পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫২ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩০ ২৩শ ভাগ, ১ম খণ্ড বা সত্য সত্যই বিদ্বান বা সাধু, কেহ কেবল ঠকাইবার জন্য ফাদ পাতিতে আসিতেন। কেহ বুজরুগি দেখাইতেন, যোগবল মন্ত্রবল দেখাইতেন, আবার অনেকে ধরাও পড়িতেন, তখন ক্ষম ভিক্ষা করিতেন । সম্রাট, আচাৰ্য্যকেও যাচাই করিতে ছাড়েন নাই। আচাৰ্য্য সম্রাট-দত্ত হাতী ঘোড়া স্বীকার না করিয়া এত দূর পথ ক্টাটিয়া আসিয়াছিলেন, আবার রাজ-অতিথি হইয়াও ফতেপুরে দ্বারে দ্বারে মাধুকরী ভিক্ষণ করিয়াছিলেন এই দেখিয়া সম্রাট চমৎক্লত হইয়াছিলেন । তথাপি একদিন তিনি বলিলেন, “আমার এখন মন্দ সময় যাইতেছে । আপনি কোনওরূপ স্বস্ত্যয়ন ইত্যাদি করিয়৷ আমার গ্রহকষ্ট দূর করিতে পারেন কি ? আপনি যেরূপ আজ্ঞ করিবেন আমি সেইরূপ ব্যয় করিব।” আচাৰ্য্য বলিলেন, “রাজন, আমি জ্যোতিষ জানি না, চিকিৎসক নই, ভয় মন্ত্র জানি না, অতএব আমি কষ্ট দূর করিতে পারিব না। আমি এইমাত্র বলিতে পারি যে জীবমাত্রকে আপন আপন কৰ্ম্মফল ভোগ করিতে হয়, সৰ্ব্বজীবে দয়া করিয়া সিংহাসনে বসিয়া নিরপেক্ষ বিচার করিলে নিশ্চয় আপনার সকল কষ্ট দূর হইবে। আমি এইরূপ উপদেশ দান ছাড়া আর কিছুই পারি না ও পারিব না।” সম্রাট একদিন জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনাদের প্রধান তীর্থ কোন কোন স্থান। আচাৰ্য্য বলিলেন, “আমাদের অনেকগুলি তীর্থস্থান আছে ; কিন্তু শক্রন্থয়, গিরিনার, অৰ্ব্বদ্ধ পৰ্ব্বত, সমেত শিগর (পাশ্বনাথ পাহাড়) ও অষ্টাপদ শিখর ( কৈলাস পৰ্ব্বত ) এই কয়টি প্রধান তীর্থস্থান ।” একদিন সম্রাট আচাৰ্য্যকে আপন চিত্রশাল দেখাষ্টতে চাহিলেন ও সঙ্গে করিয়া লইয়। গেলেন । পথে এক প্রকোষ্ঠে গালিচ পতি ছিল, তাহ1র উপর দিয়! সকলকে যাইতে হইবে দেখিয়া আচাৰ্য্য নিশ্চল হইয়া দাড়াইলেন। সম্রাট বলিলেন, “আপনি আসিতেছেন না কেন ? গালিচ। ত পরিষ্কার, উহাতে কোনও জীব নাই।” আচাৰ্য্য বলিলেন, “রাজন, কেবল জৈনদের নহে, সকল সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীদের জন্য মসুস্থতিতে { অধ্যায় ৬৪৬ শ্লোক ] আদেশ আছে দৃষ্টিপূতং স্তসেৎ পাদম্ ; অতএব গালিচার নীচে কি আছে যখন দেখিতে পাইতেছি না তখন আমাদের এ-পথে হাটবার অধিকার নাই।” সম্রাট তৎক্ষণাং গালিচাতুলিতে আজ্ঞা করিলেন । ফরাসের গালিচা তুলিতেই দেখিতে পাইলেন তাহার নীচে সহস্ৰ সহস্র কীট রহিয়াছে। সম্রাট, এ ঘটনাকে আচার্য্যের একটি চমৎকার ( miracle ) বা অতিমাহুষিক ক্ষমতার নিদর্শন বিবেচনা করিলেন । পরে তাহাকে চিত্রশাল ও পুস্তকাগার দেখাইলেন । একদিন কথা-প্রসঙ্গে আচায্য বলিলেন, “একখানি ঘর-নিৰ্ম্মাণের সময় যেমন তাহার ভিত্তি প্রাচীর ও ছাদ এ তিনটিই ভাল করিতে পারিলে তবে ধরখানি দৃঢ় হয়, নতুবা হয় না, সেক্টরূপ মতুয়া জীবনে দেব গুরু ও ধৰ্ম্ম এক্ট তিনটি দৃঢ় করিতে পারিলে তবে মচয় নিভয় হঠতে পারে । দেব গুরু ও ধৰ্ম্মকে পরীক্ষা করিয়া গ্রহণ করা উচিত । ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে ও দর্শনে একই বস্তুকে নানা প্রকার নাম দিয়া ব্যাখ্যা করা হইয়াছে ; তাহাতে শব্দের ঝগড়া বিবাদ, কথা কাটাকাটি ছাড়া আর কিছুষ্ট নাই। ঈশ্বর ত জন্ম-জরা-মরণ রহিত । তাহার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ নাই । তাহার রাগ-দ্বেষ-রোগ-শোক নাই, তিনি অনন্ত মুখ ও আনন্দের আকর । তাহার নানা গুণ স্মরণ করিয়। তাহাকে লোকে দেব, মহাদেব, শঙ্কর, শিব, বিশ্বনাথ, হরি, ব্রহ্মা, পরমেষ্ঠা, স্বয়ড়, জিন, পারগত, ত্রিকালবিৎ, অধীশ্বর, শক্ত, ভগবান, জগৎপ্ৰভু, তীর্থঙ্কর, জিনেশ্বর, স্তাদ্বাদী, অভয়দ, সৰ্ব্বজ্ঞ, সৰ্ব্বদর্শী, কেবলী, পুরুষোত্তম, অশরীরী, বীতরাগ, ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করিয়া থাকে ” এই কথা-প্রসঙ্গে তিনি বলিলেন, “জৈন সাধুর পঞ্চ মহাত্ৰত গহণ কবিয় থাকেন, অর্থাং অহিংসা, সত্য, অস্থেধ, ব্রহ্মচৰ্য্য ও অপরিগ্রহ । তাহারা কেবল মাত্র ভিক্ষ করিয়া জীবন ধারণ করিয়া থাকেন ও সকল সময়ে আত্মচিন্তারূপ তপস্যা করিয়া থাকেন। . যাহার কৰ্ম্ম এইরূপ পবিত্র, যে আপনার ধর্শ্বে দৃঢ়, যাহার বিদ্যা আছে, যে অন্য ব্যক্তিকে উপদেশ দিবার উপযুক্ত, ও উপদেশ দিয়া থাকে, সেই গুরু হইবার উপযুক্ত ; ও বুদ্ধিমান জীবের এইরূপ গুরুর কাছে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত । ধন