পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిe g প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড পেরিয়ে উঠে ধ্বনিত হয়েছিল । কিন্তু টিকল না। এদের এখানকার বিপ্লবের বাণীও বিশ্ববাণী । আজ পৃথিবীতে অন্তত এই একটা দেশের লোক স্বাজাতিক স্বার্থের উপরেও সমস্ত মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করচে। এ বাণী চিরদিন টিকৃবে কি-না কেউ বলতে পারে না। কিন্তু স্বজাতির সমস্যা সমস্ত মানুষের সমস্যার অন্তর্গত এই কথাটা বর্তমান যুগের অন্তর্নিহিত কথা। একে স্বীকার করতেই হবে । এই যুগে বিশ্ব-ইতিহাসের রঙ্গভূমির পর্দা উঠে গেছে। এতকাল যেন আড়ালে আড়ালে রিহাস্যাল চলছিল, টুকরো টুকরো ভাবে, ভিন্ন ভিন্ন কামরায়। প্রত্যেক দেশের চারদিকে বেড়া ছিল । বাহির থেকে আনাগোনা করবার পথ একেবারে ছিল না, তা নয়, কিন্তু বিভাগের মধ্যে মানব-সংসারের যে চেহার দেখেছি আজ তা দেখিনে । সেদিন দেখা যাচ্ছিল একটি একটি গাছ, আজ দেখছি অরণ্য । মানব-সমাজের মধ্যে যদি ভার-সামঞ্জস্তের অভাব ঘটে থাকে সেটা আজ দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর একদিক থেকে আর একদিক পৰ্য্যস্ত। এমন বিরাট করে দেখতে পাওয়া কম কথ। নর । টোকিয়োতে যখন কোরীয় যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, তোমাদের দুঃখটা কি ? সে বললে, আমাদের কাধে চেপেছে মহাজনের রাজত্ব, আমরা তাদের মুনফার বাহন। আমি প্রশ্ন করলুম, যে কারণেই হোক তোমরা যখন দুৰ্ব্বল তথন এই বোঝা নিজের জোরে ঝেড়ে ফেলবে কি উপায়ে ? সে বললে, নিরুপায়ের দল আজ পৃথিবী জুড়ে, দুঃখে তাদের মেলাবে – যারা ধনী যারা শক্তিমান তারা নিজের নিজের লোহার সিন্ধুক ও সিংহাসনের চারদিকে পৃথক হয়ে থাকবে, তারা কখনো মিলতে পারবে না । কোরিয়ার জোর হচ্চে তার দুঃখের জোর । দুঃখী আজ সমস্ত মানুষের রঙ্গভূমিতে নিজেকে বিরাট করে দেখতে পাচ্ছে, এইটে মস্ত কথা। আগেকার দিনে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে দেখেচে বলেই কোনমতে নিজের শক্তিরূপ দেখতে পায়নি—অদৃষ্টের উপর ভর করে সব সহ করেচে। আজ অত্যন্ত নিরুপায়ও অন্তত সেই স্বৰ্গরাজ্য কল্পনা করতে পারচে যে-রাজ্যে পীড়িতের পীড়া যায়, অপমানিতের অপমান ঘোচে । এই কারণেই সমস্ত পৃথিবীতেই আজ দুঃখজীবীরা নড়ে উঠেচে। যারা শক্তিমান তারা উদ্ধত হয়ে উঠেচে । দুঃখীদের মধ্যে আজ যে শক্তির প্রেরণা সঞ্চারিত হয়ে তাদের অস্থির করে তুলচে তাকে বলশালীরা বাইরে থেকে ঠেকাবার চেষ্টা করচে—তার দূতদের ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাদের কণ্ঠ দিচ্চে রুদ্ধ করে। কিন্তু আসল যাকে সবচেয়ে ওদের ভয় করা উচিত ছিল সে হচ্চে দুঃখীর দুঃখ —কিন্তু তাকেই এরা চিরকাল সবচেয়ে অবজ্ঞা করতে অভ্যস্ত। নিজের মুনফার খাতিরে সেই দুঃখকে এরা বাড়িয়ে চলতে ভয় পায় না, হতভাগ্য চাষীকে দুর্ভিক্ষের কবলের মধ্যে ঠেসে ধরে শতকরা দুশো তিনশো হারে মুনফা ভোগ করতে এদের হৃৎকম্প হয় না । কেননা সেই মুনফাকেই এর শক্তি বলে জানে। কিন্তু মানুষের সমাজে সমস্ত আতিশয্যের মধ্যেই বিপদ, সে বিপদকে কখনোই বাইরে থেকে ঠেকানো যায় না । অতিশয় শক্তি অতিশয় অশক্তির বিরুদ্ধে চিরদিন নিজেকে বাড়িয়ে চলতেই পারে না। ক্ষমতাশালী যদি আপন শক্তিমদে উন্মত্ত হয়ে না থাকত তাহ’লে সবচেয়ে ভয় করত এই অসাম্যের বাড়াবাড়িকে—কারণ অসামঞ্জস্য মাত্রই বিশ্ববিধির বিরুদ্ধে । মস্কে থেকে যখন নিমন্ত্রণ এল তখনো বলশেভিকদের সম্বন্ধে আমার মনে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না । তাদের সম্বন্ধে ক্রমাগতই উণ্টে উন্টে কথা শুনেছি। আমার মনে তাদের বিরুদ্ধে একটা থটুকা ছিল। কেননা গোড়ায় ওদের সাধনা ছিল জবরদস্তির সাধনা । কিন্তু একটা জিনিষ লক্ষ্য করে দেখলুম ওদের প্রতি বিরুদ্ধতা যুরোপে যেন অনেকটা ক্ষীণ হয়ে এসেচে। আমি রাশিয়াতে আসূচি শুনে অনেক লোকেই আমাকে উৎসাহ দিয়েচে । এমন কি অনেক ইংরেজের মুখেও ওদের প্রশংসা শুনেচি। অনেকে বলেচে ওরা অতি আশ্চৰ্য্য একটা পরীক্ষায় প্রবৃত্ত। আবার অনেকে আমাকে ভয় দেখিয়েচে–কিন্তু প্রধান ভয়ের বিষয় আরামের অভাব, বলেচে অাহারাদি সমস্তই এমন মোট রকম যে, আমি তা সহ্য করতে পারব না । তা ছাড়া এমন কথাও অনেকে বলেচে আমাকে যা