পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দালানের পাশে বড় রোয়াকে ঝিয়েরা কচুর শাক কুটিতেছে, রান্না কোঠার পিছনে নতুন খড়ের চালা বাধা হইয়াছে, সেখানে এত রাত্রে পানতুয়া ভিয়ান হইতেছে —সে ছাদের আলিসার ধারে খানিকট দাড়াইয়া দাড়াইয়া দেখিল । ছাদে কেহ নাই, দূরের নদীর দিক হইতে একটা ঝিবৃঝিরে হাওয়া বহিতেছে, এ দুদিন যে কি ঘটতেছে তাহা যেন সে ভাল করিয়া বুঝিতেই পারে নাই –আজি বুঝিয়াছে। কয়েক দিন পূৰ্ব্বেও সে ছিল সহায়শূন্য, বন্ধুশুন্ত, গুহশূন্ত, আত্মীয়শূন্ত, জগতে সম্পূর্ণ একাকী, মুখের দিকে চাহিবার ছিল না কেহই । কিন্তু আজ তে তাহ! নয়, আজ ওই মেয়েটি যে কোথা হইতে আসিয়া পাশে দাড়াইয়াছে, মনে হইতেছে যেন ও জীবনের পরম বন্ধু | ম। এ সময় কোথায় ? --মায়ের যে বড় সাধ ছিল. মনসাপোতার বাড়ীতে শুইয়া শুইয়া কত রায়ে সে-সব কত-শাধ, আশার গল্প.মায়ের সোনার দেহ কোদলাতীরের শ্মশানের চিতাগ্নিতে পুড়িবার রাত্রি হইতে সে আশা-আকাঙ্ক্ষার তো সমাধি হইয়াছিল.মাকে বদ দিয়া জীবনের কোন উৎসব. তপ আকুল চোখের জলে চারিদিক ঝাপস হইয়। আসিল । বৈশাখী শুক্ল দ্বাদশী রাত্রির জ্যোম। যেন তাহার পরলোকগত দুঃখিনী মায়ের আশীৰ্ব্বাদের মত তাহার বিভ্রান্ত হৃদয়কে স্পর্শ করিয়া সরল শুভ্র মহিমায় স্বর্গ লক্টতে ঝরিয়া পড়িতেছে । ( २० ) কলিকাতার কৰ্ম্ম কঠোর, কোলাহল-মুখর, বাস্তব জগতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া গত কয়েকদিনের জীবনকে নিতান্ত স্বপ্ন বলিয়া মনে হইল অপুর । একথা কি সত্য গত শুক্রবার বৈশাখী পূর্ণিমার শেষরাত্রে সে অনেক দরের নদীতীরবর্তী এক অজানা গ্রামের অজনি গৃহস্থবাটীর রূপসী মেয়েকে বলিয়াছিল—আমি এ বছর দি আর না আসি অপর্ণা ?. ఏ ఏసి প্রথমবার মেয়েটি একটু হাসিয়া মুখ নীচু করিয়াছিল, কথা বলে নাই । অপু আবার বলিয়াছিল—চুপ করে থাকলে হবে না, তুমি যদি বলে আসবে, নৈলে আসবে না, সত্যি অপূর্ণ। বলে কি বলবে ? মেয়েট লজ্জারক্রমুখে বলিয়াছিল —বা রে, আমি কে ? মা রয়েচেন, বাবা রয়েচেন, ওঁদের–আপনি ভারি —বেশ, আসবো ন তবে । তোমার নিজের মুনি ইচ্ছে না থাকে— —আমি কি সে কথা বলেচি ? —ত হ’লে ? —আপনার ইচ্ছে যদি হয় আসতে, আসবেন—ন। হয় আসবেন না, আমার কথায় কি হবে ?... ও কথা ইহার বেশী আর অগ্রসর হয় নাই, অন্য সময় এ ক্ষেত্রে হয়ত অপুর অত্যন্ত অভিমান হইত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে কৌতুহলটাই তাহার মনের অন্ত সব প্রবৃত্তিকে ছাপাইয়া উঠিয়াছে-ভালবাসার চোখে মেয়েটিকে সে এখনও দেখিতে পারে নাই, যেখানে ভালবাসা নাই, সেখানে অভিমানও নাই । সেদিন বৈকালে গোলদীঘির মোড়ে একজন ফিরিওয়াল। চাপাফুল বেচিতেছিল, সে আগ্রহের সহিত গিয়া ফুল কিনিল । ফুলটা আম্রাণের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু মনের মধ্যে একটা বেদন সে সুস্পষ্ট অনুভব করিল, একটা কিছু পাইয়৷ হারাইবার বেদনা, একটা শূন্যতা, একটা খালিখালি ভাব ...মেয়েটির মাথার চুলের সে গন্ধটাও যেন আবার পাওয়া যায়। -- অন্যমনস্থভাবে গোলদীঘির এক কোণে ঘাসের উপর অনেকক্ষণ একা বসিয়া বসিয়া সেদিনের সেই বাত" আবার সে মনে আনিবার চেষ্টা করিল। মুখখানি কি রকম যেন ?--ভারী সুন্দর মুখ–কিন্তু এই কয়দিনের মধ্যেই সব যেন মুছিয়া অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে— মেয়েটির মুখ মনে আনিবার ও রাখিবার যত বেশী চেষ্ট করিতেছে সে, ততই সে-মুখ দ্রুত অস্পষ্ট হইয়। যাইতেছে। শুধু নতপল্লব কৃষ্ণতার চোখদুটির ভঙ্গী অল্প অল্প মনে আসে, আর মনে আসে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের মেয়েটব