পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bషి সল্লিভ। তিনি নানালঙ্কারভূষিত। তিথিতত্ত্বে আদিত্যপুরাণ হইতে লক্ষ্মীর যে ধ্যান উদ্ধত হইয়াছে, তাহাতে তিনি গৌরবর্ণ। তাহার হস্তসংখ্যা এবং হস্তে তিনি কি কি ধারণ করিয়া থাকিবেন, এই দুইটি বিষয়ে অনেক বিভিন্নতা দৃষ্ট হয়। দেবী কোথাও দ্বিহস্ত, কোথাও বা চতুর্হস্তী, কোথাও বা তিনি ষড়ভূজ বা অষ্টভুজ। আবার এক স্থানে মহালক্ষ্মী অষ্টাদশভূজারূপে কল্পিত হইয়াছেন। এই মহালক্ষ্মী মহাকালীমুষ্ঠির অন্তরূপ বিকাশ। কোন কোন স্থলে লক্ষ্মীপূজায় যে বলিদানের বিধি আছে, তাহ বোধ হয় এই মহালক্ষ্মীর পুজা । তিথিতত্ত্বে উদ্ধত আদিত্যপুরাণ অনুসারে লগীর হস্তে পাশ, অক্ষমালা, পদ্ম ও অঙ্কুশ । লক্ষ্মীর প্রত্যেক মুৰ্বিকল্পনাতেই হন্তে পদ্ম থাকে। কোন কোন মূৰ্ত্তিতে হস্ত বস্বপত্র (রত্বপূর্ণ পাত্র ) স্বর্ণপদ্ম ও মাতুলুঙ্গ (লেবু) থাকে। কমলার হস্তধৃত লেবুই কমলালেবু নামে অভিহিত হইয়াছে কি না, তাহ বলা যায় না। অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মীর হস্তে যথাক্রমে অক্ষ, স্ৰকৃ, পরশু, গদা, কুলিশ, পদ্ম, ধনু, কুণ্ডিকা (কমণ্ডলু, ) দও, শক্তি, অসি, চৰ্ম্ম, জলজ, ঘণ্টা, স্বরাপত্র, শূল, পাশ ও স্বদর্শন (চক্র ) । শুক্রনীতিসার অনুসারে লক্ষ্মীর এক হস্তে বীণ, দুইটি হস্তে বর এবং অভয়মুদ থাকিবে । তথtয় আর-একটি হস্তে লুঙ্গফলেরও উল্লেখ আছে। লুঙ্গফল সস্তব তঃ মাতুলুঙ্গ। মূৰ্ত্তিবিশেষে দেবীব এক হস্তে শ্ৰীফল থাকিবে, এইরূপ উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্ৰীফল সম্বন্ধে একটি পৌরাণিক কাহিনী আছে যে, একদা শিল-পুজাকালে একটি পদ্মের অভাব ঘটায় লক্ষী মুকুলিত পদ্মসদৃশ আপনার একটি স্তন কৰ্ত্তন করিয়া দিয়াছিলেন। মহাদেবের বরে তাঁহাই বিল্ব বা ত্রফল হয় । মৎস্তপুরাণে বর্ণিত লক্ষ্মীমূৰ্ত্তির হস্তে পদ্ম ও শ্ৰীফল । এইটি গজলগীমূৰ্ত্তি। দেবী পদ্মাসনে উপবিষ্ট, দুইটি হস্তী দেবীর উপর জলবর্ধণ করিতেছে । বিষ্ণুমূৰ্ত্তিসহ যে লক্ষ্মীমূৰ্ত্তি দেখা যায়, তাহ দ্বিহস্তবিশিষ্ট। শ্ৰীযুক্ত বিনোদবিহার কাব্যতীর্থ বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ের ‘বিষ্ণুমূৰ্ত্তি পরিচয়' নামক পুস্তিক হইতে জানা যায় যে, বাস্বদেব, ত্ৰৈলোক্যমোহন, নারায়ণ প্রভৃতি বিষ্ণুমূৰ্ত্তিতে লক্ষ্মীমুৰ্ত্তিও আছেন। লক্ষ্মীনারায়ণমূৰ্ত্তিতে দেবী নারায়ণের বাম অঙ্কের উপব উপবিষ্ট এবং কোন কোন স্থলে উtহার হস্ত দ্বারা পশম্পবকে আলিঙ্গন করিয়া রহিয়াছেন । অগ্নিপুরাণ হইতে জানা যায়, লক্ষ্মী বরাহরূপধারী বিষ্ণুর পদতলে উপবিষ্ট থাকেন । অনন্তশায়িনী বিষ্ণুমূর্তিতে বিষ্ণু নাrগর উপর শয়ান এবং লক্ষ্মী স্তহার পদসেব করিতেছেন। অগ্নিপুরাণের হরিশঙ্কর মূৰ্ত্তিতে নারায়ণ জলশায়ী অবস্থায় বামপাশ্বে শয়ন । ইহঁীর শরীরের এক অংশ রূত্র ( মহাদেব )-মূৰ্ত্তি এবং অপর অংশ কেশব (বিষ্ণু )-মুপ্তির লক্ষণযুক্ত এবং মূৰ্ত্তিটি গৌরী ও লগীমুর্ভিসমন্বিত। ভারতবর্ষে শৈব বৈষ্ণব প্রভৃতি ধৰ্ম্ম প্রচলিত থাকিলেও তাহাদিগের উপাস্ত দেবদেবীগণের মধ্যে ঐক্য-সম্পাদনের চেষ্টা ছিল । সেই সেই চেষ্টার ফলে হরিশঙ্কর মূৰ্ত্তি ও মহালক্ষ্মী মহাকালী মহাসরস্বতীমূৰ্ত্তি । চিত্রে লক্ষ্মীর বাহন পেচক দেখা যায় । ইহার কারণ ঠিক বলা যায় না। মার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্গত চণ্ডী অনুসাবে দেবগণের যে বাহন, উtহাদের শক্তিরূপিণী দেবীগণেরও সেই বাহন। স্বতবাং বৈষ্ণুবীর বাহন গরুড় ; সেই হিসাবে লক্ষ্মীর বাহন গরুড় হওয়া উচিত ছিল । পেচককে গরুড়েল স্ত্রী-সংস্করণ বলিয়াই বোধ হয়। এথেন্সের পুর্বলক্ষ্মী বা রক্ষয়িত্রী এথেন দেবীর প্রিয় পক্ষীও পেচক। দেবী-ভাগবতে আছে যে, লক্ষ্মী নন। মূৰ্ত্তিতে নানা স্থানে অবস্থান করিতেছেন। স্বৰ্গধামে তিনি স্বৰ্গলক্ষ্মী, এই লক্ষ্মীর অভাবে ইন্দ্র শ্ৰী-ভ্রষ্ট হুইয়াছিলেন। প্রবাসী—মাঘ, yళిలిe রাজভবনে তিনি রাজলক্ষ্মী, এইজগুই পরমভাগবত । ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড গুপ্তরাজগণ মুদ্রায় লক্ষ্মীচিহ্ন অঙ্কিত করিয়াছিলেন। আর মর্ত্যলোকে তিনি গৃহলক্ষ্মী—এই মূৰ্ত্তিতে তিনি এখনও হিন্দুগৃহে বিরাজ করিতেছেন । . (মাসিক বসুমতী, অগ্রহায়ণ ) শ্ৰী ক্ষেত্ৰগোপাল মুখোপাধ্যায় ময়মনসিংহের মেয়েলী সঙ্গীত মেয়েলী সঙ্গীত অসংখ্য । সেই-সব সংখ্যাহীন গীতাবলী আবার বহু শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা, পূজার মালুসী, ব্রতের গীত, প্রাতঃস্নানের গান, বিবাহের গীত, সহেলা, অন্নপ্রাশন, চুড়াকরণ ও উপনয়নের গীত, স্নান-কামানের গীত, বর-বধুর যাত্রার গীত, পঞ্চামৃত, সমস্তোন্নয়ন, সাধভক্ষণের গীত, বরশয্যার গীত, ইত্যাদি বহুবিধ গীত মেয়েলী সঙ্গীতের অন্তভুক্ত। তা ছাড়া, সীতা-সাবিত্ৰী শ্রীরাধিকার বারমাসী, রামের বনবাস, নিমাইয়ের সন্ন্যাস, শ্ৰীকৃষ্ণের গোষ্ঠ । নিম্ন শ্রেণীর মধ্যে এক প্রকার গায়িকা স্ত্রীলোক আছেন, তাহার। উপযুক্ত-মত বেতন লইয়া বিবtহাদি উৎসবের বাড়ীতে কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন। বাৎসল্য-রস-সংপৃক্ত ত্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলাই সেই কীৰ্ত্তনের বিষয় । ইহাকে "থেলীকীৰ্ত্তন” বা “গোপিনী কীৰ্ত্তন” বলে। এই গোপিনী বা খেল-কীৰ্ত্তন মেয়েলী সঙ্গীত । ভtট অঞ্চলের স্ত্রীলোকেরা "ধামালি” বা “ধামাইল" বলিয়া একপ্রকার গীত গাইয়া থাকেন ; সেগুলি অধিকাংশই প্রাচীন ও আধুনিক বৈষ্ণব কবি রচিত রূপামুরাগের পদ। শ্ৰীকৃষ্ণ আর গৌরাঙ্গই “ধমইল" গীতের বিষয়। দশ, পনব, কি বিশ-পচিশ জন স্ত্রীলোককে মুক্ত প্রাঙ্গণে চক্রকারে দাড়াইয়. তালে তালে করতাল দিয়া নাচিয়। নাচিয়া ধামালি গাইতে হয়। ব্রাহ্মণ কায়স্থ প্রভৃতি উচ্চশ্রেণীর স্ত্রীলোকদিগকে “ধমালি" গাইতে দেখা যায় না। নিম্নে দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি “ধামাইল" লিথিয় দিতেছি । "গৌর বরণ, রূপের কিরণ, লগে ল নয়নে। ( লাগল নয়নে সজনী, লাগল নয়নে) । আমার গেীর অপরূপ, কোটি-মন্মথ-স্বরূপ, সজনী, কথন চক্ষে দেখি না এরূপ, গোর। আড়-নয়নের চাউনি দিয়ে পরাণ ধবিয়া টানে। যদি গেীর কুল পাই, আমার এই কুলের কাজ নাই, সজনি, তিন কড়ার মুল কুলে দিলাম ছাই, আমি গেীর কুলে কুল মিশরে, সজনি, ম’জে রব উীর চরণে । ভেবে জয়মঙ্গলে কয়, আমার গেীর রসময়, সজনি, রসে মাখা তমুখানি হয়, গোরার রসে ডুবুডুবু আঁখি, একদিন চেয়েছিল আমার পানে ।” মেয়েলী সঙ্গীত গীতি-সাহিত্যের প্রায় অৰ্দ্ধtংশই সরস করিয়t রাখিয়াছে। এই-সমস্ত গীতাবলী কাহার রচিত, তাহার কোন নামের ভণিতা নাই। তবে যে-সকল পুরুষের গান মেয়ের আপনার করিয়া লইয়াছেন, এবং বৈষ্ণুল-কবি-রচিত যে-সকল পদাবলী মেয়েলী সঙ্গীতে মিশিয়াছে, তাহীর দু-একটিতে রচকের নাম শুনিতে পাওয়া যায়। বোধ হয়, খাটি মেয়েলী সঙ্গীতগুলি পল্লীর স্ত্রীকবি কর্তৃকই রচিত হইয়াছে । বৈষ্ণব পদাবলী এবং পুরুধের গান বাছিয়া পৃথক্ করিয়া লইলেও, থাটি মেয়েলী সঙ্গীত সংখ্যার অল্প হইবে না। হিন্দুধর্মের যাবতীয়