পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ট্রেনের পথে ৩২১ একলাফে প্রায় তার ভুড়ির উপর দিয়ে প্ল্যাটফরমে নেমে পড়ল। উইলফোসের প্রভাবে জেতবার ভরসা কম দেখে হঠাৎ স্বরট নরম করে এনে বললে, ‘মশাই, ওদিকের গাড়ীতে সব ঢের জায়গা খালি পড়ে, এই দেখে আসছি। যান না মশাই দয়া করে ওদিকে,-এ গাড়ীতে মেয়ের রয়েছেন কি না।’ আসলে ‘মেয়ের কথাটি গৌরবে বহুবচন । একটি মাত্র মেয়ে, তাও এত রোগা যে আধখানি বললেও চলে,--ওধারের বেঞ্চিতে বসেছিল একখানা মাসিকপত্র দিয়ে নিজের মুখখানা যথাসম্ভব আড়াল করে। কনক অস্থিরপদে সেই গাড়ীর সাম্নেই প্লাটফরমে পায়চারি করে বেড়াতে লাগল, গাড়ীতে উঠে দাড়াতে সাহস হ’ল না । উইলফোসটোসা ওসব বাজে কথা, কোনই কাজে লাগে না, দেখ গেল ! - এখন এই নীচ থেকে বিনয় বচন বলে কয়ে যদি আরোহীদের ঠেকান যায় সেই চেষ্টা দেখাই ভাল। গাড়ীতে দাড়িয়ে ওসব কথা তো বলা যায় না, মেয়েটি শুনতে পাবে যে ! ভাববেই বা কি ? কমক একজন অপরিচিত পুরুষ, যখন মেয়েটির গাড়ীতে উঠতে পেরেছে, তখন আর পাচজনেই বা কেন পারবে না ? এর কোনো সহজ উত্তর হয়ত মেয়েটি খুজেই পাবে না । কিন্তু কনকের মন তো আর তা বোঝে না । সে হ’ল কনক—সে আলাদা—তাই বলে ঐ মাড়োয়ারী, বাবুর মত যত বাজে লোক এসে এই গাড়ীতে ভিড় করবে ?—ছি ! তার এখন দেখা উচিত যাতে মেয়েটি স্বচ্ছনে নিজের গন্তব্য স্থানে পৌছতে পারে, কোনো রকম অসুবিধা তার না হয় । সে ভদ্রলোক, তার উপর স্বাঙালী,–এবং মেয়েটির মুখ দেখে ও শাড়ী পরবার ভঙ্গী দেখে ঠিক বোঝা না গেলেও সে যখন বাংলা কাগজ পড়ে তখন তাকেও বাঙালী বলেই ধরে নেওয়া যায় । কাজেই তাকে রক্ষা করবার অধিকার কনকের যেমন আছে, আর পাচজনের কেমন করে তা থাকৃতে পারে ? নিজের অধিকারের গৰ্ব্বে মনটাকে নাড়া দিয়ে কনক আর একবার গাড়ীর ভিতরটা দেখে নিল । খয়েটি তেমনি করেই বসে আছে। रठ}श्रेट्टे .. یہی عیہی ہستحتعہ - 5 مجمعہ"***** গাড়াও ছাড়ে না ছাই। থার্ডক্লাস প্যাসেঞ্জারগুলো তখনও ঠেলাঠেলি করে ভিড় করছে, বোচক-চিকি মালপত্র তখনও প্ল্যাটফরমে সব ছড়ানো । না, এ বড় অন্যায়। ঐ রকম ক্লাসের যাত্রীদের জন্যে ট্রেন লেট হবে ?—এটা অন্তত কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত । ট্রেন লেট হবার দরুণ উচু ক্লাসের যাত্রীদের কত ক্ষতি হতে পারে। এদের দুটো বোচক পড়ে থাকৃলেই বা কি ! কি-ই বা আছে ওতে ? কাসার ঘটি, পান সাজবার সরঞ্জাম, বড়জোর একটা আড়াই টাকা দামের কম্বল—এই তে ? কারুর যদি তা পড়েই থাকে তে কনক জানতে পারলে তখনি তাকে তিনটে টাকা দিয়ে দিতে পারে। তাই বলে এই সব তুচ্ছ কারণে গাড়ীটা এতক্ষণ দেরি করান ? না, ইংরেজের রাজত্বে আজকাল চারদিকেই বিশৃঙ্খল, চারদিকেই অনিয়ম ! হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল, তখনও পাচ মিনিট দেরি আছে ট্রেন ছাড়তে । ও:-—তাহলে সময় এখনও পার হয়নি । কিন্তু এতক্ষণ ট্রেনটা দাড় করিয়ে রাখবারই বা মানে কি, তাও তো বোঝা যায় না। যাক, ভদ্রলোকেরা সকলেই যে যার গাড়ীতে উঠে রয়েছে, এ গাড়ীতে নতুন করে আর কারুর আসবার সম্ভাবনা কম। কনক দরজা খুলে লাফ দিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়ল। মেয়েটি চকিত হয়ে কাগজখানা মুখের উপর থেকে সরিয়ে তাকালে । মুখখনি সুন্দর হয়ত বলা যায় ; কিন্তু সুন্দর কি অসুন্দর সে প্রশ্ন মনে জাগবার আগেই চোখে পড়ে তার মুখের ভাবের অত্যস্ত আত্মনির্ভরশীলতা । সে যে কোনো কিছুতে ভয় পায় না, তার গাড়ীতে কতজন পুরুষ মাতুষ উঠল কি না-উঠল সে বিষয়ে যে তার বিন্দুমাত্র কৌতূহলও নেই, উদ্বেগও নেই, বিপদে পড়লে নিজেকে রক্ষা করবার স্বাভাবিক কৌশল কি শক্তি অপর সকল প্রাণীর মতই যে তারও আছে—একবার তার মুখের সবট। দেখতে পেয়েই কনক সে কথাট এক মুহূর্তে বুঝে নিলে। এই মারহাট্টী-ধরণের মেয়েটিকে রক্ষা করবার জন্তে কনকের এ গাড়ীতে ওঠার সম্পূর্ণ নিম্প্রয়োজনত উপলব্ধি করে তার মনটা অপ্রসন্ন হয়ে উঠল ।