পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

。S"や প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড মুখের দাড়ি-গোফ সে গাম্ভীৰ্য্যকে রূপ দিয়াছে। গলার স্বরটিও শ্রুতিস্থখকর নহে। যুবক তাহার সম্মুখে পড়িয়াই একটু খতমত খাইয়া গেল । এ যেন নারিকেলের শুষ্ক রসহীন আবরণ। ইহাকে ভেদ করা দুরূহ এবং শ্রমসাপেক্ষ । গৃহকর্তা আগন্তুকের পানে চাহিয়া বসিতে বলিলেন সা। স্বভাবসিদ্ধ কর্কশকণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন,---কাকে চান ? যুবক মনে করিল এমন রূঢ় অভদ্রোচিত প্রশ্ন সে জীবনে শোনে নাই। কিন্তু কণ্টকে গঠিত মৃণাল—ইহা সে জানিত । একটু ইতস্তত করিয়া সে প্রশ্ন এড়াইয়া কহিল,— আমি আপনাদেরই সামনের বাড়ীতে থাকি, একটু আলাপ করতে এলুম। লোকটি নিস্পৃহভাবে উত্তর দিল,-কিন্তু দেখছেন ত এখন অসময়—আজই আমরা উঠে যাব । —কেন বিশেষ সুবিধা হ’ল না এখানে ? —সে কথা বলাই বাহুল্য । এমন কাট-কাটা জবাব-কতক্ষণ আর ধৈর্য্য রাখা যায় । একটা ক্ষুদ্র নমস্কার করিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ধৈর্য্যহার যুবক নমস্কার না করিয়াই বেশ একটু দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল । দোর-গোড়ায় থোকার সাথে দেখা । সে আনন্দে কলরব করিয়া উঠিল,—কোথায় গিয়েছিলেন,—আসুন না । কিন্তু কুনানারিকেলের রূঢ় তাহার উংস্থক দন্তের পীড়া উৎপাদন করিয়াছিল,--সে আর দাড়াইতে চাহিল ন । টানাটানিতে থোকার হাত হইতে গোটা-দুই মাথার কাটা ও একটি চিরুণী খসিয়া মাটিতে পড়িল । যুবক সে দুটি তুলিয়া কহিল,—এ কার জিনিষ খোকা ? খোকা কহিল,—দিদির । এখুনি দিদির সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে দোতলার জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম । দিদি রাগ করলে তাই কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যুবক এক মুহূৰ্ত্ত কি ভাবিয়া কহিল,—এ দুটি আমার কাছে থাক । তোমার দিদিকে বলে। আশঙ্কায় বালকের মুখ শুকাইয়া গেল । যুবকের হাত ধরিয়া সে বলিল,—না, না আমায় দিন। নইলে দিদি বড় রাগ করবে, কথা কবে না । বালককে সাস্তুন দিয়া সে কহিল,--আচ্ছা, আমার কথা বলে, তা হলে আর কিছু বলবে না। আচ্ছ ছাদে গিয়ে আমি তাকে এখুনি বলছি—তুমি তাকে পাঠিয়ে দাওগে ত । অবিলম্বে দুই ছাদে দুইজনের আবির্ভাব হইল । তরুণী হাসিয়া কহিল,-আজকাল ডাকাতী করতে আরম্ভ করেছেন দেখচি । যুবক বলিল,- কাজেকাজেই । রত্নলাভের চেষ্টা পৃথিবীর সব জাতিই সৰ্ব্বসময়েই এমনি ক’রে করে । সাক্ষী তার ইতিহাস । তরুণী কহিল,—সাক্ষী-সাবুদের দরকার নেই । আমার সামান্ত মাথার কাটাট। কি এমন মহামূল্য রত্ন— যুবক মানহাস্তে কহিল,—সব জিনিষের মূল্য সকলের চোখে ত সমান নয়। আমার কাছেও অমূল্য । তোমার সঙ্গে আলাপের ওই স্মৃতিটুকুই আজীবনের সম্বল হয়ে থাকবে । তরুণী সবিস্ময়ে বলিল,—সে কি । আপনি পাগল । না, ন, ও-সব ধা-ত বলবেন না জ্যেঠামশায়ের কাছে একবার— যুবক তাড়াতাড়ি উৎফুল্লম্বরে কহিল,—তিনি তোমার জ্যেঠামশায়। যাক, বাচলুম। তরুণী অবাক হইয় তাহার পানে চাহিল। যুবক ভাবাবেগে লাগিল,—ওই ঝুনে৷ নারকোলটাকে তোমার বাবা মনে ক’রে এমন কষ্ট পাচ্ছিলাম ! তরুণী ব্যথিতকণ্ঠে কহিল,-উনি বড়ই স্নেহশীল । বাইরে দেখতে গম্ভীর, কিন্তু মনটি গুর ছোটছেলের মতই কোমল । যুবক ঈষৎ অপ্রতিভ হইয়া বলিল,-না না তা বলছি নে। তখন হয়ত খুব ব্যস্ত ছিলেন, যাক ওসব কথা । পরে ঈষৎ আবেগকম্পিত কণ্ঠে কহিল,—বোধ হয় এই আমাদের শেষ দেখা । তরুণী ছলছল নেত্ৰে কহিল,—বোধ হয়। বলিতে