পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মোটেই আপশোয নেই, বরঞ্চ তুইও যদি হতিস তো বুঝতে পারতিস ডাক্তার-দাদা তোর কত আপন হ’য়ে পড়ে। আর মিস্ রয়ও ক্রীশ্চানের বড় পক্ষপাতী ; আমি যদিন বিলেতে থাকব চাইকি তোকে তাদের—” প্রিয়নাথ হঠাৎ চাহিয়া দেখিল ভৈরবের চক্ষু দুইটা ছলছল করিতেছে। প্রিয়নাথ একটু অপ্রতিভ হইয়া গেল । হাসিয়া বলিল, “তোর্কে কি আমি ক্রীশ্চান হ’তে মাথার দিব্বি দিচ্ছি, যে কাদ-কাদ হ’য়ে উঠলি ? তবে আমি যে শিগগিরই হ’তে যাচ্ছি এটা ঠিক, না হ’লে বুড়ে আঙ্গুলে পইতে জড়িয়ে মন্ত্ৰ আউড়ে মিস্ রয়কে বে করব ?— হঁ্যারে ভৈরবে ?” এটুকুতে কিন্তু ভৈরবের মনটাকে শাস্ত করিতে পারিল না । তাহার মনে হইতে লাগিল প্রিয়নাথ যেন তাহাকে দলে টানিবার চেষ্টা করিতেছে এবং এই কথাটাই আজি কয়েকদিন ধরিয়া নানাভাবে প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিতেছে । মনটা তাহার ভীত, সন্দিগ্ধ হইয়া পড়িল ; এবং এই সন্দেহ ও জাতিচু্যতির ভয় এতই প্রবল হুইয়া উঠিল যে আর মনটাকে মানান তাহার অসম্ভব হইয়া উঠিল । বামুনদাদার প্রতি ভক্তি, প্রেম, বিশ্বাস সমস্তই এক মুহূৰ্ত্তে রূপান্তরিত হইয়া এক দারুণ অবিশ্বাস, বিতৃষ্ণায় পরিণত হইয়া গেল । ভৈরবের মনে হইতে লাগিল যে এ স্থানটাতে নিশ্বাস-বায়ুর অভাব ঘটিতেছে । - ভৈরব দুই দিন অন্যমনস্ক ভাবে পাগলের মত কাটাইল । তৃতীয় দিন রবিবার ছিল ; প্রিয়নাথ সকালে উঠিয়া দেখিল ঘরটা শূন্ত পড়িয়া আছে—‘ভৈরবে নাই। প্রিয়নাথের অন্তরে একটু আঘাত লাগিল ; কিন্তু সেদিন রবিবার-মিলন-আশার আনন্দ লইয়াই সে উঠিয়াছিল, এই ক্ষুদ্র বিচ্ছেদটির দিকে তেমন মন গেল না । ( t ) ভৈরবের অস্তরে অন্তরে একটা ঝড় বহিতেছিল, তাহাই যেন ধাক্কা দিয়া তাহাকে লইয়া চলিল। সে ষ্টেশনের অভিমুখে চলিল, পহুছিয়া একটা রাস্তার উপর অঙ্কমনস্কভাবে বসিয়া রহিল। যখন গাড়ী আসিল তখন একটা 8 ግ–> $ ভৈরবে NDSలS কামরায় উঠিয়া বসিল-টিকিট করিবার কথাট। তাহার মনেও পড়িল না। গাড়ী চলিতে লাগিল । কখন ঘুমাইয়া পড়িয়ছে। হঠাৎ কানের কাছে ঠকৃঠক শব্দে জাগিয়া উঠিল— “ििक, ििकं ?” ভৈরব পকেটে হাত দিতে যাইতেছিল, মনে পড়িয়া গেল টিকিট কেনা হয় নাই; টিকিট-বাবুর মুখের পানে ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়৷ রহিল । বেশি কথা জিজ্ঞাসা করিবার সময় ছিল না, টিকিটকালেক্টর দরজা খুলিয়া ভৈরবকে নীচে নামাইয়া ফেলিল । পরমুহূৰ্ত্তে গাড়ী ছাড়িয়া দিল । আবার প্রশ্ন হইল, “টিকিট ?” ভৈরব উত্তর দিল, “ভুলে গেছি।” “ভাড় দাও।” “কত ?” টিকিট-কালেক্টর একবার চকিতে এদিক-ওদিক দেখিয়া লইল, বলিল, “কোথা থেকে আসছিস ?—ত যেখান থেকেই আসিস জংশন থেকে চার্জ হবে, রাখ দুটো টাকা ।” টাক বাহির করিতে ভৈরব পকেটে হাত দিল ; হাতটা পকেটের মধ্য দিয়া বাহিরে আসিয়া পড়িল । ভৈরব কঁাপিতে কঁাপিতে বসিয়া পড়িল । আদায় হওয়ার কোন আশা নাই দেখিয় চাপা গলার বদলে টিকিট-কালেক্টর হুঙ্কার করিয়া উঠিল—দম্বাজি হচ্ছে আমার সঙ্গে, দে এক্সেস ফেয়ার, পুলিস—” একটু জনতা হইয় পড়িল, একজন পাস্ত্রী-সাহেব গাড়ী হইতে নামিয়াছিল, ভীড়ের মধ্যে আসিয়া প্রশ্ন করিল, “কি হইয়াছে বাবু ? টিকিট কিনে নাই বুঝি ?” সঙ্গে সঙ্গে ভৈরবের কত্তিত পকেটের ভিতর সংবদ্ধ হাতথানা দেখিয়া ব্যাপারট। অম্বুমান করিয়া লইল, এবং জিজ্ঞাসা করিল “কত চাহি, ইহার তো পকেট কাট পড়িয়াছে ।” টিকিট-কালেক্টর অাড়ে চাহিয়8একটু রসিকতা করিয়া বলিল “হ্যা এবার এও কাটা পড়বে, তুমি বঁাচাচ্ছ নাকি ? তা' হ'লে রাখ দু টাকা ।