পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سرet(ف প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড ক্ষেত আছে সেখানে সব গমের চাষ । আট ঘণ্টা করে আমাদের খাটনি, প্রত্যেক পঞ্চম দিনে আমাদের ছুটি। আমাদের প্রতিবেশী যে-সব চাষী নিজের ক্ষেত নিজে চযে, তাদের চেয়ে আমাদের এখানে অন্তত ছুনো ফল উৎপন্ন হয়। প্রায় গোড়াতেই আমাদের এই ঐকত্রিক চাষে দেড় শো চাষীর ক্ষেত মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৯ সালে অৰ্দ্ধেক চাষী তাদের ক্ষেত ফিরিয়ে নিলে । তার কারণ সোভিয়েট কমুনি দলের প্রধান মন্ত্রী স্ট্যালিনের উপদেশ আমাদের কৰ্ম্মচারীরা ঠিক মতো ব্যবহার করেনি। তার মতে ঐকত্রিকতার মূল নীতি হচ্চে সমাজবদ্ধ স্বেচ্ছাকৃত যোগ। কিন্তু অনেক জায়গায় আমলারা এই কথাটা মনে না রাখাতেই গোড়ার দিকে অনেক চাষী ঐকত্রিক কৃষিসমন্বয় ছেড়ে দিয়েছিল। তার পরে ক্রমে তাদের মধ্যেকার সিকির ভাগ লোক আবার ফিরে এসেচে। এখন আগেকার চেয়ে আরো - আমরা বল পেয়েছি । আমাদের দলের লোকের জন্যে নতুন সব বাস, একটা নতুন ভোজনশালা, আর একটা ইস্কুল তৈরি আরম্ভ হয়েচে ।’’ তারপরে সাইবীরিয়ার একজন চাষী স্ত্রীলোক বললে, “সমবেত ক্ষেতের কাজে আমি প্রায় দশ বছর আছি । একটা কথা মনে রেখে ঐকত্রিক কৃষিক্ষেত্রের (collective farm) সঙ্গে নারী উন্নতি প্রচেষ্টার ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। আজ দশ বছরের মধ্যে এখানে চাষী মেয়েদের বদল হয়েছে যথেষ্ট । নিজের উপর তাদের অনেক বেশি ভরসা হয়েচে । যে-সব মেয়ে পিছিয়ে আছে, ঐকত্রিক চাষের ষার প্রধান বাধ, এরাই তাদের মন গড়ে তুলচে । আমরা মেয়ে ঐকত্রিকর দল তৈরি করেছি, তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে ঘুরে বেড়ায়, মেয়েদের মধ্যে কাজ করে, চিত্তের এবং অর্থের উন্নতি সাধনে ঐকত্রিকতার স্থযোগ কত তা ওদের বুঝিয়ে দেয়। ঐকত্রিক দলের চাষী মেয়েদের জীবনযাত্রা সহজ ক’রে দেবার জন্য প্রত্যেক ঐকত্রিক ক্ষেত্রে একটি ক’রে শিশুপালনাবাস, শিশুবিদ্যালয় আর সাধারণ পাকশাল স্থাপিত হয়েচে ।” সুখোজ প্রদেশে জাইগাণ্ট নামক একটি স্ববিখ্যাত সরকারী কুযিক্ষেত্র আছে । সেখানকার একজন চাষী রাশিয়ায় ঐকত্রিকতার কি রকম বিস্তার হচ্চে সেই সম্বন্ধে আমাকে বললে, “আমাদের এই ক্ষেতে জমির পরিমাণ একলক্ষ হেক্টার (hectares) । গত বছরে সেখানে তিন হাজার চাষী কাজ করতো। এবছরে সংখ্যা কিছু কমে গেছে, কিন্তু ফসলের ফলন আগেকার চেয়ে বাড়বার কথা। কেননাফুমিতে বিজ্ঞানসম্মত সার দেবার এবং কলের লাঙল ব্যবহার করবার ব্যবস্থা হয়েচে । এই রকম লাঙল এখন আমাদের তিনশোর বেশি আছে। প্রতিদিন অামাদের আটঘণ্টা কাজ করবার মেয়াদ । যারা তার বেশি কাজ করে তারা উপরি পারিশ্রমিক পায় । শীতের সময় ক্ষেতের কাজের পরিমাণ কমে, তখন চাষীরা বাড়িতৈরি রাস্তা-মেরামত প্রভৃতি নান কাজে শহরে চলে যায়। এই অকুপস্থিতির সময়েও তারা বেতনের এক-তৃতীয়াংশ পেয়ে থাকে আর তাদের পরিবারের লোক তাদের নিদিষ্ট ঘরে বাস করতে পায় ।” আমি বললেম, “ঐকত্রিক কৃষিক্ষেত্রে আপন স্বতন্ত্র সম্পত্তি মিলিয়ে দেওয়া সম্বন্ধে তোমাদের আপত্তি কিম্বা সম্মতি যদি থাকে আমাকে স্পষ্ট করে বলে ।” পরিদর্শক প্রস্তাব করলে হাত তুলে মত জানানো হোক। দেথা গেল যাদের সম্মতি নেই এমন লোকও অনেক আছে । অসম্মতির কারণ তাদের বলতে বললুম— ভালো করে বলতে পারলে না। একজন বললে, আমি ভালো বুঝতে পারিনে। বেশ বোঝা গেল অসম্মতির কারণ মানব চরিত্রের মধ্যে। নিজের সম্পত্তির প্রতি নিজের মমতা, ওটা তর্কের বিষয় নয়, ওটা আমাদের সংস্কারগত। নিজেকে আমরা প্রকাশ করতে চাই, সম্পত্তি সেই প্রকাশের একটা উপায় । তার চেয়ে বড়ো উপায় যাদের হাতে আছে তারা সম্পত্তিকে গ্রাহ করে না । সমস্ত খুইয়ে দিতে তাদের বাধা নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে আপন সম্পত্তি তার আপন ব্যক্তিরূপের ভাষা-সেট। হারালে সে যেন বোবা হয়ে যায়। সম্পত্তি যদি কেবল আপন জীবিকার জন্মে হ’ত, আত্মপ্রকাশের জন্যে না হ’ত, তাহ’লে যুক্তির দ্বারা বোঝানো সহজ হ’ত যে ওটা ত্যাগের দ্বারাই জীবিকার উন্নতি হ’তে পারে। আত্মপ্রকাশের উচ্চতম উপায়, যেমন বুদ্ধি, যেমন