পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ৷ অপরাজিত <ፃ » বধু হাসিয়া বলিল—আচ্ছা তোমার এত বদখেয়ালও মাথায় আসে, মাগো, মা ! দেথতে তো খুব ভালোমাছুষটি লাভের মধ্যে বধুর একরূপ খাওয়াই হইল না সে-রাত্রে। অন্যমনস্ক অপু গল্প করিতে করিতে থালায় রুটি উঠাইতে উঠাইতে প্রায় শেষ করিয়া তুলিল—পাছে স্বামীর কম পড়িয়া যায় এই ভয়ে সে বেচারী খান-তিনের বেশী নিজের জন্য লইতেই পারিল না । খাওয়া-দাওয়ার পর অপর্ণ বলিল—কই কি বই এনেচ বল্লে দেখি ? মাদুরটা বিছিয়ে এস দুজনে বসি মেজেতে—তোমাকে আজ পড়াশুনোর সব নিয়ম বলে দেবে, অপর্ণ। রোজ রাত্রে খানিকট। কোরে পড়বে, দু তিন মাসে কত শিখতে পারবে দেখো । পড়াশুনার আগ্রহ অপর্ণার ও খুব । সে ইংরাজি জানে না, শিখিবার খুব ইচ্ছ। কোন বইখানা আগে পড়িতে হয় ? দুজনেই কৌতুকপ্রিয়, সমবয়সী, সুস্থমন, বালক বালিকার মত আমোদ করিতে, গল্প করিতে, সারারাত জাগিতে, অকারণে অর্থহীন বকিতে দুজনেরই সমান আগ্ৰহ, সমান উৎসাহ । অপু একথান। নতুন-আন বই খুলিয়ু বলিল—পড়ে তো এই পদ্যট। । অপণা প্রদীপের সলতেট চাপার কলির মত আঙুল দিয়া উস্কাইয়া দিয়া পিলসুজট। আরও নিকটে টানিয়া আনিল । পরে সে লজ্জ করিতেছে দেখিয়া অপু উৎসাহ দিবার জন্য বলিল—পড়ে ন কই দেখি ? অপণা যে এত সুন্দর কবিতা পড়িতে পারে অপুর তাহা জানা ছিল না । সে ঈষৎ লজ্জাজড়িত স্বরে পড়িতেছিল— গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা কুলে এক বসে আছি নাহি ভরসা অপু পড়ার প্রশংসা করিতেই অপর্ণ বই মুড়িয়া বন্ধ করিল। স্বামীর দিকে উজ্জ্বলমুখে চাহিয়া কৌতুকের ভঙ্গিতে বলিল – থাকুগে পড়া, একটা গান করে না ? অপু বলিল—একটা টিপ পরে না খুকী ? ভারী সুন্দর মানাবে তোমার কপালে ? অপর্ণ সলজ্জ হাসিয়া বলিল—যাও— · — সত্যি বলচি অপর্ণা, আছে টিপ – —আমার বয়সে বুঝি টিপ, পরে ? আমার ছোট বোন শাস্তির এখন টপ পরবার বয়েস তো— কিন্তু শেষে তাহাকে টিপ পরিতে হইল। সত্যই ভারী সুন্দর দেখাইতেছিল, প্রতিমার চোখের মত টানা, আয়ত, সুন্দর চোখ দুটির উপরে দীর্ঘ, ঘনকালে, জোড়াভুরুর মাঝখানটিতে টিপ মানাইয়াছে কি সুন্দর । অপুর মনে হইল এই মুখের জন্যই জগতের যত টপ হষ্টি হইয়াছে—প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয় এই টিপ-পরা মুখখানি বার বার সতৃষ্ণচোখে চাহিয়া দেখিবার জন্যই । অপর্ণ বলে—ছাই দেখাচ্চে, এ বয়েসে কি টিপ মানায় ? কি করি পরের ছেলে, বল্পে তো আর কথা শুনবে না তুমি ? -->{Ì C5ÌÌ এসে তো— —ভারী দুষ্ট – অপু হঠাৎ হাসিমুখে বলিল—আচ্ছা আমায় দেখতে কেমন দেখায় বলো—না সত্যি-কেমন মুখ আমার ? ভালো, ন পেচার মত ? অপর্ণার মুখ কৌতুকে উজ্জ্বল দেখাইল—নাক সি টুকাইয়া বলিল-বিশ্রী, পেচার মত । অপু কৃত্রিম অভিমানের স্বরে বলিল—আর তোমার মুখ তো খুব ভালো, তা হলেই হয়ে গেল। যাই, শুইগে যাই-রাত কম হয়নি-কাল ভোরে আবার— বধু খিল, খিল করিয়া হাসিয়া উঠিয়া সক্ষেহে অপুর হাত ধরিয়া বসাইয়া বলিল—মাগে, তুমি কি ! এতেই হয়ে গেল রাগ ? পরের মেয়ে, শোনে, একটু সরে এই রাত্রিট গভীর দাগ দিয়া গিয়াছিল অপুর মনে । মাটির ঘরের আনাচে কানাচে, গাছে পালায় বাশবনে, ঝিম্ ঝিম্ নিশীথের একটানা বর্ষার ধারা। চারি ধার নিস্তব্ধ। পূবদিকের জানাল দিয়া বর্ষাসজল বাদল রাতের দমকা হাওয়া মাঝে মাঝে আসে-মাটির প্রদীপের আলোতে, খড়ের ঘরের মেজেতে মাদুর বিছাইয়া সে ধ s에 1 বধু ভাবে তাহার এই শিশুর মত সরলপ্রাণ স্বামী কত কষ্টই না পাইয়াছে এক একা—সে সব কথা