পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪থ সংখ্যা ] তিনি পরিষ্কার করিয়া বুঝাইবার চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, উভয় সম্প্রদায়েরই লোকের বুঝা উচিত, যে, কেহ কাহাকেও নিমূল করিতে পারিবে না। হিন্দুরা মুসলমানকে নিমূল করিতে চাহিলে, যখন মহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধুদেশে পদার্পণ করে, তখন করা উচিত ছিল ; মুসলমানরা হিন্দুকে ধ্বংস করিতে চাহিলে তাহারা যখন ভারতে প্রবলতম ছিল, তখন করা উচিত ছিল । অতএব এখন প্রত্যেক সম্প্রদায়কে সকলের জন্য স্বরাজের চেষ্টা করিতে হইবে, নিজের প্রভুত্ব ও অন্তের দাসত্বের জন্য নহে। মুসলমান হিন্দুর মনে এই বিশ্বাস জন্মাইয়া দিন, তিনি বিদেশী মুসলমানেরও আক্রমণে বাধা দিবেন ; হিন্দু ও মুসলমানের মনে এই বিশ্বাস উৎপাদন করুন, যে, হিন্দুর সংখ্যাধিক্যের মানে মুসলমানের দাসত্ব নহে। “আমার নিজের কথা এই, যে, আমি বৰ্ত্তমান প্রভুদের পরিবর্তে বরং হিন্দুর দাসত্ব করিতে রাজী আছি ; কারণ তদ্বারা আমার স্বধৰ্ম্মী পচিশ কোটি লোকের দাসত্ব নিবারণ করিতে পারিব,— যাহাদের দাসত্ব এবং ইউরোপীয় সাম্রাজ্যপূজা একার্থক।” ংস্কৃত কলেজ ও তাহার অধ্যক্ষতা আমাদের বর্তমান জাতীয় জীবনের ভিত্তি প্রাচীন ভারতীয় জীবনের উপর স্থাপিত এবং তাহা হইতে বিবৰ্ত্তিত। বৰ্ত্তমানকে বুঝিতে হইলে, তাহার শ্রেষ্ঠ ংশকে সংরক্ষিত, বিকশিত ও বৰ্দ্ধিত করিতে হইলে অতীতের শ্রেষ্ঠ অংশকেও জানিতে বুঝিতে হইবে। বৰ্ত্তমানে মন্দ যাহা, তাহ বর্জন বা পরিবর্তন করিতে হইলেও, তাহার মূল বা বনিয়াদ প্রাচীনের কিছুর মধ্যে আছে কি না, দেখিতে হইবে । অতএব, আমাদের অতীতকে জানা কেবল যে ইতিহাস রচনার জন্য প্রয়োজন তাহা নহে, আমাদের সমগ্র সভ্যতার সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্যও আবশ্যক, তাহা ভাল করিয়া বুঝিবার জন্যও আবশ্যক। এই অতীতের সাক্ষ্য প্রাচীন ধ্বংসাবশেষে,প্রাচীন মুদ্রা প্রভৃতিতে আছে ; কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক আছে প্রাচীন সাহিত্যে । সুতরাং আমাদের প্রাচীন সাহিত্যের অনুশীলন যে একান্ত আবশ্যক তাহাতে সন্দেহ নাই। সাহিত্য শব্দটি আমরা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করিতেছি । পালি সাহিত্যের পুনঃ পুনঃ উল্লেখ না করিলেও তাহার অনুশীলনও আমাদের অভিপ্রেত । বাংলা দেশে যে-সকল টোল আছে, তাহাতে সংস্কৃতের চর্চা হয় বটে। কিন্তু টোলগুলি পরস্পরের সহিত বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে। এক-একটি টোলে একটি বিবিধ প্রসঙ্গ—সংস্কৃত কলেজ ও তাহার অধ্যক্ষতা (tRసి مستمه ماما سیسی سی বা দুটি বা তিনটি বিষয়ের অধ্যাপনা ২১ জন অধ্যাপক স্বতন্ত্র ভাবে করেন । কোথাও কোথাও এক-একটি বিষয়ের গভীর ও বিশুদ্ধ জ্ঞান ছাত্রেরা লাভ করে, কোথাও কোথাও তাহাও করে না । কিন্তু একএকটি বিষয়েরও ভাল পুস্তকসংগ্রহ টোলগুলিতে কচিৎ দৃষ্ট হয়। তা ছাড়া, যেখানে ব্যাকরণ অধীত হয়, তাহা ব্যাকরণের জন্যই হয় ; স্মৃতি বা কাব্য বা ন্যায়ও এই প্রকারে স্মৃতি বা কাব্য বা ন্যায়ের জন্যই অধীত হয়। একটি বা একাধিক বিষয়ের জ্ঞানের আলোকপাত অপর বিষয়গুলির উপর প্রায় হয় না, সকল বিষয়গুলির জ্ঞানের পরস্পরসাপেক্ষত উপলব্ধ ও প্রদর্শিত হয় না, এবং সমুদয়ের জ্ঞানের সমষ্টি দ্বারা সমগ্র অতীতকে জানিবার বুঝিবার সমালোচনা করিবার ও অতীতের গর্ত হইতে রত্ব উদ্ধার করিবার চেষ্টা হয় না । মু'জিয়মে বিলুপ্ত প্রাণীর কঙ্কাল বা বিলুপ্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ-দেহের অংশবিশেষের প্রস্তরীভূত নমুনা রক্ষিত হইয়া যেমন অশিক্ষিতেরও কৌতুকাবহ হয়, আমরা সংস্কৃত পালি প্রভৃতি সাহিত্যকে তদ্রুপ কিছু মনে করি, এ ধারণা যেন কাহারও না হয়। কেন না, আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে জ্ঞানের, সাত্ত্বিকতার, আধ্যাত্মিক অমুভূতির, এরূপ অনেক নিদর্শন আছে, যাহা এখনও কোথাও অতিক্রান্ত হয় নাই । এই-সকল কারণে, এমন অন্তত: একটি বিদ্যাপীঠ থাকা দরকার যেখানে প্রাচীন সাহিত্যের সকল শাখা অধীত হইবে, তাহার অধ্যাপনার জন্য যোগ্য অধ্যাপকসকল থাকিবেন, এবং সকল শাখার সমুদয় মুদ্রিত ও অমুদ্রিত পুস্তক যথাসম্ভব সংগৃহীত ও সংরক্ষিত হইবে। কলিকাতা সংস্কৃত কলেজ এরূপ একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে না হইলেও তাহাকে আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যাইতে পারে। যে-সব কলেজে পাশ্চাত্য নানা বিদ্যার সহিত সংস্কৃতও অধীত হয়, তথায় সংস্কৃতের গভীর ও ব্যাপক জ্ঞান লব্ধ হইতে পারে না । কলিকাতা-বিশ্ববিদ্যালয়ও স্বয়ং আর দশটি বিষয়ের অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে, আমরা সংস্কৃতের যেরূপ অমুশীলন ও তাহার যেরূপ পুস্তকসংগ্রহের কথা বলিতেছি, তাহা করিতে পারেন না। সংস্কৃত কলেজেও কেবল মাত্র সংস্কৃতজ্ঞ প্রাচীন ধরণের পণ্ডিতমণ্ডলী থাকিলে চলিবে না । তাহার কারণ, যাহার কেবল সংস্কৃতেরই চর্চা করিয়াছেন, তাহাদের জ্ঞান গভীর ও স্বস্ববিষয়ে ভ্রমপ্রমাদশূন্ত হইলেও, আধুনিক জগতের জ্ঞান দ্বারা উদ্ভাসিত নহে। অন্য দিকে আবার প্রাচীন ধরণের পণ্ডিতেরাও একান্ত প্রয়োজনীয়। অধ্যাপক টিব ( Thibaut ) একবার মহা