পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] ওখানে যেতে হবে ? না, আমার দেখিবার তেমন ঔৎসুক্য নাই । এই বিবাহ-উৎসবটা আমার সমস্ত স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া দিয়াছে। আমি এখন স্বপ্ন দেখিতে চাহি । এই যে, উহার খুব কাছে আসিয়া পড়িয়ছে ; আমাদের সন্মুখ দিয়া চলিয়াছে। মিশরীয় শোভাযাত্রার মতো কতকগুলা ডাণ্ডার আগtয় একপ্রকার হাত-পাখ । বড় বড় অতিপত্র বিভব-আড়ম্বরের উদ্দেশ্যে ভরা-রীত্রিকালেও বর-কস্তার মাথার উপর খুলিয়া ধরা হইয়াছে । মশালের পরিবর্তনশীল আলোকে, জ্বলন্ত ডালপালার অনলশিখায় লোকদিগকে দেখা যাইতেছে, উহাদের পরিচ্ছদ দেখা যাইতেছে। স্বন্দর গ্রীবাদেশ প্রায় অনাবৃত রাখিয়া, স্যামল বঁধের উপরে যদুচ্ছ-ক্রমে একটা সাদ। মসলিনের চাদর নিক্ষিপ্ত হইয়াছে : ধনুকের মতে বাক বক্ষদেশ, শীর্ণ কাট-দেশের উপর বিন্যস্ত রহিয়াছে ; আঁটপাট ধূতি উরোতের উপরে লাগিয়া আছে । ভারতের রূচি অনুসারে পোষাক-পরিচ্ছদ দৃষ্টি-আকর্ষক বিচিত্র উজ্জ্বল বর্ণে রঞ্জিত । বর-কনে হাত ধরাধরি করিয়া কিংবt কটিবন্ধে কটিবন্ধে জড় জড়ি করিয়৷ রহিয়াছে ; দেখিলে মনে হয় যেন প্রেমের জ্বলন্ত বাসন-মদে প্রমত্ত, চীৎকার কোলাহল ও বাজনা-বাদ্যে প্রমত্ত। উহারা উন্মত্তভাবে গান গাহিতেছে, মাথা পিছন দিকে ঝুঁকিয়া আছে ; বড় বড় মুখের ‘ই’ উন্মুক্ত। নিকট হইতে শুনিলে, উহাদের গানের তীব্র স্বরলহরীতে কান যেন ফাটিয়া যায়... না, বিবাহ-উৎসব দেথিবীর জন্য উহাদের পিছনে পিছনে যাইতে বৌদ্ধযুগের সাজ ها هوان আমার ইচ্ছা নাই। উহাদিগকে একেবারেই যদি না দেখিতাম ত ভাল হইত। কারণ আমার স্বপ্নের যে “মোহিনী” ছিল তাঁহ খুবই বিরল এবং বড়ই মধুর । আমি সত্যসত্যই যেন আপনাকে ক্ষুদ্র শিশু বলিয়া উপলব্ধি করিয়ছিলাম, সেই স্বমধুর, অনিৰ্ব্বচনীয় প্রথমগ্রীষ্মরজনীর ধারণাগুলি আবার ধরিতে পারিয়াছিলাম। এখন আমি আবার যাহা হইয়াছি—এবং পূৰ্ব্বে যাহা কিছু হইয়া গিয়ছে,— এই উভয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। এখন এই বেঞ্চির উপর বসিয়া থাকিয়াই -সেইসব বিলুপ্ত-স্মৃতি আবার ধরিতে ইচ্ছা করিতেছি... অসম্ভব! উহাদের শরীরের মুগনীভিমিশ্রিত গন্ধ অtকাশকে ক্ষুদ্ধ করিয়া তুলিয়াছে ; উহাদের শব্দ কোলাহল, সমস্তই ভাসাইয়া লইয় গিয়াছে । ** আমার দেশের ও শৈশবের ক্ষুদ্র স্বপ্নটি অন্তৰ্হিত হইয়াছে। অামার মাথার ভিতর তবে আর কি অবশিষ্ট রহিল ? আমার জীবন-প্রভাতের যাহ-কিছু নবীন, যাহা-কিছু মধুর সমস্তই চিরকালের মতে শেষ হইল।—এখানে ইছা ত ভারতভূমি ; এখন আমি আছি ভারতের মধ্যে, শুমল-বক্ষেীবিশিষ্ট ভারতের মধ্যে, কালো সুন্দর মখমল-নেত্র ভারতের মধ্যে—উত্তপ্ত, উদীম-উদ্ভিজ্জ-শালী, দীপ্তি-মহিমান্বিত ভারতের মধ্যে । ...বেশ । তবে আমি উহাদিগকেই অনুসরণ করিব, আচ্ছা বিবাহউৎসবটা দেখিতে যাইব ••• متح- بیبیست تخمیر ( সমাপ্ত ) শ্ৰী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বৌদ্ধ যুগের সাজ৷ সে-কালে নানারকম শাস্তি দেওয়ার প্রথা ছিল । যেমন— দোষীকে হাটু পর্য্যন্ত মাটিতে পুতে ডালকুত্তা দিয়ে খাওয়ান হ’ত, হাতীর পায়ের তলায় ফেলে দেওয়া হ’ত, সাপের মুখে ছেড়ে দেওয়া হ’ত, পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দেওয়া ও বুকে পাথর বা গলায় কলসী বেঁধে জলে ডুবিয়ে দেওয়া হ’ত । আড়াই হাজার বছর আগে যখন বুদ্ধদেব তার অহিংসা ধৰ্ম্ম প্রচার করতেন, তখন আবার যে-রকম শাস্তি প্রচলিত ছিল তা অতি অদ্ভুত ও নির্দয়তার পরিচায়ক । তার বিবরণ আমরা বৌদ্ধ-গ্রস্থে ( যেমন মঝ ঝিম নিকায়ে ১৩ স্বত্তে ও অঙ্গুত্তরনিকায়ে ত্ৰিকনিপাতে ) পাই । ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষুদের ধৰ্ম্মেপদেশ দিতে দিতে বলেছেন—“দেখ ভিক্ষুগণ, এই . যে লোকে সিদ কাটে, গ্রাম লুঠ করে, দল বেঁধে ডাকাতি করে, রাহাজানি করে, সামাজিক নানাপ্রকার উপদ্রব করে—এর মানে কি জান ? এর মানে হচ্ছে, সেইসব লোক একটা বদ-ইচ্ছ। পূর্ণ করে নিজেদের খুলি করে। কিন্তু এতে হয় কি ? রাজা যখন তাদের উপদ্রব টের পেয়ে তাদের ধরে নিয়ে যান, তখন বিচারে তাদের নানারকম শাস্তির ব্যবস্থা করেন । কাউকে চাবুক বা বেত, কিম্বা ছোট ডাও (“অন্ধদণ্ড কেহি”,—আধুনিক পুলিশের রুল) দিয়ে তাড়না করেন, কারো বা হাত অথবা পা এবং হাত পা দুই-ই ছেদন করে দেন, কারো কারো বা কান নাক অথবা কান নাক দুই-ই কেটে ছেড়ে দেন । রাজা আর কি করেন ? “বিলঙ্গথালিকং” করেন, “সস্থমুণ্ডিকং” করেন, “রাহুমুখং” করেন, “জ্যোতিমালিকং” করেন, “হথপজ্জোতিকং” করেন, “এরকবত্তিকং" করেন, "চারকবাসিকং” করেন, “এঞ্জেয়কং” করেন, “বলিসমংসিকং” করেন, “কহাপণং" করেন, “খারায়তচ্ছিকং” করেন, *পলিধপরিবত্তি কং” করেন,“পলালপীঠকং” করেন; আবার কাউকে বা গরম তেলে ভাজেন, কাউকে কুকুর দিয়ে খাওয়ান, কাউকে শূলে দেন, কারো বা মাথা কেটে দেন । এইসব দণ্ডে কেউবা মরে, কেউ বা মরণ-দুঃখ পায় । এই হরেক রকম শাস্তির হরেক রকম দুঃখ লাভ করে। এই দুঃখ পাওয়ারও কারণ ঐ নিজেদের খুসি হওয়ার চেষ্টা করা ।” বলা বাহুল্য যে “বিলঙ্গথালিক” হ’তে “পলালপীঠক” পৰ্য্যন্ত সবগুলি একটি একটি সাজার নাম । সেগুলি কিরকম করে দেওয়া হ’ত তার একটা বিবরণ :