পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] معیرساخته শ্ৰেষ্ঠ বন্ধু! আপনার ঋণ এ-জীবনে আমি পরিশোধ করতে পারব না !” কিন্তু মি: চ্যাটে এ কৃতজ্ঞতার উচ্ছ্বাসে ভুললেন না । পাকা সওদাগরের মত শুষ্ক ওজন-করা ভাষায় বললেন, “পরিশোধ করতে পারবে না কি ? পরিশোধ করতেই হবে! তুমি বেশ জেনে, মনে-মনে আমরা কেউ কারুর বন্ধু নই-স্বার্থই আমাদের এক ক’রে রেখেচে । আমি কলকাতার সন্ধান্ত ধনী-সমাজে শিকার খুজে? বেড়াই—এই আমার ব্যবসা। তুমি আমার পণ্যের মতন । এমন পণ্য আমি আরো বিকিয়েচি । আমি জানি, মিঃ সেন একজন খুব ধনবান লোক। ডাক্তারিতে আর নানা ব্যবসায়ে অংশীদার হয়ে তিনি অনেক টাকা জমিয়েচেন । তিনি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করেন । তার এই ছৰ্ব্বলতাই আমার সহায়। আমি আরো জানি, মিঃ সেনের মত নিৰ্ব্বোধের মতন উদার । তিনি মেয়ে আর ছেলের দাবি সমান ব’লে ভাবেন । স্থনীতির বিবাহে তিনি যৌতুক-রূপে যে সম্পত্তি দেবেন, তার অৰ্দ্ধেক আমার, অৰ্দ্ধেক তোমার । এই আমার সর্ব । এই সৰ্ত্তের একটু এদিকৃ-ওদিক্‌ হ’লে বিবাহের পরেও তোমার মুখস্বপ্ন আমি ভেঙে দিতে পারব। বুঝেচ নরেন ? পাছে তুমি ভুলে যাও, তাই সমস্ত ব্যাপারট আর-একবার তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিলুম। আমি তোমাকে মাথায় তুলেচি, আবার দরকার হ’লে আমিই তোমাকে পায়ের তলায় ফেলতে পারি ” কুমার-বাহাদুর দুঃখিতভাবে বললেন, “মি: চ্যাটো, আমি আপনাকে নিশ্চয়ই ঠকাব না, কিন্তু আপনি বড় হৃদয়হীনের মত কথা কইচেন ! আমি সত্যিই আপনার উপকৃত বন্ধু—আমাকে বিশ্বাস করুন !” মি: চ্যাটে। কঠিন হাস্য ক’রে বললেন, “প্রেম, বন্ধুত্ব, কৃতজ্ঞতা—ও-সব কাব্যের কথা, ব্যবসা-ক্ষেত্রে একেবারে অকেজো ! সংসারটা হচ্চে মস্ত এক ব্যবসা-ক্ষেত্ৰ— এখানে সব-চেয়ে যা উচ্চ, সেই মাতৃস্নেহই নিঃস্বার্থ নয় ! মাও নিজের রক্ত-মাংসে গড় সস্তানের কাছ থেকে প্রতিদানের আশা রাখেন । যে স্বার্থহীন প্রেমের কথা বলে, আমার মতে সে হয় কপট, নয় নিৰ্ব্বৈাধ । তোমাকে বেনো-জল । १> আমি বিশ্বাস করি না—খালি তোমাকে কেন, কারুকেই না ! বিশ্বাস করলেই আমি ঠাকুব । ততক্ষণই বন্ধুত্বের প্রাণ, যতক্ষণ দুই পক্ষের কেউ কারুর স্বার্থে বাধা না দেয় ! তুমি আমাকে বন্ধুত্বের কথা শোনাচ্ছ ? হা, হা, হ, হ !’ মি: চ্যাটে। উচ্চস্বরে উপহাসের হাসি হাসতে লাগলেন ! কুমার-বাহাদুর অবাক হয়ে মি: চ্যাটের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তার নিম্নমুখী মনের গতিও এই অদ্ভূত ও কুৎসিত যুক্তি শুনে যেন স্তম্ভিত হ’য়ে গেল ! চোঁদ আনন্দ-বাবুর বাড়ীর সামনের চাতালে, চেয়ারের উপরে ব’সে বসে সবাই কথাবাৰ্ত্ত কইছেন । একদিকে বিনয়-বাবু ও সেন-গিল্পী পাশাপাশি ব’লে আছেন, তাদের সামনে একটা বেতের টেবিল,—পূর্ণিমার হাতে-বোন কারুকার্য্য-করা প্রচ্ছাদনীতে ঢাকা । টেবিলের ও-ধারে আনন্দ-বাবু, তার দুপাশে রতন ও সন্তোষ । কুমার-বাহাদুর একটু তফাতে একখানা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে আধ-শোয়া অবস্থায় আছেন। স্থনীতি ও স্বমিত্র বাড়ীর ভিতরে-পূর্ণিমা যেখানে রান্নাঘরে ব্যস্ত হ’য়ে আছে, সেখানে সাহায্য করতে গেছে । সামনেই সমুদ্ৰ—সীম থেকে অসীমে, অসীম থেকে সীমায় ক্রমাগত ব্যস্তভাবে আনাগোনা করছে—তালে তালে, গতি-লীলার ছন্দে উচ্ছসিত হয়ে । আজ পূর্ণিমা তিথি, সাগরের কালো বুকে আলোর দোলা দুলিয়ে আকাশ-সায়ুরে চাদ স্থির হয়ে আছে । কথা হচ্ছিল সাহসের । কুমার-বাহাদুর একটু আগেই মতপ্রকাশ করেছিলেন, “সাধারণতঃ ইংরেজেরা দেশী লোকের চেয়ে সাহসী ।” রতন বললে, “আমার তাতে সনেহে আছে। কোন যুক্তিতে আপনি এ মত প্রকাশ করলেন ?" —“দেখুন, পথে-ঘাটে ইংরেজ কথায়-কথায় দেশী লোককে আক্রমণ করে । প্রায়ই সে মারে, কিন্তু মার খায় না। কলকাতার গড়ের মাঠে ফুটবল খেলায় জুন

  • سمتیہ