "থোড়' এখানে সাজ’, ওড়িয়াতে ‘মঞ্জ’ ; এখানে মারগ, ওড়িয়াতে ‘মারগ্র', বাঙ্গালায় মাঙ্গ ; এখানে "টা, ওড়িয়াতে ‘অণ্টা", অন্যত্র ‘কোমর’ বলে। স্ত্রীলোকের শাড়ীকে এখানে বলে ‘লইতা’, স° নেত্র বা নেত বলিয়। মনে হয়। কে এইসকল শব্দ লিপিবদ্ধ করিয়া চিরলোপ হইতে রক্ষা করিবে ? কে বাঙ্গালা কোষ সঙ্কলনে সাহায্য করিবে ! যিনি প্রাচীন সাহিত্য চর্চা করিতে চান, তাহারও অনেক কাজ আছে । এই বঁকুড়া হইতে রামাই পণ্ডিতের শূন্তপুরাণ এবং বিষ্ণুপুর হইতে চণ্ডীদাসী শ্ৰীকৃষ্ণকীতৰ্ন আবিষ্কৃত হইয়াছে ! শূন্তপুরাণে ঠিক বাঁকুড়ার ভাষা নাই। এইর,প শ্ৰীকৃষ্ণকীতনে চণ্ডীদাসের ভণিতা থাকিলেও অনন্ত নাম থাকাতে তাহার শুদ্ধতায় সন্দেহ জন্মিয়াছে। কিন্তু, দুই-ই অমূল্য। এইর,প অমূল্য পুর্থ আরও কত আছে, কে খুজিয়া দেখিয়াছে ? শুনিতেছি, ইন্দাসের অন্তর্গত স্বর্থসায়রের সীতারাম দাসের ধম পুরাণ এখনও হস্তান্তরিত হয় নাই। সীতারাম - দাস তিনশত বৎসর পূর্বে ছিলেন। ঘনরামের কি মাণিক গাঙ্গুলীর ধমৰ্মঙ্গল অপেক্ষাকৃত আধুনিক। সীতারামের পুর্থীতে অপূর্বকথন নিশ্চয়ই আছে। কে তাহা উদ্ধার করিবে ? - বাঁকুড়। হুগলী মেদিনীপুর বদ্ধমান জেলায় নিরঞ্জন ধমের বহু, মন্দির আছে। কোথায় কত আছে, জানিতে পারিলে উহার আদি উৎপত্তি নির্ণয়ে স্থবিধা হইত। ধমঠাকুরের সেবক, ব্রাহ্মণেতর জাতি হইয়া থাকে ; কদাচিৎ ব্রাহ্মণকেও পূজা করিতে দেখি। ওড়িষ্যায় বহ, বাউর শূন্তবাদী। এই ‘প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধধম” আমাদের কত লোকের ভয় ও ভাবনা, শরণ ও আশ্রয় হইয়া আছেন, আমরা কদাচিৎ স্মরণ করি। রপনারায়ণ, স্বরুপনারায়ণ, বাঁকুড়া রায়, পঞ্চানন, কাকড়াবিছা, বুড়াধম’ প্রভৃতি বিগ্রহের নাম ও ধাম একত্র করিতে পারিলেও ধমের ব্যাপ্তি বুঝিতে পারা যায়। ধমের গাজন বুঝিতে পারি ; কিন্তু, শিবের ও শীতলার প্লাজনের হেতু تالا سهلا 9\ বঁকুড়া সারস্বত সমাজের উদবোধন-পত্র ছিলেন । Հ8ծ কি ? আমরা বাঁকুড়ায় মনসা ও ভাদু পূজার ঘট। দেখিতেছি, কিন্তু, কুদরাশিনী ও অন্যান্য গ্রামদেবীর কথা কে শোনাইবে ? বাঁকুড়া জেলায় ছাতনা গ্রামে বাসলী দেবী প্রসিদ্ধ আছেন । কেহ কেহ বলেন, অমর কবি চণ্ডীদাস এই বাসলীর পূজারী ছিলেন। লোকে চণ্ডীদাসের ভিটা, রামী রজকিনীর ঘাট দেখাইয়। দেয় এবং তাহার ভ্রাতা দেবীদাসের নাম স্মরণ করে। কেহ কেহ মন্দিরগাত্রে লিখিত ১৪৭৬ শক (ইং ১৫৫৪ খ্ৰীষ্টাব্দ) কবির আবির্ভাব-কাল বলে । ইহাতে কিন্তু, চণ্ডীদাস সাড়ে তিন শত বৎসবের হইয় পড়েন । এই কাল, মন্দিব নিমর্পণের বা সংস্কারের কাল। পূর্বে অপর মন্দির ছিল না, কে বলিতে পারে । কবি সম্বন্ধে আলোচনা হইয়াছে, কিন্তু এখনও অনেক সন্দেহ আছে । মহামহোপাধ্যtয পণ্ডিত শ্রীহরপ্রসাদ শাস্ত্রী সন্দেহ করেন, চণ্ডীদাস নামে দুই কবি ছিলেন । আমার বিবেচনায় বাসলীসেবক বটু চণ্ডীদাস একাধিক হওয়া প্রায় অসম্ভব । নান্নরের মাঠে ও ছাতনার গ্রানে কবির কিছু কাল কাটিয়া থাকিবে । বহু কবি সম্বন্ধে এইরূপ ঘটনা ঘটিয়াছে। বীরভূমি ও পুরী, দুই স্থানই জয়দেবকে অধিকাব করিতে চায় । ছাতনার প্রাচীন নাম বাসলীনগর। বহু কালাবধি এখানে সামন্তভূপগণের আবাস আছে । ইহঁার ছত্ৰী । তাই নাম ছত্ৰীস্থান বা ছাতনা, যেমন রাজপুতস্থান হইতে রাজপুতনা । কিম্বদন্তী এই, এখানে প্রথমে ব্রাহ্মণ রাজা সে বংশের শেষ রাজ বাসলীর ভক্ত হইতে পারেন নাই । ইহাতে দেবীর কোপ জন্মে, ব্রাহ্মণবংশ ধ্বংস হয়, এবং বত মান ছত্রীরাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় । আমার বোধ হয় এই কিম্বদন্তীর মূলে সত্য আছে। বাসলীদেবী চণ্ডী নামে পূজিত হইলে ও পণ্ডিতেরা অকুমান করেন তিনি বৌদ্ধতন্ত্রের বজেশ্বরী । অতএব সেকালে ব্রাহ্মণের অভক্তি আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। হয় ত বাসলী সামস্তজাতির কুলদেবী ছিলেন, এবং পাঁচ শত বৎসর পূর্বে মন্দিরে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। এই অনুমান সত্য চুইলে বটু চণ্ডীদাস স্বচ্ছন্দে ছাতনায় আসিতে পারেন ।