পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞানের নূতন রূপকথা ঐচারুচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য, এম-এ প্রচলিত কথা হইতে বিভিন্ন কোন নূতন কথা যখনই বিজ্ঞান বলিতে গিয়াছে, তখনই জনসাধারণ উহাকে রূপকথা বলিয়া ধরিয়া লইয়াছে—বিজ্ঞানের ইতিহাসে ইহ বরাবরই দেখা যায় ; অবশ্ব কালের প্রবাহে এই রূপকথাই শেষে অপরূপ সত্য কথা বলিয়া প্রতিভাত হইয়াছে। তবে গ্যালিলিওর যুগে নৃতন কথা বলার জন্য বক্তাকে নির্যাতিত হইতে হইত,—পণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট হইতেও,আর এখনকার কালে জনসাধারণ যাহাই বলুন না কেন, বৈজ্ঞানিক মহলে তাহার রীতিমত যাচাই চলিতে থাকে। সেকালে গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রস্তুত করিয়া আকাশে নুতন ব্রহ্মাণ্ড দেখিবার জন্য পণ্ডিতমণ্ডলীকে যখন নিমন্ত্রণ করিলেন, তখন র্তাহারা সে-নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিলেন না, পাছে ইন্দ্রিয়ের সাক্ষ্য র্ত্যহাদের চিরদিনের পোষিত ধারণাকে আঘাত দেয় ; কিন্তু একালে জাৰ্ম্মানি হইতে আইনষ্টাইন যখন তাহার নূতন আপেক্ষিক-তত্ত্ব প্রকাশ করিলেন ইংলণ্ডের এডিংটন পরীক্ষা দ্বারা তাহাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে লাগিয়া গেলেন, অথচ ইংলণ্ড ও জাৰ্ম্মানির মধ্যে তখন তুমুল সংগ্রাম। আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক-তত্ত্ব ব্ৰহ্মাণ্ডের ধারণাটা একেবারে বদলাইয় দিয়াছে, প্রাকৃতিক ঘটনাকে একেবারে নূতন করিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছে। এই তত্ত্ব কতকগুলি ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিল যাহ পরীক্ষায় সত্য প্রতিপন্ন হইয়াছে, কয়েকটি অমীমাংসিত ব্যাপার ছিল এই তত্ত্ব তাহার মীমাংসা করিয়া দিয়াছে। দেশকাল সম্বন্ধে মানবের পূৰ্ব্বধারণার আমূল পরিবর্তন করিয়া—ঐ অরূপ সম্বন্ধে এই তত্ব নূতন রূপ কল্পনা করিয়া-নৃত্তন করিয়া গতিশাস্ত্র রচনা করিয়াছে। এই গতিশাস্ত্র হইতে এমন সব ব্যাপার দাড়ায়, যাহা জনসাধারণের নিকট শুধু ছজ্ঞেয় নয়, একেবারে প্রহেলিক, রূপকথা । এক ফুট লম্বা একটা লাঠি সাম্নে পড়িয়া আছে, তুমি বলিৰে এক ফুট, আমি বলিব এক ফুট, যে-কেহ দেখিবে বলিবে এক ফুট, এই তো সোজাসুজি কথা। কিন্তু আইনষ্টাইনের তত্ত্ব হইতে এই দাড়ায় যে, এরোপ্লেনে উড়িয়া যাইতে যাইতে যদি তুমি এই লাঠিটা দেখ তো আর তোমার নিকট উহা এক ফুট বলিয়া বোধ হইবে না এবং যত জোরে তুমি চলিয়া যাইবে তত ছোট বলিয়া উহা মনে হইবে ; আমি অবশ্ব বরাবরই এক ফুট দেখিতে থাকিব এবং এরোপ্লেন হইতে নামিয়া আসিয়া যদি তুমি দেখ, তাহা হইলে তোমার নিকটও উহা সেই এক ফুট বলিয়াই মনে হইবে । আলোর বেগ হইল প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল ; তোমার এরোপ্লেনের গতি যদি আলোর বেগের সমান হয় তাহ হইলে এই লাঠিটা হইবে শূন্ত, উহা একেবারে মিলাইয়া যাইবে । আর আইনষ্টাইন বলেন যে, আলোর অপেক্ষ অধিক গতিসম্পন্ন কিছু হইতে পারে না। গতি কত হইলে উহা কি পরিমাণ ছোট হইবে আইনষ্টাইন অঙ্ক কষিয়া ঠিক করিলেন । তোমার এরোপ্লেন, মনে কর, সেকেণ্ডে ১,৬১,০০০ মাইল বেগে চলিতেছে এবং এরোপ্লেন যেদিকে চলিতেছে তুমি সেইদিকে লম্বা হইয়া সটান শুইয়া আছ। পৃথিবীতে দাড়াইয়৷ যদি নিমেষের মধ্যে তোমাকে দেখা সম্ভব হয় তো দেখিব তুমি লম্বায় ছয় ফুটের জায়গায় তিন ফুট হইয়া গিয়াছ, কিন্তু চওড়ায় যেমন তেমনি আছ— অপরূপ চেহারা ! তুমি কিন্তু বলিবে সাম্নে আয়না রাখিয়া আমি তো বরাবরই দেখিয়াছি কই, চেহারার তো কোন বৈপরীত্য ঘটে নাই ; তামা তুলসী গঙ্গাজল লইয়া জোর গলায় তুমি এই কথা বলিবে, আমিও তেমনি গলায় বলিব যে, আমি দেখিয়াছি তুমি থ্যাবড়া হইয়া গিয়াছ ; এ দ্বন্ধের মীমাংসা হইরেন, কারণ কেহই ভুল দেখি নাই ; এ ধাধা বা মরী নয় ; যে যাহা দেখিয়াছে ঠিকই দেখিয়ছে: ७े श्रृिंभव। দেখিতেই হইবে। আর তুমি এরোপ্লেন ইহঁতে আমাকে এবং পৃথিবীর লোককে কি রকম দেখিবে ? তুমি যেদিকে