পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭e প্রবাসী--অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড গিয়াছে। কেহ কোথাও নাই। অপু ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া পুটুলি নামাইয়া রাখিয়া সাবানখান খুজিয়া বাহির করিয়া আগে হাত মুখ ও মাথা ধুইয়া ফেলিয়া তাকের আয়না। চিরুণীর সাহায্যে টেরী কাটিল। পরে নিজের আগমনের সকল চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয় গেল । আধঘণ্ট। পরেই সে ফিরিল। বধু ঘরের মধ্যে প্রদীপের সামনে মাদুর পাতিয়া বসিয়া কি বই পড়িতেছে । অপু পা টিপিয়া টিপিয়া তাহার পিছনে আসিয়া দাড়াইল । এট। অপুর পুরাণে রোগ, মায়ের সঙ্গে কতবার এরকম করিয়াছে। হঠাৎ কি একটা শব্দে বধু পিছন ফিরিয়৷ চাহিয়া ভয়ে ধড়মড় করিয়| উঠিবার চেষ্টা করিতে অপু হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। বধু অপ্রতিভের স্বরে বলিল-ওম, তুমি । কখন— কৈ—তোমার তো— অপু হাসিতে হাসিতে বলিল-কেমন জব । আচ্ছা তো ভীতু ! বধু ততক্ষণে সামলাইয়া লইয়া হাসিমুখে বলিল-বা রে, ওই রকম কোরে বুঝি আচম্ক ভয় দেখাতে আছে ? কটার গাড়ীতে এলে, এখন—তাই বুঝি আজ ছ’ সাতদিন চিঠি দেওয়া হয় নি—আমি ভাব চি — অপু বলিল—তারপর তুমি কি রকম আছ বলে ? মায়ের চিঠি পত্র পেয়েচ ? তুমি কিন্তু বেগ হয়ে গিয়েচ, অস্থখ-বিসুখ হয়েছিল বুঝি ? —আমার এবারকার চিঠির কাগজটা কেমন ? ভালো, না ? তোমার জন্তে এনেচি পচিশখান। তারপর রাত্রে কি খাওয়াবে বলে ? —কি থাবে বলে ? ঘি এনে রেখেচি, লুচি ভেজে দি, আর আলুপটলের ডালনা করি—আর দুধ আছে— মায়ের মৃত্যুর পরে এমন যত্নন অপুর অদৃষ্টে ঘটে নাই পরদিন সকালে উঠিয়া অপু দেখিয়া অবাকৃ হইল, বাড়ীর পিছনের উঠানে অপর্ণ ছোট ছোট বেড়া দিয়া শাকের ক্ষেত, বেগুনের ক্ষেত করিয়াছে। দাওয়ার ধারে ধারে নিজের হাতে গাদার চারা বসাইয়াছে। রান্নাঘরের চালায় পুইলতা, লাউলত উঠাইয়া দিয়াছে । দেখাইয়া বলিল, আজ পুইশাক খাওয়াবো, আমার গাছের ওই দোপাটীগুলো দ্যাথো ? কত বড়, না ? নিরুপম৷ দিদি বীজ দিয়েচে আর এ স্কট জিনিস দ্যাখোনি এস দেখাবো— অপুর সারাশরীরে একটা আনন্দের শিহরণ বহিল । অপর্ণা যেন তাহার মনের গোপন কথাটি জানিয়া বুঝিয়াই কোথা হইতে একটা ছোট চাপা গাছের ডাল আনিয়া মাটিতে পুতিয়াছে, দেখাইয়া বলিল—দ্যাথো কেমন— হবে ন! এখানে ? —হবে না আর কেন ? আচ্ছা, কিন্তু এত ফুল থাকৃতে চাপা ফুলের ডাল যে পুততে গেলে ? অপর্ণ সলজমুখে বলিল—জানিনে—যাও । অপু তো লেখে নাই, পত্রে তো একথা অপর্ণাকে জানায় নাই, যে মিত্তির বাড়ীর কম্পাউণ্ডের চাপাফুল গাছটা তাহাকে কি কষ্টই না দিয়াছে এই দু মাস ! চাপ৷ ফুল যে হঠাৎ তার এত প্রিয় হইয়া উঠিয়াছে,একথাটি মনে মনে অল্পমান করিবার জন্য এই কৰ্ম্মব্যস্ত, সদ; হাসিমুখ মেয়েটির উপর তার মন ক্লতজ্ঞতায় ভরিয়া উঠিল । অপর্ণ। বলিল—এখানে একটু বেড়া দিয়ে ঘিরে দেবে ? মাগে, কি ছাগলের উৎপাতই তোমাদের দেশে ! চারগাছ থাকতে দেয় না, রোজ খেয়ে দেয়ে সারা দুপুর কঞ্চি হাতে দাওয়ায় বসে বসে ছাগল তাড়াই আর বই পড়ি – দুপুরে রোজ মিরুদি’ আসে, ও-বাড়ীর মেয়ের আসে, ভারী ভাল মেয়ে কিন্তু নির দিদি । আজ সারাদিন ছিল বর্ষা। সন্ধ্যার পরে একটানা বৃষ্টি নামিয়াছে, হয়তো বা সারারাত্রি ধরিয়া বর্ষ চলিবে । বাহিরে কৃষ্ণাষ্টমীর অন্ধকার মেঘে ঘনীভূত করিয়া তুলিয়াছে। বধু বলিল—রান্নাঘরে এসে বস্বে ? গরম গরম সে কে দি – অপু বলিল— তা হবে না, আজ এস আমরা দুজনে একপাতে খাবো । অপর্ণ প্রথমট রাজী হইল না, অবশেষে স্বামীর পড়াপীড়িতে বাধ্য হইয়া একট। থালায় রুটি সাজাইয়া থাবার ঠাই করিল। অপু দেখিয়া বলিল, ও হবে না, তুমি আমার পাশে বসে, ও-রকম বস্লে চলবে না।