পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখn ] “দেখুন, আমি বাস্তবিকই গোয়েন্দ। নই ; গোয়েন্দার চেয়েও আমি ভীষণ প্রাণী – একুজন দীন দরিদ্র স্বদেশসেবক । আপনি আমার উপর যে কারণেই হোক বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু তবুও দয়া করে আমার একটা প্ৰণাম নিন। কারণ, আপনি স্থমিত্রার মা !” তাহার পর নত হইয়া জয়ন্তীকে প্রণাম করিয়া সুরেশ্বর কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেল । [ ১৬ ] - দাহ এবং দীপ্তি একসঙ্গে লইয়া তুবড়ি যেমন করিয়া জলিতে থাকে, ঠিক তেমনি করিয়া সুরেশ্বরের মন বেদনা ও আনন্দ একসঙ্গে বহন করিয়া জ্বলিতে লাগিল । অপমানের গ্লানিতে যাহা একদিকে নিদারুণভাবে পুড়িতে থাকিল, আনন্দের প্রভায় তাহাই অপরদিকে ভাস্বর হইয়া উঠিল! পথে বাহির হইয়া স্বরেশ্বর মুক্তারামবাবুর ষ্ট্ৰীটু অতিক্রম করিয়া কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীটু পার হইয়া বেচু চেটাৰ্জীর ধটে বিমানবিহারীর গৃহের সম্মুখে উপস্থিত হইল। কিন্তু ক্ষণমাত্র তথায় দাড়াইয়া ভিতরে প্রবেশ না করিয়াই পুনরায় প্রত্যাবৰ্ত্তন করিল, এবং কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীটে উপস্থিত হইবা মাত্র একটা দক্ষিণগামী ট্রাম-গাড়ী দেখিতে পাইয় তাহাতে উঠিয়া বসিল। কর্জন-পার্কে স্বরেশ্বর যখন প্রবেশ করিল তখন শীতকালের সন্ধ্যার ধূসর আবরণে চারিদিক অস্পষ্ট হইয়া আসিতেছিল, এবং সেই অস্পষ্টতার মধ্যে চতুৰ্দ্দিকে ক্রমবৰ্দ্ধনশীল দীপাবলি নীলাম্বরীর গাত্রে চুম্কির মত একে একে ফুটিয়া উঠিতেছিল। বাগান তখন জনবিরল হইয়৷ , * * আসিয়াছিল, কাজেই সুরেশ্বর সহজেই একটা শূন্ত বেঞ্চ, অধিকার করিয়া উপবেশন করিল। - উত্যক্ত কর্ণ এবং উত্তপ্ত চক্ষুকে রাজপথের কোলাহুল ཐ་ཐ༢ দৃশুবৈচিত্র্যের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্ত নিমজ্জিত করিয়া দিয়া সুরেশ্বর তাহার অধীরোদাত হৃদয়কে কতকটা শাস্ত করিয়া লইল । প্রজলিত অঙ্গার যেমন ধীরে ধীরে তাহার কৃষ্ণবর্ণ হইতে মুক্ত হইয়া প্রভাময় হইয়া উঠে, তাহার চিত্ত ঠিক সেইরূপে জয়ন্তী-প্রদত্ত মালিন্ত হইতে মুক্ত হইয়া স্থমিত্রার কল্পনায় উজ্জল হইয়া উঠিতে লাগিল। আজ সে স্থমিত্রার নিকট হইতে যে মহামূল্য সম্পদ লাভ করিয়া রাজপথ - ৯ 98° ണ്. --പ്പ~ു.ണ്-ണ്. ബാ .حسیح میر ہمہ-سیقیمتع-محیہ আসিয়াছে তাহা যে শুধু লাভ করিয়াছে তাহাই নয়, প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হইয়া লাভ করিয়াছে। প্রহরী স্কন্ধে হস্তপণ করিতে উদ্যত হইলে রাজনন্দিনী তাহার কণ্ঠে মাল্য পরাইয়া দিয়াছে ! নিমজ্জিত চিত্তে স্বরেশ্বর স্থমিত্রার সেই রোষদীপ্ত আরক্ত মুৰ্ত্তি এবং অকুষ্ঠিত সতেজ বাক্য স্মরণ করিতে লাগিল, এবং যতই স্মরণ করিতে লাগিল ততই স্থমিত্রার সেই প্রদীপ্ত স্থম্বর মূৰ্ত্তি তাহার সংগ্রাম-সাধনার বিজয়বধূর মূৰ্ত্তিতে রূপান্তরিত হইতে লাগিল । মনে হইল আজ তাহার তপস্যার শুষ্ক কঠোর প্রাঙ্গণে সিদ্ধি মূৰ্ত্তি ধারণ কল্পিয়া দাড়াইয়াছে, তাহার তৃণ-মৃত্তিকার দেবী-প্রতিমায় প্রাণসঞ্চার হইয়াছে ! সুরেশ্বরের এই অপরিমিত আনন্দ অকারণ নহে, এবং স্থমিত্রার নিকট হইতে সে যতটুকু লাভ করিয়াছে তাহাতেই পরিনিবন্ধ নহে। যে অখণ্ডের বোধ অতীক্রিয় হইয়া হৃদয়ের মধ্যে নিত্য-বৰ্ত্তমান আছে, মানুষ খণ্ডের মধ্যে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তাহার সন্ধান পায়। রূপের মধ্যে অরূপের উপলব্ধির মত স্বরেশ্বর স্বমিত্রার মধ্যে বিশ্ববিজয়িনী চিন্তনীয় মূৰ্ত্তি দেখিতে লাগিল। বাঙ্গালা দেশের পাচকোটি নরনারীর মধ্যে একটি মাত্র ডেপুটি-দুহিতার চিত্তজয়ের মতই আদ্যকার ঘটনা সামান্ত বলিয়া তাহার মনে হইল না। সমস্ত মানি হইতে বিমুক্ত হইয়া লঘুচিত্তে স্বরেশ্বর যখন গৃহে উপস্থিত হইল তখন মাধবী একরাশ তুলা লইয়া পাজ প্রস্তুত করিতে করিতে আপন মনে গুনগুন্‌ করিয়া গান করিতেছিল । সুরেশ্বর তাহার কঠিন নাগরা জুতা নিমতলেই পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছিল, দূর হইতে মাধবীকে অতি নিবিষ্ট দেখিতে পাইয়া সস্তপণে নিকটে আসিয়া তাহার বেণী ধরিয়া সজোরে নাড়িয়া দিল। এই আকস্মিক ঘটনায় চমকিত হইয়া পিছন ফিরিয়া দেখিয়া মাধবী কহিল, “ত বুঝতেই পেরেছি যে দাদা ভিন্ন আর কেউ নয় ।” স্বরেশ্বর হাসিতে হাসিতে বলিল, “তাই ত দাদা বুঝতে পারলে লোকে অতখানি চমকে ওঠে কিনা ?” মাধবী হাসিয়া কহিল, "দাদা বুঝতে পারলেও লোকে