পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৯৬ জোড় লাগিয়া যায়, তেমনি সুরেশ্বরের সদ্য-অপমানজনিত যে ক্ষত এই দুইটি তরুণীর মৰ্ম্মস্থলে ছিল তাহ একত্র হইবামাত্র দুইটি চিত্তকে যুক্ত করিয়া রস-প্রবহন আরম্ভ হইয়া গেল। তাই মাত্র অৰ্দ্ধঘণ্টা কাল পরেই এই দুইটি নবাহরাগিণীর মধ্যে নিম্নলিখিতরূপে কথাবার্তা হওয়া সম্ভবপর হইল । স্বমিত্র। সন্তোষপ্রফুল্ল মুখে বলিল, “তোমাকে দেখেই ভাই মাধবী, এমন একটা ভালবাসা পড়ে গিয়েছিল যে কি বলব! তাই তুমি যখন নিজের পরিচয় লুকোবার চেষ্টা করছিলে তখন ভারি রাগ হচ্ছিল । তার পর হঠাৎ তোমার ব্রোচের উপর দৃষ্টি পড়তেই সব কথা পরিস্কার হ’য়ে গেল ! কেমন ! এখন জাদ ত ?" মাধবী মুমিত্রাকে বাহুর মধ্যে জড়াইয়া ধরিয়া স্থিত মুখে বলিল, “ খুব জব ! কিন্তু এর চেয়েও অনেক বেশী জদ হব, যে-দিন তুমি আমাদের বাড়ী গিয়ে দাদার পাশে চেলী পরে’ দাড়াবে !” সুমিত্রা আরক্তমুখে মাধবীকে একটু ঠেলিয়া দিয়া বলিল, “যাও ভাই, তুমি বড় ফাজিল!” মাধী হাসিয়া বলিল, “জমার চেয়ে খরচ বেশী কবুলে ফাজিল হয়। আমি ভাই কথা জমিয়ে রাখতে পারিনে, খরচই বেশী করে ফেলি! তা তুমি যদি পছন্দ না কর ত মুখ বন্ধ করে গম্ভীর হয়েই থাকৃব।" বলিয়া মাধবী কপট গাম্ভীর্য্যের ভাণ করিল। স্থমিত্র। ব্যস্ত হইয়। সহাস্যমুখে কহিল, "না, ন, তোমাকে মুখ বন্ধ করে গম্ভীর হতে হবে না, কিন্তু তাই বলে’ যা’ তা’ কথা বোলো না ।" মাধবী তেমনি গম্ভীরভাবে বলিল, “এসব তুমি যা তা' কথা বল ?—দাদা তোমাকে ভালোবাসেন, এ যা' তা' কথা ?” “আঃ, আবার ঐসব কথা !" মাধবীকে পুনরায় একটু ঠেলিয়া দিল । “আচ্ছ, তবে থাক, আর বলব না, মুখ বন্ধ করলাম। চল, তোমাকে চরকা চালান শিখিয়ে দিই।" বলিয়া মাধবী উঠিয়া চরকা ও ডালা লইয়া ঘরের মেজেতে এক বলিয়া স্বমিত্রা প্রবাসী—ফাস্তুন, ১৩ee ডালের দুইটি ছিন্ন স্থল এবত্র মিলিত হইলে যেমন কলমের খান গালিচার উপর উপবেশন করিল। [ २●ल छां★, २ग्न १७ Ae eMAeeAeSAeMAeSAASAASAAAS স্বমিত্রাও আসিয়া তাহার পাশ্বে বসিল । চরকার বিভিন্ন অঙ্গগুলির ক্রিয়া ও কাৰ্য্য মাধবী একে একে স্থমিত্রাকে বুঝাইতে লাগিল। তাহার পর চরকার লৌহশল্যে একট। তুলার পাঞ্জ যুক্ত করিয়া লইয়া সে দ্রুতগতি ভূরে রাশি রাশি সুতা কাটিতে লাগিল । এত সহজে এরূপ স্থত। প্রস্তুভ হইতে দেখিয়া স্বমিত্রা বিস্ময়ে ও উল্লাসে অধীর হইয়া উঠিল । “কি চমৎকার মাধবী ! আমাকে শিথিয়ে দাও না, ভাই ! আমি পারব ?” মাধবী স্মিতমুখে বলিল, “দেশকে আর দাদাকে যে ভালবাসে তার হাতে চবুক ঠেকৃলেই সুতো বেরুবে। তুমি দাদাকে ভালোবাস, সুমিত্ৰা ?” সুমিত্রা মৃদু হাসিয়া বলিল, “আবার আরম্ভ হ’ল ? খুব মুখ বন্ধ করলে ত, মাধবী !” মাধবী চরকার! উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া ধীরে-ধীরে বলিতে লাগিল, “তোমাদের বাড়ীর জলের কলের প্যাচ ক্ষয়ে যেতে কখন দেখনি, স্বমিত্রা ? যতই টিপে দাও না কেন জল বেরোতেই থাকে । অবশেষে দড়ি না বাধলে আর জল বন্ধ হয় না। আমার মুখও যদি বন্ধ করতে চাও তা হ’লে দড়ি দিয়েই বেঁধে দাও । কিন্তু চবুকায় হাত দিয়ে আমি কখন মিথ্যে কথাও বলিনে, ফাজিল কথাও বলিনে। এই চবুক সম্বন্ধে আমি যে কথাটা বলব সেটা মন দিয়ে শোনে ৷” অল্পক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয় মাধবী আবার বলিতে আরম্ভ করিল—“এই চরকাটি দাদার অতিশয় যত্বের জিনিস, সুমিত্র । অনেক চরকা অনেক দিন ধরে বেছে বেছে এটি তিনি মনের মত করে নিয়েছেন । এ-চরকায় তিনি কাউকে হাত দিতে দেন না, কিন্তু তোমার হাতে এটি চিরদিনের জন্যে তিনি দান করেছেন। এ চবুকাটি তুমি যত্নে রেখে, আর কাজে লাগিয়ে।” তাহার পর পুনরায় কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া চরকা চালাইতে চালাইতে মাধবী ধীরে ধীরে বলিতে লাগিল— “তোমার ব্যবহারের শাড়ী করাবার জন্যে এই চরকায় দাদা এই কয়েক দিনে কত স্থতো কেটে রেখেছেন,স্বমিত্ৰা !