পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8● সৌন্দর্ঘ্যের ঐশ্বর্ষ্যে পরম রমণীয়! কতটা সাধনা থাকলে যে মানুষ এমনভাবে দেহকে গ’ড়ে তুলতে পারে, শরীর-তত্ত্বে বিশেষজ্ঞ মিঃ ঘোষের তা বুঝতে আর বিলম্ব হ’ল না! মিঃ ঘোষ উচ্ছ্বসিত স্বরে বলে উঠলেন, “চমৎকার!” রতন আবার গায়ে জামা পরতে লাগল । মিঃ ঘোষ বললেন, “রতন, শুনেচি দারিদ্র্যের জন্যে তুমি একদিন আত্মহত্য করতে গিয়েছিলে । কিন্তু এই কি দারিদ্র্যের মূৰ্ত্তি ? রাজভোগেও যে এমন শরীর তৈরি হয় না!” রতন বললে, “মিঃ ঘোষ, শরীর তৈরির জন্যে রাজভোগ চাই, এটা হচ্ছে এদেশী পালোয়ানদেব মস্ত কুসংস্কার । অধিকাংশ কুলি-মুটের দিকে লক্ষ্য ক’রে দেখবেন, রাজভোগে-পুষ্ট ধনীদের চেয়ে তাদের দেহ কতটা তৈরি, সুগঠিত আর পেশীবদ্ধ ! কেবলমাত্র শারীরিক পরিশ্রমের গুণেই তাদের দেহ হয়েচে অমনধারা, অথচ তারা নিয়মিত, বিজ্ঞান-সম্মত উপায়ে ব্যয়ামহিসাবে কিছুই করে না, আর বেশীর-ভাগই খায় খালি ভাত আর. হন—বড়-জোর সেই সঙ্গে আলু-ভাতে বা অম্নিতরো একটা-কিছু। বাঙালীর দুৰ্ব্বলতার কারণ বলা হয় দারিদ্র্য । আমি তা মানি না। আসল কারণ, ব্যায়ামে অনিচ্ছা । সাধারণ গৃহস্থ-বাঙালী রোজ যা পায়, দেহ-গঠনের পক্ষে তাই যথেষ্ট । দামী খাবার কি অতিরিক্ত আহার শরীর পুষ্টির কারণ নয় ।” মিঃ ধোয বললেন, “তোমাকে দেখে আমারও তাই মনে হচ্চে । কিন্তু কথায় কথায় তুলে যাচ্চি, রতন, আজ কি তোমার চ। খেতে আপত্তি আছে ?” রতন বললে, “আমি নিজের পয়সায় চ খাই না । আপনি যখন খাওয়াতে চাইচেন, তখন আমার আপত্তি থাকৃবার কোনই কারণ নেই।” মিঃ ঘোষ ডাকলেন, “পূর্ণিমা !” ছাদের এক কোণের ধর থেকে মৃদুস্বরে উত্তর এল— “যাই বাবা !” মিঃ ঘোষ বললেন, "অম্নি এলে হবে না মা, বেয়ারাকে—ম, বেয়ার নয়, তুমি নিজেই আমাদের দুজনের জন্যে চা নিয়ে এস " প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩ s ২৩শ ভাগ, ১ম খণ্ড ാ میم میجہ عبے مہ দুজনে খানিকক্ষণ কোন কথা হ’ল না। স্বল্পভাষী মি: ঘোষকে রতুন যদি আগে থেকে চিনত তবে বুঝতে পারত যে, তাকে মি: ঘোষের বড়ই ভাল লেগেছে, নইলে তার সঙ্গে তিনি আজ কখনই এত বেশী কথা কইতেন না । বাড়ীর বাইরে মিঃ ঘোষ মুখ খোলেন খালি বিনয়-বাবুর কাছে, তাও তৃতীয় ব্যক্তির সাক্ষাতে লয় | একটু পরেই ছাদের ঘর থেকে চায়ের ‘ষ্ট্রে হাতে ক'রে একটি মেয়ে বেরিয়ে এল, তার বয়স সতেরো আঠারোর বেশী হবে না । মিঃ ঘোষ বললেন, “রতন, এই আমার মেয়ে পূর্ণিমা —এ-ছাড় সংসারে আমার আর কেউ নেই। পূর্ণিমা ইনি হচ্চেন রতনবাবু-আমার একটি নবীন বন্ধু । এর গায়ে যেমন, মনেও তেমনি জোর । ইনি গান গাইতে পারেন, কবিতা লিখতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন, অণর – ” পূর্ণিমা হেসে বললে, “আর-কি বাবা ? থামূলে কেন, আর কি পারেন ?” —“আর, কিছু বেচাল দেখলে আমাদের মুখের ওপরেই ইনি স্পষ্ট দু-কথা শুনিয়ে দিতেও পারেন!” পূর্ণিমা বললে, “তা হ’লে এরি মধ্যে আমার রীতিমত বেচাল হ’য়ে গেছে বাবা !" মিঃ ঘোষ বললেন, "কেন, এরি মধ্যে আবার কি বেচাল হ’য়ে গেল ? গরম-জলে চ দিতে ভুলে গেছিল বুঝি ?” পূর্ণিমা ঘাড় নেড়ে বললে, “ন, তা কেন, ট্রে নিয়ে আমার হাত জোড়া, তুমি পরিচয় করিয়ে দিলে, রতনবাবু আমাকে নমস্কার করলেন, কিন্তু আমি ওঁকে নমস্কার করতে পারুচি না তো !” মিঃ ঘোষ বললেন, “তাতে কি হয়েচে বাছ, রতনকে মন থেকে নমস্কার কর । বাইরে, কপালে হাত ছুইয়ে যে লোক-দেখানো নমস্কার, সে তো আমরা ভয়তার খাতিরে শক্রকেও ক'রে থাকি ! তার মূল্য কি ?” পূর্ণিমা হাসতে হাসতে বললে, “বেশ, আমি মন থেকেই নমস্কার করুচি। কেমন রতন-বাবু, আপনি