পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8ぐ。 একটি ছোটাে খুড়তুতো ভাইকে দেখলুম-অতি স্বপুরুষ নব যুবক, দাদার হয়ে হান্তোজ্জল মুখে আভিজাত্যপূর্ণ সৌজন্তের সঙ্গে অভ্যাগতদের কাছে কাছে আছে। এর পরিধানে সোনার জরীর বড়ো বড়ো ফুল তোলা বেগুনে রঙের ‘স্বত্র’ বা রেশমের কাপড়, সেই রকম রঙ্গীন জুরীদার উত্তরীয় কোমরে জড়িয়ে’ বঁধি, গায়ে সাদা রেশমের পাঞ্জাবীর মতন একট। হাত-কাটা জাম, কোমরে একখান ক্রিস বাধা, আর মাথায় রঙীন রুমালের ছোটে একটা পাগড়ী বঁtধা । ছেলেটার সঙ্গে পরে আমার আলাপ হ’য়েছিল । কিছু কিছু ইংরিজি বলতে পারে। যবদ্বীপে Malang মালাং শহরে একটী উচ্চ শ্রেণীর বিদ্যালয়ের ছাত্র, সেখানে ডচ আর অন্য ইউরোপীয় ভাব পড়ানে। হয় । এর ডাক-নাম Tjokorde Rake চকদে রাকে । রাস্তায় আজকেও মেয়েদের শোভাযাত্ৰ হ’ল। এই “যাত্র’ বা মিছিল এদের সমস্ত উৎসব-অনুষ্ঠানের প্রধান অঙ্গ। তবে আজ গত কল্যের মত অত ভীড় ছিলনা শোভাযাত্ৰাটীতে । রাজবাড়ীর মেয়েরা আজকেও শোভাযাত্রায় যোগদান ক’রেছিলেন । কালকের মতন আজ ও বাশের মাচা পথ বেয়ে দেয়াল ডিঙিয়ে তবে মেয়েদের শোভাযাত্র। রাজবাটীতে প্রবেশ করলে । পুঙ্গব স্বথবতীর ভাই উপরে উঠে দাড়ালেন, রাজবাড়ীর মেয়েদের নামবার সময়ে সাহায্য করতে। সমস্ত ব্যাপারট, আর তার সঙ্গে রাস্তার দুপারে দাড়িয়ে বলিদ্বীপীয় যেয়ে পুরুষের ভীড়, সবটার একটা মনোহর শ্ৰী আর শালীনত দেখে কবি খুব খুশী হ’য়ে যথেষ্ট সাধুবাদ দিলেন । শোভাযাত্র চুকে যাবার পরে বাশের আর রঙীন কাগজের কতকগুলি পুতুল নিয়ে বেরুল—লম্বা লম্বা ক’রে বানানো এলো-চুল রক্তদস্তিক রাক্ষসীর মূৰ্ত্তি, রাক্ষসের মুক্তি ; এই সব পুতুল নিয়ে ভীড়ের মধ্যে ঘোরাঘুরি ক’রতে লাগল, কোথাও বা দু চারটে পুতুল একত্ৰ ক’রে একটু পুতুল-নাচ বা নাট্টাভিনয় ও করলে। দূব পাড়াগ থেকে আগত বলিদ্বীপীয় মেয়ে পুরুষ আর ছেলের দল ই ক'রে এই পুতুল-নাচ দেখতে লাগল। প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ { ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড আমরা ছতরীতে আর বেশীক্ষণ ব’সে রইলুম না, ভৗড়ের মধ্যে ঘুরতে লাগলুম। স্বরেনবাবু আর বাকে ক্যামেরা এনেছিলেন, ছবি তুলতে লেগে গেলেন । তারপরে রবীন্দ্রনাথ পুঙ্গবের বাড়ীতে অতিথিদের বসবার ঘরে একটু বিশ্রাম ক’রে বাদুঙে ফিরে গেলেন । আমরা র’য়ে গেলুম। পূঙ্গবের অনুরোধমতে। আজকে আমায় বেদপাঠ ক’রতে হবে । পূজোর জিনিস-পত্র নিয়ে গিয়েছিলুম। পাঠের জন্য বইও সঙ্গে ছিল । পঞ্চপ্রদীপ, ধূপদান, পঞ্চপাত্র,—এসব ছিল। সাধারণ পাঠে পঞ্চপ্রদীপের দরকার হয় না, কিন্তু বাহুল্য ক’রে সেটি জালিয়ে রেখে দিয়ে পাঠ ক’রবে। স্থির করেছিলুম। পঞ্চপ্রদীপ জালবার জন্য একটু ঘাঁ পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করলুম। শুনলুম ও দেশে ধীয়ের নামও কেউ জানে না—দুধই খায় ন তে ঘী পাবে কোথা থেকে ? পদণ্ডের কি দিয়ে হোম করে জিজ্ঞাসা করায় ব’ললে যে হোম প্রায় অজ্ঞাত, আর যদি বা কখনও কখনও কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে একটু হোম করে, তা হ’লে নারকেল তেলেই ‘মধ্বাভাবে গুড়ম’-এর মতে। সুতাভাবে নারিকেল তৈল দিয়েই কাজ চালায়। সন্ধ্যে হবার কিছু পরে আমাকে যে আঙিনায় পদ গুদের বসবার মাচা হ’য়েছে সেইখানে নিয়ে গেল । সমস্ত আঙিনাটায় লোক গিশ গিশ করছে । আজকে ঔদ্ধদেহিক ক্রিয়া সম্পর্কে পূজা পাঠ অনুষ্ঠানাদির ঘটাটা একটু বেশী । আমি মাচার উপরে উঠে পাঠের ব্যবস্থা ক’রে নিলুম। ডাক্তার খোরিস্ ও উঠলেন । মাচার উপরে চারিদিকে একটু বারাদার মতন স্থান, আর মাঝে একটু উচু জায়গা–বারান্দ থেকে একহাত আন্দাজ উচু হবে। বিজলীর বাতি জ’লছে, আর্ক ল্যাম্প ও আছে। মাচার উপরে উঠে উচু জায়গাটিতে বসে, ওদেরই দেওয়া একটী ছোটে। কত কট। ডমরু আকারের একটি-পায়াযুক্ত কাষ্ঠাধারের উপরে একখানি কাঠের বারকোষ রেখে পাঠের জন্য পুস্তকাধার ক’রে নেওয়া গেল। প্রচুর ফুল ছিল, বারকোষের উপরে বই ক’খানি রেখে বইয়ের চারিদিকে ফুলগুলি সাজিয়ে রাখলুম। পঞ্চপ্রদীপ জেলে পুস্তকাধারের পাশে রেখে দিলুম। কি কি পীড়বে তা আগে থেকেই ঠিক ক’রে রেখেছিলুম।