পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ ম। । ওই দেখ তোমায় র্কাদতে দেখে রম কেমন করছে। অরুণ, অরুণ, শীগগির এদিকে আয়-রমার বোধ হয় ফিট হয়েছে।” ম৷ অতি সস্তপণে উমাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া তাহার মুখে শেষ চুম্বন আঁকিয়া দিলেন। পরে তাহাকে বুক হইতে নামাইয়া রাখিয়া ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে চলিয়া গেলেন। 赛 .* 赛 豪 কমল এ সংবাদ পায় নাই । সে নিশ্চিন্তমনে নাকেমুখে দুটি গুজিয়া আপিসে ছুটত ও প্রতিনিয়ত ভাবিত, কি করিলে কোন উপায়ে অপৰ্যাপ্ত অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পূৰ্ব্বকালে কত-নী অসম্ভাবিত উপায়ে কপদকহীন ভিখারী অগাধ ধন-সম্পত্তি লাভ করিয়া সমাজের মধ্যে বরেণ্য হইয়া গিয়াছেন । সে কৃতবিদ্য, কুহক বিদ্যা কিংবা সন্ন্যাসীর কৃপাদৃষ্টিকে বিশ্বাস করিত না । সে ভাবিত, অর্থের নিহিত তত্ত্ব শুধু ব্যবসায়েই আছে, তা সে ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ যাহাই হউক না কেন । চাকরিতে ভিক্ষ,_কজ, কষ্ট, এ ত পরীক্ষিত সত্য । কিন্তু সে দেখিয়াছে এবং বইয়েও পড়িয়াছে--সামান্য সূত্র ধরিয়া বাণিজ্য-লক্ষ্মী কত হতভাগ্য নিরম্নকে অর্থ দিয়াছেন, অন্ন দিয়াছেন, ভাগ্যত্ৰ দিয়াছেন । এই কলির শেযযুগে বুঝি আর তাহ সম্ভব নহে । কথায় কখায় বিশ্বাসের অপব্যবহার যেখানে, সেখানে কোন ধনবান সরল মুখস্ত্রী দেখিয়া বা কৰ্ম্মপটু অন্তর চিনিয়া জীবনযুদ্ধের সহায়তা করিবেন ? অর্থ সামান্য মাত্রও নাই যে সম্বলে একখান পানের দোকানও খোলা যায় আছে শুধু চিস্ত ! শুামবাবু বলিল,“লটারীর টিকিট কেন, ভাগ্য ফিরলেও ফিরতে পারে ।” কমল মনে মনে হাসিয়া ভাবে, তাহাই যদি হইবে ত আপিসের গোলামীতে সামান্য মাহিনায় বহাল হইবে কেন ? ভাগ্য যদি স্বপ্রসন্নই হইত ত অন্য উচ্চতর পদগু ত মিলিতে পারিত কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধাও হয়ত হইত, কিন্তু সে কথা যাক। ওই খামবাবু আজ বিশ বছর ধরিয়া কত অর্থই না কত প্রকারের লটারীর টিকিটে অপব্যয় করিয়া আসিতেছেন, কোনদিন কাম্য ফল লাভ করিতে পারিয়াছেন কি ? তবে কোন আশায় ? [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড উত্তর তাহার হয়ত একটা ছিল, கி. ওই ভাগ্য । আজীবনের ব্যর্থ চেষ্টা শেষ মূহুর্তে সফল হইতে দেখা গিয়াছে। মানুষ আশার দাস । সুতরাং চেষ্ট হইতে বিরত হইও না । অনিলবাবু প্রতি শনিবার রেসে খাইতেন । তিনিও কতকটা ভাগ্যের উপর বরাত দিয়া অনেকগুলি কাচ্চাবাচ্চার ভরণপোষণ করিতেন । বাক্সের টাকাকড়ি, স্ত্রীর অলঙ্কার, কলিকাতার ক্ষুদ্র বাস্তুখানি পর্য্যন্ত এই হার-জিতের পেলায় বাজি ধরিয়াছেন, তবু তিনি আশ ছাড়েন নাই । ভাগ্য ! কে জানে কোন মুহূৰ্ত্তে ইহার স্রোত ফিরিয়া যায় ! তিনিও কমলকে রেস খেলিতে উপদেশ দেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন যে, নিশ্চিত জয় তাহার ভাগে আনিয়া দিবেন। কমলের আশালুদ্ধ অন্তর মাঝে মাঝে চঞ্চল হইয়া উঠে। একবার রেসের টিকিট কিনিয়া ভাগ্যপরীক্ষা করিতে ক্ষতি কি ? কত লোকেই কত আশা বুকে বাধিয়া শনিবার দ্বিপ্রহরে উৰ্দ্ধশ্বাসে শুই মাঠের উদ্দেশেই ছুটে ! তাহাদের মধ্যে দীনতম ভিখারী হইতে ক্রেরপতি পর্য্যন্ত সকলেই আছেন । ব্যর্থকাম হইলে কেহ কি ওখানে যাইত ? মনে হয় ভাগ্য বলিয়া একটা প্রবল সূত্র কৰ্ম্মক্ষেত্রের মধ্যে প্রসারিত রহিয়াছে, যাহার পলকের ইঙ্গিতে সুখদুঃখ হাসি-কান্নার অভিনয় হয় । মনে হয়, জ্ঞানের অতীত, বিদ্যার অনায়ত্ত, বুদ্ধির অনধিগম্য সে ভাগ্য ; উদ্যম ও কৰ্ম্মের উপর ও তাহার প্রভাব বিস্তৃত । এই ভাগ্যই তাহাকে দুঃখের অনলপরীক্ষায় টানিয়া আনিয়াছে, চেষ্ট৷ করিয়৷ ইহ। হইতে উৰ্ত্তীর্ণ হইতে হইবে । শনিবার দিন সে অনিলবাবুকে বলিল, “আমায় নিয়ে যাবেন রেস কোসে ?” অনিলবাবু সবিস্ময়ে কহিলেন, “তুমি যাবে ? হুরূরে-- বেশ, বেশ ! এতদিনে বুদ্ধি হয়েছে দেখছি । শিউর টিপ , আজ যদি পকেট ভৰ্ত্তি না করিয়ে দিই, চল, চল ।” পকেট ভৰ্ত্তি না হউক বাড়ী ফিরিবার মুখে টাক গণিয়া দেখা গেল, ত্রিশটি টাকা লাভ হইয়াছে । এক মাসের মাহিনী । অনিলবাবু সোল্লাসে তাহার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন,