পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্য } একটা উড়ো-আপদকে ঘাড়ে ক’রে কেন আপনি বিপদে পড়বেন ? আপনি দেশের আর দশের মধ্যে একজন মান্য গণ্য লোক, আপনি যদি পুলিস-হাঙ্গামে জড়িয়ে পড়েন, খবরের কাগজওলার তা হলে ধুনোর গন্ধে মনসার মত নেচে উঠবে, আপনার নাম দিয়ে যা-খুসি তাই লিখবে,— মিঃ সেন, হাতীকে পাকে ফেলবার জন্যে পৃথিবীর উৎসাহের অভাব কোন দিনই হয়-নি!” —“সব বুঝছি, মি: চ্যাটো, বুঝছি। কিন্তু—” বলতে বলতে হঠাৎ থেমে, বিনয়-বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন । তিনি যে কতটা বিচলিত একটি আদর্শ গ্রাম JDన9 হয়েছেন, সেটা তার ভাবভঙ্গী দেখে মি: চ্যাটো বিলক্ষণই বুঝতে পারলেন। বিনয়-বাবুর পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে না যেতেই পাশের ঘরের দরজার পর্দা সরিয়ে কুমার-বাহাদুর আত্মপ্রকাশ করলেন । মিঃ চ্যাটো বিজয়ী বীরের মত গৰ্ব্বিত অথচ নিম্ন-স্বরে বললেন, “আজ আমার ব্রহ্মাস্ত্র ছেড়েছি!” কুমার-বাহাদুর একগাল হেসে বললেন, “পাশের ঘর থেকে আমি সমস্ত শুনেছি !” ক্রমশঃ শ্ৰী হেমেন্দ্রকুমার রায় একটি আদর্শ গ্রাম [ আদর্শ গ্রাম কিরূপ হওয়া উচিত, কিছুকাল পূৰ্ব্বে আমরা তাহার আলোচনা করিয়াছিলাম ; এবং আদশের দিকে কোন গ্রাম অগ্রসর হইবার চেষ্টা করিতেছে জানিতে পারিলে তাহার সচিত্র বৃত্তান্ত মুদ্রিত করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলাম। তদনুসারে “স্থল” গ্রামের বৃত্তান্ত মুদ্রিত হইল। . — প্রবাসী-সম্পাদক । ] গত বৎসরের পৌষমাসের প্রবাসীতে বিবিধ প্রসঙ্গে সম্পাদক মহাশয় অাদর্শ পল্লীর যে কল্পিত চিত্ৰ দিয়াছেন, বঙ্গের প্রত্যেকটি পল্লীকে ঐরুপে গড়িয়া তোলা বিশেষ কষ্টসাধ্য হইলেও চার-পাঁচখানি গ্রাম লইয়া ঐরূপ একএকটি আদর্শ পল্লীকেন্দ্র স্থাপন করা অসম্ভব মনে হয় না । মানুষ কোন সময়েই ঠিক আদর্শে উপনীত হইতে পারে না। কারণ, সে যত উন্নত হইতে থাকে, তাহার আদর্শ ও তত উন্নত হইতে থাকে। অতএব, আদর্শের দিকে সতত অগ্রসর হইবার অবিরাম চেষ্টা দ্বারা মানুষের সজীবতা প্রমাণিত হয় । পশ্চিমবঙ্গের পল্লীগুলির অবস্থা যেরূপ শোচনীয়, পূৰ্ব্ববঙ্গের পল্লীসমূহের অবস্থা ঠিক সেরূপ নয়। পূৰ্ব্ববঙ্গে যে-সব গ্রামে জমিদারগণের বাস আছে সেখানে দুই-একটি বিদ্যালয় ব৷ উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান থাকিতে প্রায় দেখ; যায়। কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই যত্ব ও উদ্যমের অভাবে নূতন প্রতিষ্ঠান ত ইয়ই না, বরং পুরাতনগুলির অবস্থা ক্রমশঃ শোচনীঘ হইয়া দাড়ায়। প্রধানত: পল্লীতে উপার্জনের পথ না থাকায় এবং শিক্ষা বিস্তার না হওয়াতেই দরিত্রেরা উপার্জন-উদ্দেশ্যে এবং সঙ্গতিসম্পন্ন শিক্ষিত সম্প্রদায় স্বথস্ববিধার জন্য পল্লী ত্যাগ করিয়া সহরগামী হইতেছেন। পল্লীর উন্নতি করিতে হইলে পল্লীবাসীর অর্থোপার্জনের সুযোগ সুবিধা এবং পল্লীসমাজের জড়তা ও অবসাদ দূৰ, কবিয়। বিবিধ হিতকর অম্বষ্ঠান ও আন্দোলনের স্থ জন করিতে হইবে । শিক্ষা, অর্থোপার্জন, স্বাস্থ্যোল্পতি, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ও ধৰ্ম্মানুষ্ঠান প্রভৃতি যে-সব লক্ষণ মানবজীবনেব উন্নতি ও পরিপুষ্টির পরিচায়ক, সেগুলি যাহতে একসঙ্গে অগ্রসর হইতে পারে তাহার উত্তম ব্যবস্থা কর চাই । বক্তৃতা- বা প্রবন্ধ-যোগে প্রচার অপেক্ষা প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত উল্লেখ করিলে অধিক ফল হওয়া সম্ভব । আমাদের পল্লীতে কয়েক বৎসরের চেষ্টায় যেরূপ কাৰ্য্য হইয়াছে এবং ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য যে নীতি অমুসরণ করা হইতেছে, তাহার বিবরণ নিম্নে দেওয়া হইল ।