পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] পাদের সঙ্গে অারেক পাদের অক্ষর-সংখ্যার পার্থক্য আরো অনেক বেশি হতে পারে। যেখানে ভগ্নমাত্রিক বা অল্প-মাত্রিক বর্ণ বেশি সেখানে অক্ষরসংখ্যাও বেণী ; কিন্তু বহু-মাত্রিক বর্ণের আধিক্যে অক্ষর-সংখ্যা অনেক কমে যায় । এই তো গেল গানে মাত্রার গুণন-বিষয়ক বা ভগ্নাংশবিষয়ক প্রকার-ভেদ । দ্বিতীয় প্রকার ভেদ হচ্ছে মাত্রার স্থায়িত্ব নিয়ে। প্রথমেই মাত্রার সংজ্ঞা নির্দেশ করার সময়েই বলা হয়েছে যে কালের দিক দিয়ে ধ্বনি-পরিমাণের একক বা unitকে মাত্রা বলা হয়। একটি লঘুস্বর বা লঘুস্বরাস্ত ব্যঞ্জন বর্ণ (যথা অই, বা ক,খ) উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে সে সময়-পরিমাণকে একমাত্র বলে’ অভিহিত করেছি। মাত্রার এ সংজ্ঞা কাব্য ও সঙ্গীত উভয়েই সমভাবে খাটে। এই একমাত্র-কালের দ্বিগুণ বা ত্রিগুণকে দু মাত্রা বা তিন মাত্রা, এবং তার অৰ্দ্ধেক বা সিকি পরিমাণ কালকে অৰ্দ্ধমাত্রা বা সিকি মাত্রা বলব। গানে দেড়মাত্রা প্রভৃতিরও ব্যবহার আছে। কিন্তু গানে মাত্র-পরিমাণের আরো স্বক্ষ বিচার করা প্রয়োজন । একটি লঘুম্বরের উচ্চারণে যে সময় লাগে তাকে এক মাত্রা বা মাত্রার একক বলে অভিহিত করেছি। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই মনে সংশয় জাগবে এ সংজ্ঞা ঠিক হল কি না ; কেননা একটি লঘুস্বরের উচ্চারণে কত সময় লাগবে তার তো কোনো স্থিরতা নেই। বস্তুত ওই সংজ্ঞাটি আপেক্ষিক ; কারণ, ওটা বিভিন্ন সময়ে একই ব্যক্তির অথবা একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির উচ্চারণের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে। আমি হয়তো এখন রেগে বা অন্ত কোনো ব্যস্ততায় খুব দ্রুতগতিতে কথা বলছি আবার হয়তো অন্য সময়ে নিস্তেজ অবসন্ন হয়ে খুব ধীরে ধীরে কথা বলব। মুতরাং আমার কথার এক মাত্রার সময়-পরিমাণের কোনো স্থিরতা নেই,—ব্যস্ততার সময় এক মাত্রার উচ্চারণে যে সময় লাগে, ধীরতার সময় তার পরিমাণ দেড়গুণ কি দ্বিগুণ পৰ্য্যস্ত বেড়ে যেতে পারে। স্বতরাং মাত্রার কোনো নিরপেক্ষ সংজ্ঞা হল না। যদি বলা যায় যে বিশেষ ব্যস্ততা বা ধীরতা বাদ দিয়ে স্বভাবত অমৃত্তেজিত বা অনবসন্ন অবস্থায় আমার বাংলা ছন্দ ও সঙ্গীত 8(సి এক বর্ণের উচ্চারণে যে সময় লাগে সেইটেই মাত্রার যথার্থ নিরপেক্ষ পরিমাণ, তথাপি ঠিক্‌ হবে না। কারণ, সকল লোকে সমান গতিতে উচ্চারণ করে না ; এক বর্ণের উচ্চারণে আমার যে সময় লাগে অন্যের ঠিক সে সময় লাগে না,—কারে বেশি লাগে, কারো কম লাগে । স্বতরাং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মাত্রা-পরিমাণ নির্ণয়ের উপায় কি ? প্রশ্নটার উত্তর দেবার আগে ওটাকে আরো একটু বিশদ করে’ বুঝিয়ে বলা দরকার, কেননা এর উপরেই কবিতার সঙ্গে সঙ্গীতের একটা প্রধান পার্থক্য নির্ভর করে । মনে কর কেউ একটা গান করছে। এখন গানটির প্রত্যেক বর্ণের বিভিন্ন মাত্রা-পরিমাণ নির্দেশ করা আছে, কোনোটার সিকি মাত্রা, কোনোটার দেড় দুই তিন বা চার ইত্যাদি । এস্থলে গায়কের দুটো বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমত দেখতে হবে যেন গানের আদ্যস্ত সৰ্ব্বত্র মাত্রার সমতা রক্ষণ হয় ; অর্থাৎ গানের প্রথমেই এক মাত্রা যতটুকু কাল স্থায়ী হয়েছে গানের শেষ পৰ্য্যন্ত যেন মাত্রার ওই স্থায়িত্ব-কালের স্থিরতা বা সমতা (uniformity ) রক্ষা হয়, এবং ভগ্ন-মাত্রা ও গুণ-মাত্রাগুলোর স্থায়িত্বও যেন এককের স্থায়িত্বের সমামুপাতিক হয় । মাত্রার এই সমতার উপরেই সমগ্র গানটির ধ্বনি-প্রবাহের গতি-সাম্য নির্ভর করে । ধ্বনি-প্রবাহের এই গতি-সাম্যকেই সঙ্গীতশাস্ত্রে লয় নামে অভিহিত করা হয়। যদি লয় ঠিক্‌ না থাকে অর্থাৎ গানের গতি যদি সৰ্ব্বত্র সমান না হয়ে কোথাও দ্রুত কোথাও বিলম্বিত হয় তবে সঙ্গীতের সমস্ত মাধুর্য্যই নষ্ট হয়ে যায়। ধ্বনির এই গতি-সাম্য বা লয়ই সঙ্গীতের মাধুর্ঘ্যের মূল কারণ। স্বতরাং দেখা গেল যে প্রতিমাত্রার স্থায়িত্ব-কাল যথাকুপাতে স্বনিদিষ্ট হলেই সমগ্র সঙ্গীতটির লয়ও স্থির হয়ে যায় । এখন আমরা লয়ের এ সংজ্ঞা দিতে পারি যে সঙ্গীতের আদ্যন্ত সৰ্ব্বত্র মাত্রার কালপরিমাণের সমতা বা সমামুপাত রক্ষা করাকেই লয় বলে । দ্বিতীয়ত, মাত্রার সমতা রক্ষা হলে লয় ঠিক থাকে বটে, কিন্তু একটি মাত্রা কতক্ষণ স্থায়ী হবে সে প্রশ্ন স্বভাবতই মনে উদিত হয় । সঙ্গীত সম্বন্ধে যাদের কিছুমাত্রও অভিজ্ঞতা আছে তারাই জানে যে শুধু লয় ঠিক থাকুলেষ্ট