পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] রাজপথ SMB3) রাজপথ [ sa } একটা বিশেষ কোনও কার্য্য উপলক্ষ্যে স্বরেশ্বরকে কয়েকদিনের জন্য পূৰ্ব্ববঙ্গে যাইতে হইয়াছিল। তথা হইতে প্রত্যাবর্তনকালে সে তাহার তাত ঘবের জন্য একজন স্বদক্ষ তাতী লইয়া আসে । সে কয়েকদিন ধরিয়া তিনজোড়া সুক্ষ্ম খন্দরের শাড়ীতে বিচিত্র পাড় তৈয়ার করিতেছিল । শাড়ীগুলি তাত হষ্টতে নামার পর সুবেশ্বর তিন জোড়াই গৃহে লইয়া আসিল । মাধবী গৃহকাৰ্য্যে রত ছিল । স্ববেশ্বব অন্বেষণ করিয়া তাহাকে বাহির করিয়া বলিল, “মাধবী, দেখ, দেখি, বিশ্বাস হয় কি যে এ আমাদের তাতে বোন। কাপড় ?” মাধবী বস্ত্রগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া সবিস্ময়ে কহিল, ”সত্যি দাদা, চমৎকার হয়েছে । ঢাকাই শাড়ীর পাড়ের চেয়ে কোন অংশে হীন হয়নি ।” স্বরেশ্বর হাসিয়া কহিল, “ঢাকার কাবিগর দিয়ে কাজ করালে ঢাকাই শাড়ীর চেযে খারাপ কেন হবে রে ?” সপ্রশংস নেত্রে কাপড়গুলি নাডিতে নাড়িতে মাধবী বলিল, “কত করে পড়তা পড়ল দাদা ?” স্বরেশ্বর বলিল, “দশটাকা সাত আন জোড়া।” মনে মনে হিসাব করিয়া মাধবী কহিল, “তা হলে এগার টাকা বার আনা বিক্রী। তা মন্দ কি ? সস্তাই ত হ’ল দাদা। তিন জোড়াই দোকানে পাঠিয়ে দাও, আজই বিক্রী হয়ে যাবে ।” স্বরেশ্বর স্মিতমুখে কহিল, "একজোড়া তোর জন্তে রাখব মাধবী ।” মাধবী ব্যস্ত হইয়া কহিল, “না, দাদা, এত ভাল কাপড় বাড়ীতে রেখে কি হবে ? একে ত মেয়ের খন্ধর পরতেই চায় না—এ রকম ভাল কাপড় পেলে তবু একটু পরতে চাইবে।” সুরেশ্বর কহিল, “তা হোক মাধবী, খদ্দর ভিন্ন তুই যখন আর কিছু পরিসনে, একজোড়া ভাল কাপড় থাকা দরকার । কোথাও যাওয়া আসা আছে ।” তাহার পর হাসিতে হাসিতে কহিল, “তা ছাড়া বিপিন বোসের বাড়ী থেকে যদি কেউ তোর তল্লাসে আসে তখন ত একটা ভাল কাপড চাই ।” বিপিন বোসের বাড়ীর উল্লেখে মাধবীর মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল । ইহার মধ্যে রহস্য এইটুকু ছিল যে বিপিন বোস নামে কোন ও প্রৌঢ় ধনী ব্যক্তি দ্বিতীয়বার পত্নী হারাইয়। তৃতীয় বারের জন্য বিহবল হইয়া মাধবীর পাণিগ্রহণের প্রয়াসী হইয়াছিল । যে ব্যক্তি উক্ত প্রস্তাব লইয়া আসিয়াছিল সুরেশ্বর তাহাকে আসন গ্রহণের ও অবসর দেয় নাই, কিন্তু তদবধি সুবিধা পাইলেই সে বিপিন বোসের উল্লেখ করিয়া মাধবীকে ক্ষেপাইতে ছাড়িত না । মাধবী আরক্ত-স্মিতমুখে মাথা নাড়িয়া কপট ক্রোধের সহিত কহিল, “ফের যদি ও-কথা বলবে দাদা তাহলে ভাল হবে না বলছি " তাহার পব সহসা কোথাকার কোন স্বত্র কেমন করিয়া অবলম্বন করিয়া বলিল, “আচ্ছা দাদা, একজোড় কাপড় স্বমিত্রাকে দা ও না কেন ?” এবার স্ববেশ্ববের মুখ আরক্ত হইল। বিপিন বোসের কথাব উত্তবে স্বমিত্রার কথায় এমন একটি অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত ব্যক্ত ছিল যে সুরেশ্বব কোনরূপেই তাহা হইতে রক্ষা পাইল না। সে লজ্জিত মুখে কহিল, "স্বমিত্রাকে দিয়ে কি হবে ?” তাহার পর তাড়াতাড়ি কহিল, “তা দিলেও হয়। তবে বিনামূল্যে নয় ; বিক্রী করতে হবে। এখন তার এমন একটু রং ধরেছে যে পয়সা দিয়েও বোধহয় একজোড়া খন্দর কিনতে পারে।” মাধবী উৎফুল্প হইয়া কহিল, “তবে তাই ভাল, পরখ করে” দেখ কেনে কি না ।” কয়েকদিন পূৰ্ব্বে স্থমিত্রাকে খন্দরের পরিচ্ছদ পরিতে দেখিয়া সুরেশ্বর আনন্দ প্রকাশ করিলে স্বমিত্র। সদৰ্পে যে কথা বলিয়াছিল তাহা সুরেশ্বরের মনে পড়িল । একবার মনে হইল এত শীঘ্র পরীক্ষা করিতে যাওয়া হয়ত নিরাপদ