পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ স্থপতি বলিলেন, “হা, প্রিয়তমে, যে সময় আমি সফলতা সম্বন্ধে সৰ্ব্বাপেক্ষ স্থিবনিশ্চয় ছিলাম, সেই সময়েই আবিষ্কার করিলাম যে গণনায় আমি একটি ভীষণ ভুল করিয়াছি এবং উহার জন্ত কাল যখন কাষ্ঠের ভার সরানো হইবে, তখন সেতুটি ভাঙিয়া পড়িবে এবং উহার সঙ্গে সঙ্গে উহার নিৰ্ম্মাতা এই হতভাগ্য স্থপতিও ধ্বংস লাভ করিবে ।” র্তাহার পত্নী বলিলেন, “সেতু ভাঙিয়া নদীগর্ভে বিলীন হইতে পারে, কিন্তু তোমার প্রাণ নষ্ট হইবে না। আমি নতজাতু হইয় প্রধান ধৰ্ম্মযাজকের নিকট তোমার প্রাণ ভিক্ষা করিব।” জুয়ান বলিলেন, “তোমার প্রার্থন সফল হইবে না । প্রধান ধৰ্ম্মযাজক যদি আমাকে মুক্তিদান করিতে স্বীকারও করেন, তথাপি আমি স্বীকৃত হইব না, সম্মানহীন জীবন অপেক্ষ মৃত্যুই শ্রেয়।” ক্যাথারিন বলিলেন, “তোমার প্রাণ এবং মান দুই-ই অামি রক্ষা করিব।” রাত্রি গভীর হইয়া চলিল। জুয়ান দুঃখে, উদ্বেগে পরিশ্রান্ত হইয়া অবশেষে ঘুমাইয়া পড়িলেন। ঘুমও র্তাহার দুঃস্বপ্নে পূর্ণ, উহাতে কোনো আরাম বা বিশ্রাম ছিল না। - ক্যাথরিনও ঘুমের ভাণ করিয়া শুইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি জুয়ানকে উদ্বিগ্ন ভাবে দেখিতেছিলেন । যখন স্থির বুঝিতে পারিলেন যে, জুয়ান নিদ্রিত হইয়াছেন তখন অতি সন্তপণে উঠিয়া রন্ধনশালায় প্রবেশ করিলেন। ধীরে ধীরে জানলা খুলিয়া বাহিরে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন । রাত্রি ঘন অন্ধকার, মধ্যে মধ্যে বিদ্যুতের তীব্র আলোকে আকাশ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিতেছে। টেগসের জলস্রোতের ভীম গর্জন ভিন্ন অন্য কোনো শব্দ শোনা घोध्र नl ॥ ক্যাথারিন জানলা বন্ধ করিয়া দিলেন। উনান হইতে একখানি জলন্ত কাঠ বাহির করিয়া লইয়া, আপাদমস্তক কৃষ্ণবর্ণ গাত্রাবরণে ঢাকিয়া তিনি নি:শব্দে দ্বার খুলিয়া বাহির হইয়া গেলেন। তাহার হৃৎপিণ্ড যেন প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড বুকের ভিতর আছড়াইয়া পড়িতেছিল, তবুও তিনি সাহসে ভর করিয়া চলিতে লাগিলেন । কোথায় তিনি চলিয়াছেন ? তিনি কি ঘোর অন্ধকারে পথ খুজিয়া লইবার জন্যই জলস্ত কাঠখনি বহন করিয়া লইয়া চলিয়াছিলেন ? পথটি অতি দুৰ্গম, উহার মধ্যে মধ্যে বিশাল প্রস্তরখণ্ড ছড়ানো এবং উচ্চা অতি অসমান । কিন্তু তিনি জলস্ত কাঠখানিকে যেন অঙ্গাবরণের তলে গোপন করিবারই চেষ্টা করিতে লাগিলেন । অবশেষে তিনি সেতুর নিকটে আসিয়া পৌছিলেন। বাতাস তখনও তীব্রবেগে বল্লিতেছে এবং নদীর তরঙ্গরাজি সেতুর উপর রুদ্ধ আক্রোশেই যেন আছাড় খাইয়। পড়িতেছে। পারিলে সে এ সমস্তই ভাসাইয়৷ লইয়া যায় । ক্যাথারিন সেতুর প্রবেশ-পথে আসিয়া দাড়াইলেন। তাহার দেহ তখন কম্পিত হইতে ছিল । তিনি উত্তাল তরঙ্গমালার সম্মুখে দাড়াইয়াছিলেন বলিয়াই এত ভয় ? ন, তিনি সহস্তে ধ্বংসের আগুন জালাইতে যাইতেছেন বলিয়াই এত ভয় ? এতদিন পর্য্যন্ত শান্তিময় গৃহস্থালীর কাজ ভিন্ন আর কিছুই তিনি করেন নাই। ঠিক সেই সময়েই দিগন্ত প্রতিধ্বনিত করিয়া বজ্রমিনাদ শোনা গেল । ঐ শব্দেই কি রমণীর ক্ষীণ. দেহঘষ্টি কাপিয়া উঠিল ? জলন্ত কাঠখানি লইয়। তিনি সেতুর নীচের কাঠের ভারাতে সংযুক্ত করিলেন । কাঠমঞ্চটি শীঘ্রই ধরিয়া উঠিল, এবং বা ভাস অত্যন্ত তীব্র থাকায় অগ্নিশিখ। অবিলম্বেই গগনভেদ করিয়া উঠিল। সেতুর খিলান প্রভৃতি সমস্তই দেপিতে দেখিতে ধরিয়া উঠিল । ক্যাপারিন তখন দ্রুতবেগে সেস্থান ত্যাগ করিলেন । আগুনের অ'লোতে এবং বিদ্যুতের জ্যোভিতে তাহার পথ দেখিতে পাইবার কোনোই বাধা হইল না, তিনি অবিলম্বেই বাড়ী আসিয়া পৌছিলেন । তিনি যেমন নিঃশব্দে বাহির হইয়। গিয়াছিলেন, তেমনি নি:শব্দে ফিরিয়া আসিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। জুয়ান তখনও গভীর নিদ্রায় অভিভূত, তিনি পত্নীর বাহিরে গমন বুঝিতেও পারেন নাই । ক্যাথারিন তাড়াতাড়ি আসিয়া