পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] জয়ন্তী । లల్సి জয়ন্তী একত্রিংশ পরিচ্ছেদ হইলে মনসবদারের জয় নিশ্চিত, কারণ র্তাহার সৈন্ত মনসবদারের মৃত্যু শিক্ষিত, কতবার যুদ্ধ করিয়াছে ; বিহারীলালের সৈন্ত মনসবদার জলালুদ্দীন . হাতিমকে বাদশাহ ঘোষণা করিয়াই যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন। বিহারীলাল, জয়ন্তী, দুই জনেই তাহার শত্রু, দুই জনকেই বিনাশ করিতে হইবে । বিহারীলাল র্তাহার জীবন রক্ষা করিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু জয়ন্তীকে হরণ করিয়া তিনি জলালুদ্দীনকে কতজ্ঞতাপাশ হইতে মুক্ত করিয়াছিলেন । মনসবদারের বিবেচনাশক্তি তিরোহিত হইয়াছিল। মনে মনে তিনি জয়ন্তীকে বে কতবার খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিলেন তাহার সংখ্যা নাই । এত রকম উৎকট সঙ্কল্প র্তাহার চিত্তে উদয় হইতে লাগিল যে তাহা প্রকাশ করা অসম্ভব। কেমন করিয়া প্রতিশোধ পূর্ণ হইবে, কেমন করিয়া তিল তিল করিয়া পিশাচীকে হত্যা করিবেন ? শুধু হত্যা ? তাহা ত কিছুই নহে, মৃত্যুর অপেক্ষ স্ত্রীলোকের আরও গুরুতর শাস্তি আছে। জলালুদ্দীনের পৈশাচিক প্রকৃতি তাহাকে উন্মত্ত করিয়া তুলিল। কিন্তু জয়ন্তী ও বিহারীলাল ত এখনও তাহার হস্তগত হয় নাই । যুদ্ধ ত হইবেই, কিন্তু যুদ্ধের পূৰ্ব্বে কোন কৌশলে এই দুই জনকে ধরা যায় না ? : মক্‌দুম শাহের সহিত মনসবদার পরামর্শ করিলেন । বিহারীলালের সৈন্তসংখ্যা কত ? দুই হাজার হইবে । মনসবদারের এক হাজারের উপর সৈন্য মজুত, অন্যত্র হইতে সংগ্ৰহ করিলে আরও এক হাজার হইবে। তাহার কয় দিনে আসিয়া উপস্থিত হইতে পারে ? মকৃদুম শাহের অনুমান দুই দিনে সকল সৈন্ত একত্রিত করা যায় । অগত্য মনসবদার দুই দিন অপেক্ষা করিতে সম্মত হইলেন। সকল সৈন্য সংগৃহীত হইলে মনসবদার স্থির করিলেন রাত্রে বিহারীলালকে আক্রমণ করিবেন । প্রথমে পাচ শত সৈন্য লইয়া, বিহারীলালের বাগানবাড়ী ঘেরাও করিয়া, বিহারীলাল ও জয়ন্তীকে বন্দী করিয়া আনিবেন । বাকি সৈন্য পিছনে থাকিবে । যুদ্ধ চাষা, লাঙ্গল দেওয়া তাহাদের কাজ, ইতিপূর্বে কখন যুদ্ধ করে নাই । মনসবদারের হিসাব ও থবর পাকা হইলে কি হইত বলা যায় না, কিন্তু তাহার হিসাব সমস্তই ভুল । বিহারীলাল বা জয়ন্তী দুই জনের কেহই বাগানবাড়ীতে ছিলেন না। বাগানবাড়ীতে ছিল পুণ্ডরীক, তাহাও বাড়ীর ভিতর নয়, বাহিরে পাঁচ শত সৈন্ত লইয়া বনে লুকাইয়া ছিল। অবশিষ্ট সৈন্য লইয়া বিহারীলাল আর-এক দিকে গোপনে অবস্থান করিতেছিলেন । বিহারীলাল মনসবদারের সকল সন্ধান রাখিতেন, মনসবদার কিছুই জানিতেন না। অন্ধকার রাত্রে মনসবদার যখন পাচশে সৈন্য লইয়। বাগান-বাড়ী ঘিরিলেন, তখন সেখানে কাহাকেও খুজিয়া পাইলেন না । থাকিবার মধ্যে এক বুড়া আর বুড়ী । মনসবদার রাগিয়া তাহাদিগকে হত্য করিলেন । ওদিকে পুণ্ডরীক বন হইতে নিঃশবে বাহির হইয়৷ মনসবদারের পাচ শে সৈন্যকে বেষ্টন করিল। বাকী দেড় হাজার সৈন্য লইয়া বিহারীলাল মনসবদারের অবশিষ্ট সৈন্যের পথ রোধ করিলেন । অন্ধকারে অল্পস্বল্প যুদ্ধ হইল, কিন্তু উভয় পক্ষ প্রভাতের অপেক্ষা করিতে লাগিল । প্রভাত হইলে ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। যে চাষীদের মনসবদার তাচ্ছিল্য করিতেন, বিহারীলাল ও পুণ্ডরীকের শিক্ষায় তাহার উত্তম সৈনিক হইয়া উঠিয়াছিল। মনসবদারের সৈন্যেরা তাহাদের সম্মুখে হটিতে লাগিল। মনসবদার নিজে অগ্রসর হইয়৷ তাহাদিগকে উৎসাহিত করিতে লাগিলেন। দেখিলেন সম্মুগে পুণ্ডরীক । মনসবদার কছিলেন, “এ বানরটা কোথা হইতে আসিল ? ইহাকে কাটিয়া ফেল ।” পুণ্ডরীক অদ্ভুত কৌশলে তরবারির অগ্র ভাগ দিয়।