পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বেনে-জল ›ዓ বেনো-জল বারো সেদিনকার সেই মারামারির পর থেকে, কুমার-বাহাদুরের অবস্থাটা হ’য়ে উঠল দস্তুরমত অসহনীয়। বিনয়-বাবুদের কেউ মুখে বা ব্যবহারে তার প্রতি কিছুমাত্র অনাদর প্রকাশ না করলেও, কুমার-বাহাদুর মনে-মনে এটা বেশ অতুভব করতে লাগলেন যে, সকলের চোখে অকস্মাৎ তিনি অনেকটা নীচে নেমে পড়েছেন । যে চায়ের আসরে বুসে প্রতিদিন সকলে অবাক হয়ে তার স্বমুখে-কথিত পল্লবিত বীরত্ব-কাহিনী শুনত আর বাহবা দিত, আজি সেখানে শুধু রতনের নামেই বাহব। শোনা যায—আর সব-চেয়ে যা অসহ ব্যাপার, সেই বাহবায় চক্ষুলজার খাতিরে তিনি কোন আপত্তি পর্য্যন্ত করতে পারেন না ! রতনকে আগে তিনি গরীব ব’লে ঘৃণা ও উপেক্ষা করতেন, আজকাল তাকে পরম শত্রু ব’লে মনে করতে লাগৃলেন। সেন-গিল্পী এখন রতনকে ছেলের মতন আদর-যত্ন করেন। তিনি যখন-তখন বলেন, “ভাগ্যে সেদিন রতন ছিল ! নইলে আমার সন্তোষকে সায়েবরা হয়ত মেরেই ফেলত ” সন্তোষ পর্য্যন্ত রতনের মোসাহেব হ’য়ে পড়েছে দেখে কুমার-বাহাদুরের মনে দুঃখের আর অবধি ছিল না ! সন্তোষ এখন প্রায়ই রতনের সঙ্গে সঙ্গে ফেরে, রতন সম্বন্ধে তার মনের ভাব একেবারে বদলে গেছে। আজকাল সে আবার রতনের কাছ থেকে মুষ্টিযুদ্ধ ও যুযুৎস্থর কসরৎ শিক্ষা করছে। অথচ এই ভাবান্তরের কোনই সঙ্গত কারণ নেই! সেদিন কুমার-বাহাদুর যে ব্যবহার করেছিলেন, সেইটেই তো স্বাভাবিক । তার সঙ্গে ছিলেন মহিলা, আর বিরুদ্ধে অতগুলো অভদ্র সাহেব । অসম্ভবের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সেদিন পূর্ণিমার উপরে অত্যাচার হবার । সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। রতন যা করেছে, সে তে। == تا ۹ ۹

পাগলের আচরণ ! আজি যারা তাকে কাপুরুষ ব’লে ভাবছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলে তারা কি করুত ? নিশ্চয়ই তিনি যা করেছেন, তাই ! তবে ? সব-চেয়ে অসহ এই সুমিত্র । আজ সকালে সে র্তাকে মুখের উপরে একরকম অপমান পর্য্যন্ত করতেও লজ্জিত হয়নি । সে হঠাৎ এসে তাকে জিজ্ঞাস ক’রে বস্ল—“কুমার-বাহাদুব, আজকাল আপনি এমন-ধারা মন-মর হয়ে থাকেন কেন ?" তিনি বললেন, “তার মানে ?” সুমিত্র বললে, “আগে আপনি আমাদের সঙ্গে কত গল্প করতেন, কত কথা কইতেন, কিন্তু আজকাল যে হিমালয়ের চেয়েও গম্ভীর হয়ে উঠেচেন !” তিনি বললেন, “গম্ভীর হয়ে উঠেচি ? কৈ, ন তো ! কি গল্প শুনতে চান, বলুন !” স্বমিত্র ঠোঁট-টেপা হাসি হেসে বললে, “সেই লাঠি মেরে ব্যাঘ্র-বধের গল্পটা ! সে-গল্পটা আমার ভারি ভালো লেগেছিল, আর একবার শুনতে বড় সাধ হচ্চে !” কুমার-বাহাদুবের মুখ আরক্ত হ’য়ে উঠল! স্বনীতি সামনে বসে কাপেটের উপরে ফুল তুলছিল, সে ধমক দিয়ে বললে, “মূমি, তোর বড় বড় হয়েচে দেখ চি !” স্বমিত্র বললে, “হঁ্য। দিদি, কুমার-বাহাদুর কি আমাদের পর গ| ? তার বীরত্বের গল্প আমার ভালে। লাগে, সেজন্যে তুমি ধমক দিচ্চ কেন বল দেখি ?” স্বনীতি রেগে বললে,- “স্বমি, ফের যদি তুই ಆನ್ಲಿ কথা বলিস্, তোর সঙ্গে আমি কখনো কথা কইব না!” স্বমিত্ৰা বললে, “বেশ দিদি, বেশ ! তুমি যখন এত বড় একটা প্রতিজ্ঞা ক’বে বস্লে, তখন দরকার নেই আমার আর বাঘ-মারার গল্প শুনে।” ব’লেই সে ভঙ্গী ভরে দ্য-হাত দুলিযে চ’লে গেল । কুমার-বাহাদুর দুঃখিতের মতন চুপ ক’রে বসে রইলেন। . স্থনীতি বললে, “সুমি’র কথায় আপনি যেন রাগ -করবেন না, সকলের পেছনে লাগাই ওর স্বভাব।”