পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্য ] ( > ) দাদার সঙ্গে আমার • ছাড়াছাড়ি খুব ছোটবেলা হইতেই। দাদা থাকিতেন দেশে, আমি থাকিতাম কলিকাতায়—কাকার বাসায় । বাবা যেবার মারা যান, কাকা সেবার কলিকাতায় নূতন ওকালতির পসার খুলিয়। বসিয়াছেন। বাবার মৃত্যুতে আমার বিধবা জননী কাকাকে আমাদের ংসারের একটা বন্দোবস্ত করিয়া দিয়া যাইতে লিথিয়া পাঠাইলেন। কাক আসিয়া তাহার নূতন ওকালতি বুদ্ধি ফলাইয়৷ যে-বন্দোবস্ত করিলেন, তাহাতে মামা হইলেন ংসারের বড়-কর্তা, আর লেখাপড় খতম দিয়া দাদা হইলেন ছোট-কৰ্ত্তা। অবশ্য এই 'লেখাপড়া খতম দেওয়া' বিষয়ে মা’র খুব অপত্তি ছিল ; কিন্তু যিনি লেখাপড়া করবেন তাহার ইহাতে পূর্ণ সহানুভূতিই ছিল। আমার দাদা লোকটার নাকি এতটুকু বয়স হইতেই, লেখাপড়া হইতে সংসারের কাজেই বেণী উৎসাহ দেখা যাইত। তাহার নাকি পড়াশুনা করিতে গিয়া মাথা ধরিয়া উঠিত, কিন্তু লাউগাছের জাংল। দিতে, মাটি খুড়িয়া বেগুনের চার বুনিতে, বাজার থেকে অল্প পয়সায় বেশী জিনিষ আনিতে, বড়শী দিয়া পুকুরের মাছ ধরিতে মাথা বেশ হাল্কা ও পাৎলা হইয়া পড়িত । দাদার সম্বন্ধে এখবর কাকার অজানা ছিল না । স্বতরাং মাকে বুঝাইয়া ও র্তাহার আপত্তি জানাইয়া তিনি দাদাকে সংসারের কাজে লাগাইয়া দিলেন । দাদা এইরূপে সংসারের ছোট-কৰ্ত্ত হইয়া বসিলেন । আমার সম্বন্ধে কিন্তু কাকার খুব উচু ধারণা ছিল। আমি যে একজন তোখোড় ছেলে এবং বাচিয়া থাকিলে আমি যে একটা মানুষ হইব, একথা তাহার মুখে প্রায়ই শোন। যাইত। স্থতরাং মামা ও দাদাকে সংসারের কর্তৃত্বপদে অভিষিক্ত করার পর তিনি আমার হাত ধরিয়া মায়ের কাছে লইয়া গিয়া বলিলেন--"দেখুন বৌ-ঠাকুরুণ, অমলকে qళి శ్రీ কিন্তু আমি আমার কাছে রাখব, ও ওখানে থেকে লেখা পড়া করবে।” তাহাই হইল। তিনি আমাকে তাহার বাসায় লইয়। আসিয়া “সাউথ স্কবার্বান স্কুলে”র নবম শ্রেণীতে ভৰ্ত্তি করিয়া দিলেন । আমি মনোযোগ দিয়া পড়াশুনা করিতে লাগিলাম । সেই সময় হইতে দাদা দেশে, আমি কলিকাতায় । ( २ ) তার পর চার বংসর কাটিয়া গিয়াছে। অামার বয়স এখন বার বৎসর এবং আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়িতেছি । সেদিন আমাদের স্কুল বন্ধ । আমি পড়িবার ঘরে একলা বসিয়া কি ভাবিতেছিলাম মনে নাই। এমন সময় কণকীম। একখানা চিঠি-হাতে ঘরে ঢুকিঙ্গ বলিলেন— “তোর দাদার বিয়ে রে অমল ! এই চিঠি এয়েছে।”— বলিয়া চিঠিখানা টেবিলের উপর ফেলিয়া দিলেন । ংবাদটার সঙ্গে সঙ্গে কে যেন আমার ছোট বুকটাতে একরাশ আনন্দ পুরিয়া দিল । চিঠিখানা লইয়া পড়িতে লাগিলাম। চিঠি মা লিখিয়াছেন। বিবাহের আর ৩/৪ দিন বাকী, আমাদের সকলকে যাইতে লিখিয়াছেন। অধীর স্বরে জিজ্ঞাসা করিলাম—“কবে রওয়ানা হবে কাকীমা ?” কাকীমা বলিলেন—“তোর কাকা-বাবু আমুন, শুনবো এখন "—বলিয়া কাকীমা চলিয়া গেলেন। তখন সেই বিজন ঘরে চিঠি-হাতে বসিয়া আমি নুতন বৌদির কথা ভাবিতে লাগিলাম । “নৃতন বৌদি হয়ত ও-বাসার মণিমালার মত এতটুকু মেয়ে । চাদের মত মুখ, মেঘের মত চোখ, ফুলের মত রং । তাকে আমার খুবই ভাল লাগবে । আমি তার চেয়ে বড় হ'য়েও তাকে ছেলের মত প্রণাম করব ; তিনি আমার চেয়ে ছোট হয়েও আমাকে মায়ের মত বুকের কাছে টেনে নিয়ে আশীৰ্ব্বাদ করবেন।