পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩৬ বৈ পুরুষ’, ‘জিজীবিষেচ, ছতং সমাঃ'-মানুষের পরমায়ু একশত বৎসর, কিন্তু অধুনা এ-কথাটি মেচ্ছ জাতির সম্বন্ধে যেরূপ সত্য, আমাদের পক্ষে ঠিক তার বিপরীত। শৈশব-মৃত্যু, অকালমৃত্যু, প্রভৃতি মূল্যবান অধিকারগুলিতে আমাদের একচেটিয়া স্বত্ব ; অন্ত কোন সভ্যজাতি এ-সব বিষয়ে আমাদের কাছে এগুতে পারে না । কৌটিল্য র্তার অর্থশাস্ত্রে লিখে গিয়েছেন—‘নক্ষত্রমতিপৃচ্ছস্তম্ বালমর্থোহতিবর্ততে’—যে বালোচিতবুদ্ধিবিশিষ্ট ব্যক্তি বেশী পরিমাণে নক্ষত্রজিজ্ঞাস্থ হয়, অর্থ তাকে অতিক্রম করে যায়, অর্থাৎ কিনা, যারা খুব গ্রহনক্ষত্র মেনে চলেন, র্তাদের ভাগ্যে ধনলাভ ঘটে না । কিন্তু আমরা এখন আর সে-সব কথা মানিনে। আমাদের বাহিরে যে বিরাটু জড়জগৎ বিস্তৃত রয়েছে, সৰ্ব্বদা আমরা তাকে ভয় করে’ অতি সন্তৰ্পণে নিজের ধিক ত ক্ষুদ্র প্রাণটি বাচিয়ে চলবার চেষ্টা করি— “অল্প লইয়। থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহ যায় । কণtটুকু যদি হারায়, তা লয়ে প্রাণ করে হয় হয় ? সংসারের অনিত্যতার চিস্তায় মনে কালচে ধরে গেছে, সৰ্ব্বদা মোহমুদগর বৈরাগ্যশতক আওড়াচ্ছি এবং শান্তি স্বস্ত্যয়ন লক্ষ্মীপূজা শনিপূজা কিছুই বাদ দিচ্ছি না। কিন্তু লক্ষ্মী পলায়ন করেছেন, শনুি কায়েম হয়ে বসেছে, আর আমরা "ভূতলে অধম বাঙ্গালী জাতি হয়ে আছি । পাশ্চাত্য জাতিসমূহের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তাদের লোকগুলি যেন এক-একটা উল্কাপিণ্ড—উদ্যম, উৎসাহ, সাহস, তেজ, নিৰ্ভীকতার জলন্ত প্রতিমূৰ্ত্তি। Joie de vivre—জীবনে প্রীতি, প্রাণের স্পন্দন, বেঁচে থাকার ফুৰ্ত্তি, তাদের ভাবে, কথায়, কার্য্যে, শতধারায় ঠিকূরে পড়ছে। বৃদ্ধ বয়সেও খেলা কবৃছে,—আমাদের মত অলস জীবনের জড়তা দূর করুবার জন্য ক্ষণিক উত্তেজনার মোহে নয়, প্রাণের অফুরন্ত ফুরণের নৈত্যিক বাহ প্রকাশের প্রেরণায়—আবার সঙ্গে সঙ্গে এমন গুরুতর মানসিক শক্তির লীলাখেলা দেখাচ্ছে, যাতে করে জগৎ স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে। "ক্লৈব্যং মাস্ম গম: পার্থ, "নাত্মানং অবসাদয়েৎ’ -গীতাকার এই উদ্দীপনাপূর্ণ বাক্যগুলি যেন তাদের প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩০ . [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড জন্যই লিখে গিয়েছিলেন। বিবেকানন্দ বলেছেন, আমাদের বেদাস্তধৰ্ম্মকে এখন practical ( কেজো ) করতে হবে অর্থাৎ যে “বিগতভী:’ মন্ত্রের উদাত্ত বাণী বেদাস্তের শ্রেষ্ঠ দান, সেটাকে পুথির পাতা থেকে খসিয়ে এনে জীবনযুদ্ধের মাঝখানে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং তার সঙ্গে পাশ্চাত্য humanitarianism অর্থাৎ লোকহিতব্ৰত যোগ করে’ ‘সৰ্ব্বত্র সমদৰ্শনঃ’ গীতার এই মহান আদর্শকে অধ্যাত্মজগৎ থেকে নামিয়ে এনে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কাজে লাগিয়ে এক নব বেদান্তধৰ্ম্ম স্থাপন করতে হবে—“জীবে ব্রহ্মৈব নাপরঃ “আত্মবৎ সৰ্ব্বভুতেষু প্রভৃতি মন্ত্রকে সামাজিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে, যা বেদান্তস্থত্রের শারীরিকভাষ্যে খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে ভগবান শঙ্করাচার্য্যও করতে সাহস পাননি—কারণ 'ন শূদ্রায় মতিং দদ্যাৎ—তিনিও এই নীতির সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছিলেন । আমি মহাত্মা বিবেকানন্দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমার যুবক বন্ধুদিগকে আহবান করে বিনীতভাবে বলছি, তারা এই সামাজিক ভেদবুদ্ধি দূরীকরণ রূপ বৈদাস্তিক লোকহিতব্ৰত গ্রহণ করুন, তাদের এই লক্ষ্য হোক, এতে জীবিকা অর্জনের পথ রুদ্ধ হবে না, কিন্তু এই ব্ৰত উদযাপনের জন্য যে শিক্ষা দীক্ষা ও সাধন চাই, তাতে আত্মনিয়োগ করতে হবে । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যৌবনে দাও রাজটীকা’—বাস্তবিক সকল মহৎ আদর্শের বীজ যৌবনেই উপ্ত হয়ে থাকে, যার লক্ষ্য ধৌবনে বিশিষ্টতা লাভ করেনি সে পরিণত বয়সে কদাচিৎ তা ফলিয়ে তুলতে সক্ষম হয়— অতএব এই ব্রত গ্রহণের পক্ষে যৌবনই প্রকৃষ্ট সময় । মিসেস ব্রাউনিং বলেছেন— "An ignorance of means may minister To greatness, but an ignorance of aims Makes it impossible to be great at all.' “মহত্ত্বলাভের উপায় জানা না থাকূলেও মহৎ হওয়া যেতে পারে, কিন্তু উচ্চ লক্ষ্যের অজ্ঞতা থাকূলে মহৎ হওয়া অসম্ভব ।” লক্ষ্য স্থির থাকলে উপায়ের জন্য ভাবতে হবে না, উপায় আপনি আপনার পথ খুঁজে নেবে । এই মহৎ ব্রতে বিফলতার আশঙ্কায় কেউ যেন ভীত