পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃ ó ു--പ്പു শীতের সন্ধ্যার মান অন্ধকার তখন পৃথিবীর বুকের উপর তার জমাট বাসা বাধতে আরম্ভ করেছে। সেই মৌনতাকে আরও গাঢ় করবার জন্তে দু’একটি করে’ তারা কুয়াসার ভিতর থেকে লাজনক্স মৌন বধুর মুখের মত ফুটে উঠছিল। চারিদিকেই যেন বেশ একটা নীরবতা পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। আপিস থেকে বাড়ী ফিরেই নিজের নির্দিষ্ট ঘরে ঢুক্তেই হঠাৎ চমকে উঠলাম। জানলার কাছে দাড়িয়ে যুথিক । দেখে বোধ হ’ল সে কাদছে। আমার পা আর অগ্রসর হতে চাইলে না। বহুদিন পরে আমার ঘরে ঢুকে তাকে কাদতে দেখে আমি একটু আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গেলাম । তার এ কিসের কান্না ! জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পেরেছিল তার জীবনের ব্যর্থতা। তাই বোধ হয় তার নারীজীবনের সমস্ত ব্যর্থতা একত্র ঘনীভূত হয়ে অশ্রীরূপে ঝরে পড়ছে। সে নারীজীবনের ব্যর্থ বোঝা নিয়ে বিমুখ বিশ্বের রুদ্ধ দ্বারে এসে বিফল হ’য়ে ব্যর্থতার চাপে কুয়ে পড়েছে। তাই বোধ হয় তার এই নিদারুণ হাহাকার । এম্নি সময় রমেশ-বাবুর স্ত্রী পিছন থেকে বলে’ উঠলেন—ছি বাবা ! ও যেন ছেলেমাহুষ, তোমার কি এই রকম করে’ এখানে দাড়িয়ে থাকৃতে হয়। লোকে কি বলবে বল দেখি। তোমার ত একটু বুদ্ধি-শুদ্ধি থাকা উচিত।—বলেই আর কোনো উত্তরের অপেক্ষ না করেই তিনি সেখান হ’তে চলে গেলুেন। র্তার এই স্থির গম্ভীর তীব্র তিরস্কার আমাদের চমক ভাঙিয়ে দিলে । তিনি যে কখন এসে আমাদের লক্ষ্য করছিলেন আমরা কেউ তা’ জানতে পারিনি। তার এই তীব্র শ্লেষ শুনে আমার কণ্ঠ অসীম লজ্জায় রুদ্ধ হ'য়ে গেল । আমিও আর কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। আর উত্তরই বা কি দেবো। আমি ত ভুলে ৪ কোনো দিন যুথিকার সম্বন্ধে অন্ত কোনো রকম ভাবনা ভাবতেই পারিনি। তবে কেন তিনি এরকম ধারণা মনের মধ্যে পোষণ করে তারই ঝাজে আমাদের দগ্ধ করে’ গেলেন । مدينة এই কথা শুনে যুথিকার শরীরের সমস্ত রক্ত তার মুখের প্রবাসী—শ্রাবণ, Oම්)වා• [ ২৩শ ভাগ, ১ম খণ্ড উপর এসে জমূল—অসীম লজ্জায়। সে নিজেকে কোনো রকমে সামূলে নিয়ে ঘর হতে বেরিয়ে গেল। আমি সমস্ত লজ্জার বোঝা নিয়ে নিৰ্ব্বাক্ হয়ে বসে পড়লাম। অদৃষ্টের একি কঠোর পরিহাস ! সব থেকে আমার বেশী লজ্জা বোধ হচ্ছিল যে রমেশ-বাবু যদি এই-সমস্ত শোনেন তা হ'লে তিনি কি মনে করবেন। তার সরল বিশ্বাসের কি এই রকম করে’ই প্রতিদান দেবো । কেন আমি একথার প্রতিবাদ করলাম না। আমার এই চুপ করে থাকাই ত আরো বেশী করে প্রমাণ করে দিলে আমাদের দোষ । কেমন করে রমেশ-বাবুর সাম্নে বের হ’ব এই লজ্জাই আমাকে বেশী করে পীড়ন করতে লাগল। নিজের জীবনের উপর একটা ধিক্কার জন্মে’ গেল । উত্তেজিত মস্তিষ্ককে একটু ঠাণ্ড করবার জন্তে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। রাত্রি তখন বেশ জমাট বেঁধেছে। চারিদিক থেকে ঝিঝি-পোকার তীব্র চীৎকার এক অপূৰ্ব্ব ঐক্যতানের স্বষ্টি করছে। মধ্যে মধ্যে সারমেয়ের দূরাগত চীৎকার সেই নিস্তব্ধতাকে আরো ভীষণ করে তুলছে। পৃথিবী যেন দিনের সমস্ত ভাবনার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্তে রাত্রির অন্ধকার কালো শাড়ীর ঘোমটায় মুখ ঢেকে ফেলেছেন । নিস্তব্ধতার মধ্যে এসে ভাবনা আরো বেশী করে আমায় জড়িয়ে ধরলে । আস্তে আস্তে ফিরে’ বারান্দায় আসতেই দেখলাম । রমেশ-বাবুর কাধের উপর মাথা রেখে দাড়িয়ে যুথিকা । রমেশ-বাবু আমাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে ডাকূলেন । অন্ধকারেও বেশ স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার অশ্রধারা যুথিকার মাথায় আশীৰ্ব্বাদের মত ঝরে পড়ছে। যুথিকাও র্তার বক্ষ অশ্রুসিক্ত করে তুলেছে। আমিও আমার উদ্বেলিত কায়াকে আর চেপে রাখতে পারলাম না। রমেশ-বাবুর অশ্র ঝরে পড়ে আমাদের দু’জনকে যেন একসঙ্গে আশীৰ্ব্বাদ করতে লাগল। আমরা তিনজনেই নিঃশব্দ নীরব। আমার মন যেমন একদিকে খুসি হয়ে উঠল রমেশবাবুর সাম্নে বের হবার লজ্জা হ’তে নিষ্কৃতি পেয়ে, তেমনি আর-একদিকে নিজেকে এই সংসারের অশাস্তির স্বষ্টি