পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] দিয়া বাজার হইতে রসগোল্লা ও ছানা আনাইয়াছে, রেকাবিতে পেপে-কাট,খাবার ও গ্লাসে নেবুর রস মিশানো চিনির সরবং । অপু হাসিয়া বলিল—উঃ ভারী গিন্নীপনা যে ...আচ্ছা তরকারীতে কুন দেওয়ার সময় গিন্নীপনার দৌড়টা একবার দেখা যাবে। অপর্ণ বলিল-আচ্ছা গো দেখো, দেখো—পরে ছেলেমানুষের মত ঘাড় জুলাইয়। বলিল ঠিক হোলে কিন্তু আমায় কি দেবে ? অপু বৌতুকের স্বরে বলিল, ঠিক হোলে যা দেবে, তা এখুনি পেতে চাও? —যাও, আচ্ছা তো श्छे ? একবার সে রন্ধনরত বধূর পিছনে আসিয়া চুপিচুপি দাড়াইল । দৃশুট। এত নতুন, এত অভিনব ঠেকিতেছিল তাহার কাছে ! এই স্বঠাম, সুন্দরী পরের মেয়েটি তাহার নিতাস্ত আপনার জন—পৃথিবীতে একমাত্র আপনার জন । পরে সে সন্তৰ্পণে নীচু হইয়া পিঠের উপরে এলানো চুলের গিঠ টা ধরিয়া অতর্কিতে এক টান দিতেই বধূ পিছনে চাহিয়। রুত্রিম কোপের স্বরে বলিল— উঃ! আমার লাগে না বুঝি ?...ভারা দুঃ তো ?. রান্না থাকৃবে পড়ে বলে দিচ্চি যদি আবার চুল ধরে টানবে— অপু ভাবে, মা ঠিক এই ধরণের কথা বলিত—এই ধরণেরই, স্নেহ-প্রতি ঝরা চোখে। সে দেখিয়াছে, কি দিদি, কি রাণু-দি', কি নিরুপমা-দি, কি লীলা, কি অপণা --এদের সকলেরই মধ্যে মা যেন অল্পবিস্তর মিশাইয়৷ আছে—ঠিক সময়ে ঠিক অবস্থায় ইহার একই ধরণের কথা বলে, চোখেমুখে একই ধরণের স্নেহ ফুটিয় ওঠে। একটি ভদ্রলোক অনেকক্ষণ হইতে প্লাটফৰ্ম্মে পায়চারী করিতেছিলেন। টেনে উঠিবার কিছু পূৰ্ব্বে অপু তাহাকে চিনিতে পারিল, দেওয়ানপুরের মাষ্টার সেই সত্যেনবাৰু। অপু থার্ড ক্লাশে পড়িবার সময়ই ইনি আইন পাশ করিয়া স্কুলের চাকুরী ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, আর কখনো দেখা হয় নাই। পুরাতন ছাত্রকে দেখিয়া খুসি হইলেন, অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন, অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে কে কি করিতেছে শুনিবার আগ্রহ দেখাইলেন। তিনি আজকাল পাটনা হাইকোর্টে ওকালতী অপরাজিত ২৬৭ করিতেছেন, চালচলন দেখিয়া অপুর মনে হইল বেশ দুপয়সা উপার্জন করেন। তবুও বলিলেন, পুরানো দিনই ছিল ভাল, দেওয়ানপুরের কথা মনে হইলে কষ্ট হয় । ট্রেণ আসিলে তিনি সেকেণ্ড ক্লাসে উঠলেন। অপর্ণ কখনও কলিকাতা দেখে নাই। তাহাকে সব ভাল করিয়া দেখাইবার জন্য ষ্টেশনে নামিয়া অপু একখানা ফিটন গাড়ী ভাড়া করিয়া খানিকট ঘুরিল। রিপণ কলেজের কাছে গাড়ী থামাইয়া দৰ্পের স্বরে বলিল -এই দ্যাথ না আমাদের কলেজ, এখান থেকে পাশ দেওয়া হয়ে গিয়েচে আমার, দেখেচোঁ কত বড় কলেজটা ! অপর্ণ বিস্ময়-ভরা ডাগর চোখে বাড়ীটা চাহিয়া চাহিয়া দেখিল। অপু একটা জিনিস লক্ষ্য করিল ; অৰ্পণা কখনও কিছু দেখে নাই বটে, কিন্তু কোনো বিষয়ে কোনো অশোভন ব্যগ্রতা দেখায় না। ধীর, স্থির, সংযত, বুদ্ধিমতী— এই বয়সেই চরিত্রগত একটা কেমন সহজে গাম্ভীৰ্য্য - যাহার পরিণতি সে দেখিয়াছে ইহারই মায়ের মধ্যে ; উছলিয়৷ পড়া মাতৃত্বের সঙ্গে চরিত্রের সে কি দৃঢ়তা, অটলতা ! মনসাপোতা পৌছিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। অপু বাড়ীঘরের বিশেষ কিছু ঠিক করে নাই, কাহাকেও সাবাদ দেয় নাই, কিছু ন—অথচ হঠাৎ স্ত্রীকে আনিয়া হাজির করিয়াছে। বিবাহের পর মাত্র একবার এখানে দুদিনের জন্য আসিয়াছিল, বাড়ীঘর অপরিস্কার, রাত্রিবাসের অনুপযুক্ত। উঠানে ঢুকিয়া পেয়ার গাছটার তলায় সন্ধ্যার অন্ধকারে বধু দাড়াইয়া রহিল, অপু গরুর গাড়ী হইতে তাহার তোরঙ্গ ও কাঠের হাতবাক্সট নামাইতে গেল। উঠানের পাশের জঙ্গলে নানা পতঙ্গ কুস্বর করিয়া ডাকিতেছে, ঝোপে-ঝাপে জোনাকীর ঝাক জলিতেছে। কেহ কোথাও নাই, কেহ আসিয়া তরুণ দম্পতীকে সাদরে বরণ ও অভ্যর্থনা করিয়া ঘরে তুলিয়া লইতে ছুটিয়া আসিল না। তাহারাই দুজনে টানাটানি করিয়া নিজেদের পেটরা তোরঙ্গ মাত্র দেশলাই-এর কাঠির আলোর সাহায্যে ঘরের দাওয়ায় তুলিতে লাগিল। তবুও অপুর মনে হইল ঝিবৃঝিরে বাতাসের সঙ্গে, সছফেটা &