পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᏄ8 অধিবাসীদের সঙ্গে পাড়ার কাহারও বিশেষ পরিচয়ের অবসর ঘটিয়া উঠে না। এমন প্রায়ই আসে যায়। সেবার শ্রাবণ মাসেই হইবে বোধ হয়—যাহারা আসিল তাহাদের সঙ্গে সামনের বাড়ীর আলাপটা সহসা ঘটিয়া গেল । উপলক্ষ্য সামান্য । ও-বাড়ীর একটি দশ-বারো বৎসরের ছেলে ঘুড়ি উড়াইতেছিল। বাড়ীর ছাদের আলিসায় ঘুড়িখানি বাধিয়া গেল । বালকের ক্ষুদ্র চেষ্টায় তাহ মুক্ত না হওয়াতে সে সাহায্যের জন্য তাহার দিদিকে ডাকিল । সে আসিয়াও অনেক চেষ্টা করিল, কিন্তু বিশেষ সুবিধা হইল না। তখন তরুণীর দৃষ্টি পড়িল এ বাড়ীর ত্রিতলের ক্ষুদ্র ঘরখানির ভিতর । একটি কুড়ি-বাইশ বৎসরের যুবক বসিয়া একমনে পাঠ মুখস্থ করিতেছিল । ওই ছাদের কলরব কোলাহল তাহার পাঠের কোনো ব্যাঘাত জন্মাইতে পারে নাই । তরুণী তাহার ভাইটিকে সে কথা বলিল । খোকা উচ্চৈঃস্বরে ইনকিল,—ও মশাই শুনছেন, ও মশাই । সে-চীৎকারে যুবকের তন্ময়ত ভাঙিল। মুখ তুলিয়৷ সে চাহিল। দেখিল, ছাদের আলিসীয় ভর দিয়া দুখানি ব্যগ্র উংস্থক মুখ তাহারই পানে চাহিয়া আছে। একটি বালকের, অপরটি তরুণীর । কল্পনার প্রসার যুবকের কতদূর ছিল জানি না, কিন্তু সেই মুহুর্তে তাহার মনে হইল—তরুণী সুন্দরী ; শ্রাবণ-অপরাহ্লে সুয্যের রক্তিমছটা সে সৌন্দর্য্যকে স্বপ্রকাশিত না করিলেও তাহা চাহিয়া কিছুক্ষণ দেখা যায়। হয়ত বা বয়সের স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম এই দেখিবার ব্যাকুলতাকে দমন করিতে পারে না । যাহা হউক, যুবক অস্তুরোধ রক্ষা করিয়া তরুণীর পানে আর একবার চাহিল। সে-মুখখানিতে তখন কৃতজ্ঞতার মধুর হাসি ফুটিয়া উঠিয়াছিল। সেই প্রসন্নতার স্পর্শ লাগিয়া তাহারও অন্তর উজ্জল হইয়া উঠিল। কিন্তু সম্ভাষণের ভাষা যখন ফুটিল, তখন তরুণী দৃষ্টির অন্তরালেই চলিয়া গিয়াছে । তারপর, প্রতিদিনই বালকটির ঘুড়ি লাটাই বহিয়া তরুণীকে সে ছাদের উপর ছুটাছুটি করিতে দেখিত। প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড চকিতদৃষ্টিতে তাহার ত্রিতলের নিস্তদ্ধ কক্ষখানির মৰ্ম্ম বিদ্ধ করিতে সে ক্রটি করিত না । উচ্চহাস্তের লহর তুলিয়া পাঠের ব্যাঘাত জন্মাইত। তবু যুবকের মনে হইত, নীরস পাঠ্য-পুস্তকের অন্তরালে যে লুপ্তপ্রায় সরস্বতী নদীটি এতকাল অন্তঃসলিলা বহিতেছিল, তাহার এই অকস্মাৎ প্রকাশ কিছুমাত্র বিচিত্র বা আশোভন নহে। ইহা পাঠেরও পরিপন্থী নহে । তপস্যার জগতে এমনি একটি কাম্যফল আত্মগোপন করিয়া থাকে, তপস্যা শেষে যাহ। বরস্বরূপ লাভ করিয়া তপস্বী ধন্য হয় । বালকটিকে মধ্যস্থ করিয়া আলাপ জমিল । কিন্তু না জমিলেই বুঝি ভাল হইত। কল্পনায় যাই অনায়াসলন্ধ ছিল, বাস্তবের স্পর্শে তাহাই দুরাশায় পরিণত হইল । দুইটি মিলন-তৃষাতুর অস্তরে ধর্মের গণ্ডী একটি উচ্চ প্রাচীর তুলিয় জগতের কঠোরত্ব বুঝাইয় দিল । যুবক কিন্তু মরিয়া হইয়া উঠিল । তরুণীকে লাভ করিতে সে যে-কোনে! উপায় অবলম্বন করিতে মনস্ত করিল। পিতা ছিলেন না, ভাইয়ের অভিভাবক। কিন্তু তাদের সাম্নে এ কথা বলা যায় না। বৌদিদিদের সুপারিশ ধরিল । বড়টি পরিহাস করিয়া বলিল,—ঠাকুরপো কি স্বয়ম্বর হবে না কি ? ছোট বলিল,—কিন্তু ওরা যে খৃষ্টান । যুবক বলিল,—খৃষ্টান নয়, ব্রাহ্ম । ওরাও হিন্দুদুজনে ঘৃণায় নাসিক কুঞ্চিত করিয়া কহিল,—ওম, ছি ছিছি ! তা কি হয় ? —কেন হয় না ! দোষ কি ? ছোট বলিল,—ত ঠাকুরপোর ত এখন একটি মেম টিচারই দরকার। পড়|-টড় বলে দেবে। ক্রুদ্ধ হইয়া যুবক বলিল,—কি যে ঠাট কর! দাদাদের বলবে কি না ? উভয়ে খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। সে হাসি আর থামিতে চাহে না । যুবক রাগ করিয়া উঠিয় দাড়াইল ।