পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] A^A**_ళోటA^_* রাত প্রায় বারোটা বেঞ্জেছে । চুপ করে বসে আছি । চাদনী রাতটা ভারি স্বন্দর। পাশেই পরেশনাথ পাহাড়, আর এপাশ দিয়ে সাদা রাস্তা চলে গিয়েছে। সাদা র্কীকরগুলি চাদের আলোয় চক্চক্‌ করছে। খুব ভাল লাগছিল। দাদা বললে এইটেই গ্র্যাণ্ড, ট্রাঙ্ক, রোড। রাস্তার দিকে তাকালে অনেকদূর পর্য্যন্ত দেখা যায়, মনটাও যেন ওর সঙ্গে অনেকদূর চলে যায়। ইচ্ছে করছিল সেইখানে নেমে ঐ রাস্ত ধরে অনেকদূর পর্য্যন্ত বেড়িয়ে আসি। কত কালের এই রাস্তা, কত লোক এই পথে যাওয়া আসা করেছে। আমার মনে পড়ে গেল একটি গানের কয়েক লাইন :– "এ পথ দিয়ে কে আসে যায় কোন পানে— তা কে জানে, ৩ কে জানে । কেমন যে তার বাণী, কেমন হাসিখানি, যায় সে কাছার সহ্মানে— তা কে জানে, ৩ কে জ্ঞানে ৷” তার পর অনেকক্ষণ চপ করে বসে ছিলাম। দাদ। ঘুমিয়ে পড়েছিল । হঠাৎ শুনতে পেলাম বেহাগ মুরে চমৎকার বঁাশী বাজছে। ঠিক মনে হ’ল “আজি নিভয় নিদ্রিস্ত ভুবনে কে জাগে” গানটাই বুঝি কে বাজাচ্ছে ! এত সুন্দর বঁাশ শুনিমি কখনো । মুখ বাড়িয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না, বোধ হ’ল ওয়েটিংক্রমের পিছন থেকে আওয়াজ আসছে। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বঁাশ থেমে গেল। মনে হ'ল আরএকটু বাজ লে বেশ হ’ত। বৌদি বললে –“কে ভাই এমন মিষ্টি বঁাশী বাজাচ্ছে ? ভারি ভাল লাগৃছে।” খানিক পরে আবার বেজে উঠল বঁ।ণীতে...গানটা আমার ভারি প্রিয় :– “বিরহ মধুর হ’ল জাঞ্জি মধুরীতে ! গভীর প্লাগিণী উঠে বাঞ্জি বেদনাহে ।” মনটা হঠাৎ কেন জানিনে ভারি খারাপ হ’য়ে গেল । আমার মুথে চাদের আলো এসে পড়ছিল, বৌদির বার্থ, ছিল অন্ধকারে, আমি জানতাম না বৌটি জেগে আছে তখনে, আমি চোখ মুছছি দেখে বৌদি উঠে এসে আমার পাশে বলল, আমার হাত ধ’রে বললে—“কি পথের বাণী Sy হয়েছে ভাই ?” আমি বললাম—“কি জানি কেন হঠাৎ বঁাশী শুনে মনটা বড় খারাপ লাগছে ।” বঁাশী বেয়েই চলেছে। উঠে বস্লাম। মনে হ’ল বঁাশী যেন আমার জন্তেই বাজছে। কিন্তু যে বাজাচ্ছে তাকে তো দেখতে পেলাম না। কোথায় যে বাজছে তাওঁ ঠিক বুঝতে পারলাম না। হয়তো এই-ট্রেনেই কেউ বাজাচ্ছে। আমরা তো নেমে যাবে খানিক পরে, কিন্তু যে বঁাশী বাজাচ্ছে সে হয়তো আরও অনেকদূর চলে’ যাবে, তাকে দেখাও হবে না । অনেকক্ষণ পরে বঁাশী থামূল। শুয়ে পড়লাম চুপ করে', চোখে ঘুম আর এল না। বৌদি কিছুক্ষণ পরে আমি ঘুমিয়েছি ভেবে আমায় আদর করে’ উঠে গেল তার বাথে । কখন আর কেমন করে যে ভোর হয়ে এল কিছুই বুঝতে পারলাম না । চাদ তখন পশ্চিমদিকে ডোববার জন্যে ঝুকে পড়েছে, আর পূব দিক্ একটু একটু ফসর্ণ হ’তে সবে স্বরু হয়েছে । দাদা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বললে—“ঐ যা ! কোথায় এসে পড়েছি ? আমাদের যে সাড়ে বারোটার সময় নামবার কথা।” আমি বললাম—“আমরা তো সেই রাত থেকেই এখানে দাড়িয়ে রয়েছি।” দাদা মুখ বাড়িয়ে দেখলে সত্যিই তাই । সে নেমে খবর আনতে গেল কখন গাড়ী ছাড়বে। বৌদিকে তুললাম। দাদা ফিরে এসে বললে—“আপ লাইন এখনো রকৃড়, রয়েছে, ডাউন লাইন ক্লিয়ার হয়েছে। আমাদের গাড়ী বেলা আন্দাজ দুটোয় ছাড়বে, তিনটের সময় হাজারিবাগরোডে পৌছবে। মোটর ধরতে পারা যাবে না হয়তো। বরং এক কাজ করা যাক, এখনি একটা ডাউন ট্রেন আসবে, তাতে নিমিয়াঘাট ষ্টেশনে নেমে পরেশনাথপাহাড়টা বেড়িয়ে আসা যাক। আজকের চাদনী রাতটা পাহাড়ের উপরের ডাকবাংলোয় থেকে কাল হাজারিবাগ রওনা হওয়া যাবে সকালের প্যাসেঞ্জারে।-—বলে’ই সে কুলি ডেকে ভাড়াতাড়ি জিনিস নামিয়ে ডাউন ট্রেন ধরবার জন্যে ওপাশে পাঠিয়ে দিয়ে আমাদেরও নামিয়ে নিয়ে গেল ।