পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○o প্রবাসী--পৌষ ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড বুঝি, তার জন্তে চূড়ান্ত রকমের ত্যাগস্বীকার করতে আমরা রাজি। কবিকে জানাও, সোভিয়েট সম্মিলনের বিচিত্র জাতির লোক র্তার মারফৎ ভারতবাসীদের পরে তাদের আস্তরিক দরদ জানাতে চায়। আমি বলতে পারি যদি সম্ভব হ’ত আমার ঘরদুয়োর, আমার ছেলেপুলে সবাইকে ছেড়ে তার স্বদেশীয়ের সাহায্য করতে যেভূম।” দলের মধ্যে একজন ছিল তার মঙ্গোলীয় ছাদের মুখ । ভার কথা জিজ্ঞাসা করতেই জবাব পেলুম, “সে ধিরগিজজাতীয় চাষীর ছেলে, সে মস্কে এসেচে কলে কাপড় বোনার বিদ্যা শিখতে । তিন বছর বাদে এঞ্জিনিয়র হয়ে তাদের রিপাব্লিকে ফিরে যাবে—বিপ্লবের পরে সেখানে একটি বড়ে। কারখান স্থাপিত হয়েছে সেইখানে সে কাজ করবে।” একট কথা মনে রেখো, এর নানা জাতির লোক কলকারখানার রহস্য আয়ত্ত করবার জন্যে এত অবাধ উৎসাহ এবং সুযোগ পেয়েছে তার একমাত্র কারণ যন্ত্রকে ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র স্বার্থসাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না। যত লোকেই শিক্ষা করুক তাতে সকল লোকেরই উপকার, কেবল ধনীলোকের নয়। আমরা আমাদের লোভের জন্যে যন্ত্রকে দোষ দিই, মাতলামির জন্যে শাস্তি দিই তালগাছকে, মাষ্টীর মশায় যেমন নিজের অক্ষমতার জন্য বেঞ্চির উপরে দাড় করিয়ে রাখেন ছাত্রকে । সেদিন মস্কে কৃষি-আবাসে গিয়ে স্পষ্ট করে স্বচক্ষে দেখতে পেলুম দশ বছরের মধ্যে রাশিয়ার চাষীরা ভারতবর্ষের চাষীদের কত বহুদূরে ছাড়িয়ে গেছে। কেবল বই পড়তে শেখেনি, ওদের মন গেছে বলে, ওরা মানুষ হয়ে উঠেছে। শুধু শিক্ষার কথা বললে সব কথা বলা হ’ল না, চাষের উন্নতির জন্তে সমস্ত দেশ জুড়ে যে প্রভূত উদ্যম সেও অসাধারণ । ভারতবর্যেরই মত এদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, এইজন্তে কৃষিবিদ্যাকে যতদূর সম্ভব এগিয়ে দিতে ন পারলে দেশের মানুষকে র্যাচানো যায় না। এরা সে কথা ভোলেনি। এর অতি দুঃসাধ্য সাধন করতে প্রবৃত্ত । সিভিল সার্ভিসেরর আমলাদের দিয়ে এর মোট মাইনেক্স مہمہہم مہم سی. আপিস চালাবার কাজ করচে না, যারা যোগ্য লোক, যারা বৈজ্ঞানিক তারা সবাই লেগে গেছে । এই দশ বছরের মধ্যে এদের কৃষিচর্চা বিভাগের উন্নতি ঘটেছে, তার খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে জগতের বৈজ্ঞানিক মহলে । যুদ্ধের পূৰ্ব্বে এদেশে বীজ বাছাইয়ের কোন চেষ্টাই ছিল না। আজ প্রায় তিন কোটি মন বাছাই-করা বীজ এদের হাতে জমেছে। তা ছাড়া নূতন শস্যের প্রচলন শুধু এদের কৃষিকলেজের প্রাঙ্গণে নয়, দ্রুতবেগে সমস্ত দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচে । কৃষি সম্বন্ধে বড়ে বড়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাশালা আঞ্জরবাইজান, উজবেকিস্তান, জর্জিয়া, যুক্রেন, প্রভৃতি রাশিয়ার প্রত্যন্ত প্রদেশেও স্থাপিত হয়েছে। রাশিয়ার সমস্ত দেশ-প্রদেশকে জাতিউপজাতিকে সক্ষম ও শিক্ষিত করে তোলবার জন্তে এতবড় সৰ্ব্বব্যাপী অসামান্য অক্লাস্ত উদ্যোগ আমাদের মতে ব্রিটিশ সাবজেক্টের সুদূর কল্পনার অতীত। এতটা দূর পর্য্যন্ত করে তোলা যে সম্ভষ এখানে আসবার আগে কখনো আমি তা মনেও করতে পারিনি । কেননা শিশুকাল থেকে আমরা যে law and order-এর আবহাওয়ায় মাস্থ্য, সেখানে এর কাছে পৌছতে পারে এমন দৃষ্টান্ত দেখিনি। এবার ইংলণ্ডে থাকৃতে একজন ইংরেজের কাছে প্রথম শুনেছিলুম সাধারণের কল্যাণের জন্যে এরা কিরকম অসাধারণ আয়োজন করেচে। চোখে দেখলুম–এও দেখতে পেলুম, এদের রাষ্ট্রে জাতিবর্ণবিচার একটুও নেই। সোভিয়েট শাসনের অন্তর্গত বৰ্ব্বর প্রায় প্রজার মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের জন্য এরা যে প্রকৃষ্ট প্রণালীর ব্যবস্থা করেচে ভারতবর্ষের জনসাধারণের . পক্ষে তা দুলভ। অথচ এই অশিক্ষার অনিবাৰ্য্য ফলে আমাদের বুদ্ধিতে চরিত্রে যে দুৰ্ব্বলতা, ব্যবহারে যে মূঢ়তা, দেশবিদেশের কাছে তার রটনা চলচে। ইংরেজিতেই কথা চলিত আছে, যে কুকুরকে ফাসি দিতে হবে ত:কেরদনাম দিলে কাজ সহজ হয় । যাতে বদনামটা কোনোদিন না ঘোচে তার উপায় করলে যাবজ্জীবন মেয়াদ ও ফাসি দুই-ই মিলিয়ে নেওয়া চলে। ইতি ১লা অক্টোবর, ১৯৩০ | { ঐযুক্ত প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীসকে লিখিত ]