পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ f [ ৩eশ ভাগ, ২য় খং ইন্দু হাসিয়া বলিল, “তা কি রকম করে বলতে হবে তুইই শিখিয়ে দে না । তোদের সব হাল ফ্যাশানের নিয়ম-কানুন ত আমি জানি না ।” মায়া বলিল, “যা-ত বল কেন ? আমি আবার কবে থেকে হাল ফ্যাশানের হলাম ? ও সব শুনলে আমার হাড় জালা করে ।” ইন্দু বলিল, “তা না হয় বলব না, তুমি তেকেলে বুড়ীই যখন। তা দেবকুমার এসেছে তা তুই জানলি কি করে ? সে ত উপরে মোটেই আসেনি।” মায়া বিস্মিতভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “দেবকুমার কে পিসিমা ? কই আমি ত জানি না কেউ এসেছে ব’লে।” ইন্দু একেবারে অবাকৃ হইয়া গেল। বলিল, “তবে তুই কার কথা জিগ গেয করছিলি ? দেবকুমারের সঙ্গে তোর বিয়ে হবে তা যেন জানিস না ? তোর বাবা এখনি আমায় বললেন, আগে ত শুনিও নি । দিব্যি খাসা রাজপুত্রের মত চেহার, আবার পড়াশুনোয়ও তেমনি । মায়া উত্তেজিতভাবে বলিল, “বাবা যদি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে দেন, তাহ’লে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরব। হিন্দুর মেয়ে একবার যাকে স্বামী ব’লে জানে, তাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারে না ।” ইন্দু এতক্ষণে ব্যাপারটা একটু বুঝিতে পারিল । দারুণ একটা অমঙ্গলের আশঙ্কায় তাহার বুকের ভিতরটা যেন শুখাইয়া উঠিল । ভগবান এ কি করিলেন ? এমন মুন্দর দুষ্টটি জীবনকে এমনি নিৰ্ম্মমভাবে ধ্বংস করিতে বসলেন ? মায়। নিজের মাঝখানের কয়েক বৎসরের জীবনকে কি করিয়া এমন সম্পূর্ণভাবে হারাইয়া ফেলিল ? দেবকুমারের সহিত বিবাহের সম্বন্ধ কে করিয়াছে তাহা ইন্দু ঠিক জানে না। কিন্তু নিরঞ্জনকে যতদুর সে জানে, মায়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহের কোনো সম্বন্ধ নিশ্চয়ই তিনি করেন নাই । বিবাহের কোনো তাড়াতাড়ি তাহার ছিল না। মায়া এবং দেবকুমার নিজেরাই কথাবার্তা কহিয়া থাকিবে, তিনি সম্মতি দিয়াছেন মাত্র। কিন্তু এ সমস্ত স্মৃতিই কি মায়ার মন হইতে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে ? দেবকুমারের নাম তাহার মনে কোনো পরিচয়ের স্মৃতিই জাগায় না, তাহার প্রতি ভালবাসার কোনো চিকুই এই অদ্ভুত বালিকার ভিতর এখন পাওয়া যায় না । কোথায় এ নিদারুণ সমস্যার সমাধান ? শুধু দেবকুমারকে যে মায়া ভুলিয়াছে তাহা নহে। কবে কোন কৈশোরে যে-মানুষটি সম্বন্ধে সামান্য অমুরাগের অঙ্কুর তাহার মনে জাগিয়া উঠিয়াছিল, তাহারই মূৰ্ত্তি এত দিনের পর আবার মায়ার জীবনে অনেকখানি জায়গা জুড়িয়া বসিয়াছে । মায় যে প্রভাসের কথাই এতক্ষণ জিজ্ঞাসা করিতেছিল, সে বিষয়ে ইন্দুর সন্দেহমাত্র ছিল না। সে ভাবিয়া কোনো কুল দেখিতে পাইল না। ভয়ে উদ্বেগে তাহার মাথার ভিতরটা যেন ঝিম্ ঝিম্ করিতে লাগিল । মায়া তখনও মুখ লাল করিয়া বসিয়া আছে। বেশী উত্তেজনায় পাছে তাহার কিছু অনিষ্ট হয়, এই ভয়ে ইন্দু তাড়াতাড়ি বলিল, “আচ্ছা থাকু, ওসব কথা । পরে হবে এখন । কিছু কি আর ঠিক হয়েছে ? आमि । অমনি ঠাট্টা করছিলাম। তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনও কি বিয়ে হতে পারে ? মেজদার মত কি তুই জানিস না ? তুই এত বড় মেয়ে হয়েছিল, যা তুই বলবি সেই অনুসারে কাজ হবে ।” মায় এতক্ষণ খাওয়া ফেলিয়া হাত গুটাইয়া বসিয়৷ ছিল। ইন্দুর কথায় খানিকট যেন আশ্বস্ত হইয়। আবার খাইতে আরম্ভ করিল । বলিল, “তাই হলেই ভাল । শুধু শুধু একট। গোলমাল বাধাতে আমিই চাই নাকি ? তাই ব’লে আমাকে নিয়ে যা-তা করলে চলরে কেন ? কই তুমি ত বললে না তিনি আছেন কি না ?” ইন্দু অত্যস্ত সংক্ষেপে বলিল, “আছে ” মনে মনে বলিল, “এমন উৎপাত হবে জানলে কে ও আপদকে সঙ্গে করে আনত ? না-হয় দু-দিন পরেই আসতাম। আহা, দেবকুমার ছেলেটি চমৎকার । এমন চেহারা লাখে একটা দেখা যায় না । ব্যাপ্লিষ্টারও হয়েছে। টাকাকড়ি আছে কি না কে জানে। ত মেঞ্জদার যা-কিছু, সব ত ঐ মায়াই পাবে ? টাকা থাকৃলেই বা কি, না থাকলেই বা কি ? এ ছেলের কাছে কি আর প্রভাস লাগে ? কোনো টুলো পণ্ডিতের মেয়েকে বিয়ে করবে,