পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ মেয়েদের বহির্জগতের অধিকারে বঞ্চিত করিলে এতখানি উদ্ধৃত্ত শক্তি হয়, অপব্যয় হইবে, নয় মরিচ পড়িয়া নষ্ট হইবে । বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্ত্রীলোকের ভারমুক্ত মন ও অবকাশের খোরাক জোগাইবার জন্যই ত তাহাদের সকল অধিকার দিতে হইবে । শৃঙ্খলিত দেহমনে স্ত্রীলোক যে প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন, মুক্ত অবস্থায় তাহার অপেক্ষা বেশী দেওয়াই স্বাভাবিক। র্তাহার মানসিক শক্তি ও প্রতিভাকে পুৰ্ব্বে যেখানে কেবল সংসাররচনায় লাগাইয়াছিলেন, নারী এখন তাঙ্কার কিয়দংশ বহু পরিমাণে অন্য কাজে দিতে পারিবেন । যে সমাজে কোনো শক্তির অপচয় হয় না, কোনো মাতুষ দান না করিয়া গ্রহণ করে না, সেই ত অর্থনীতির মতে আদর্শ সমাজ । কিন্তু আমাদের ধনীর ঘরে ঘরে এবং মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদেরও ঘরে অনেক নারীকে কি জীবনটা বৃথা নষ্ট করিতে দেখিতেছি না ? সমাজ-দেহের এতখানি শক্তির অপচয় না করিয়া অবসরপ্রাপ্ত রমণীর পূৰ্ব্বে যে সময়টায় নদী হইতে জল আনিতে যাইতেন এখন সেই সময়ে অর্থ উপার্জন করিয়া কলের ট্যাক্স, দিতে পরিবেন। যে সময়ে উনানে গোবর লেপিয়া কাঠ কয়লা ধুটে কেরসিন ঘাটিয়া রন্ধন করিতেন, সেই সময়ে উপার্জন করিয়া বৈদ্যুতিক চুল্লী ব্যবহার করিতে পরিবেন। এরূপ অবস্থা এখনও অধিকাংশের হয় নাই ; কিন্তু কালক্রমে হইবে । এবং ঐখনই কাহারও কাহারও হইয়াছে। নারীর গৃহকে সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর করিতে হইলেও বহির্জগতে র্তাহার অধিকার থাকা দরকার । সন্তানকে নীরোগ স্বস্থ ও সবল রাখিতে হইলে শুধু মায়ের নিজের ঘরটি স্বন্দর হইলেই হয় না ; সহর, প্রতিবাসী, রাস্তাঘাট, দোকানবাজার, সবেরই উন্নতি দরকার । ধনীর ও শিক্ষিতের ঘরের সস্তানকেও যে প্লেগে কলেরায় মরিতে দেখা যায়, বাহির হইতে রোগ কুড়াইয়া আনা তাহার কারণ নয় কি ? মায়ের যদি রাষ্ট্ৰীয় অধিকার থাকে, তবে তিনি সেই অধিকারের ফলে দোকানে ভেজাল বন্ধ, সহরের রাস্তা ঘাট পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর করিতে পারেন। পুরুষ যে এ কাজ করিতে পারেন না, তাহা নয়। তবে, পুরুষ ত ছেলেকে ভাত মাখিয়া খাওয়াইতে কি রাত্রি প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩০ { ২৩শ ভাগ, ২য় খং জাগিয়া সেবা করিতেও পারেন ; তবু মাতাকেই এই কাজ করিতে হয় কেন ? আসল কথা এই, যে, বহির্জগতেও মাতৃস্নেহের এরূপ কাৰ্য্যক্ষেত্র আছে, যেখানে পুরুষেরা এখনও বিশেষ-কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই । মদ্যপ পিতা পুত্র ও স্বামীর অত্যাচারে ও অবহেলায় রমণীর সোনার সংসারই ছাই হইয়া যায় । পুরুষ এখানে নিজ সৰ্ব্বনাশের সঙ্গে সঙ্গে রমণীরও সৰ্ব্বনাশ করে । রমণীর যদি রাষ্ট্রীয় অধিকার থাকে, তবে তিনি দেশ হইতে এই বিয চিরতরে দূর করিয়া দিতে পারেন। বৰ্ত্তমান জগতে আমেরিকার সম্মিলিত রাষ্ট্রে ও অন্যান্য অনেক দেশে মদ্যপানের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম হইয়াছে, মেয়েরাই তাহার প্রধান উদ্যোগী, এবং সে সংগ্রামে বহু স্থলেই তাহারা জয়ী হইয়াছেন । আমরা মুখে যাহাই বলি না কেন, দরিদ্র রমণীকে পেটের দায়ে ঘর ছাড়িয়া কলে কারখানায় কয়লাখনিতে ও পথে ঘাটে অন্ন উপার্জন করিতে যাইতে সকল দেশেই হয় এবং হুইবে । কিন্তু ইহাদের স্বার্থের দিকে চাহিবার অধিকার যদি ইহাদের ও অন্য নারীদের না থাকে, তবে দুৰ্ব্বল দেহ ও অধীন মনের ফলে বহু লাঞ্ছনা ভোগ ইহাদের করিতে হইবে। মেয়েদের রাষ্ট্রীয় অধিকার থাকিলে দুৰ্ব্বল নারীর দেহমন লজ্জা-সন্ত্রম এবং জাত ও অজাত সন্তানের দিকে মেয়েরা জাগ্রত দৃষ্টি রাখিতে পারিবেন । বহু দেশে মেয়েরা ইহা করিতেছেনও ; কারখানার মেয়েদের জন্য ইংলণ্ড, আমেরিকা ও ফ্রান্সের মেয়েরা অনেক সুবিধা করিয়া দিয়াছেন। নিউজীলণ্ডে প্রস্থতির ও শিশুর ধাত্রী, শুশ্ৰুষাকারিণী, চিকিৎসক এবং ঔষধ ও খাদ্য সরকার হইতে কিছুদিন পর্য্যস্ত দেওয়া হয় । পৃথিবীতে দেশে দেশে কালে কালে বহু সমরানল জলিয়াছে। রাষ্ট্র কি বাণিজ্য-যন্ত্রের স্বার্থে এই আগুনে পুরুষ নিজে পুড়িয়া মরিয়াছে, কত শত শত মায়ের সোনার সংসার ছারখার করিয়া তাহারা তাহীদের অভিশাপ কুড়াইয়াছে । যুদ্ধ-যন্ত্রের পেষণে শুধু যে মায়ের সস্তান, ভগিনীর ভ্রাতা, পত্নীর স্বামী ও কন্যার পিতা পিষ্ট হইয়া মরিয়াছে তাহা নহে, রমণীর দেহ মন ও লজ্জা-সন্ত্রম বহু লাঞ্ছনা সহ করিয়াছে ; তাহার উপর তাহাকে একই