পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ফেলতে পারি। আমার মা, দুঃখিনী মা,—কমল, তার পায়ের ধূলো মাখুলে আমার গায়ের জালা জুডুবে ।” পরেশ তাহার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিল, “রাত্রি শেষ হোক, তোমায় যেমন করে পারি আমি মার কাছে নিয়ে যাবই। স্থির হও ভাই ।” কমল শ্রান্তিভরে পরম তৃপ্তিতে চক্ষু মৃদিল । f & শ্মশানের চিতা তখনও নিবে নাই । রাত্রিশেষে প্রবল গজ্জন তুলিয়া বাতাস আসিয়াছিল, এখনও তাহার মন্দীভূত বেগ চিতার নির্বাপিতপ্রায় অগ্নিরাশিকে উদ্দীপ্ত করিয়া রহিয়া রহিয়া মৃদু বিলাপধ্বনিতে শো-শে। করিতেছিল । নদীতীরে বসিয়া সৰ্ব্বহার অভাগিনী শূন্য দিগন্তের পানে চাহিয়া হয়ত শোকান্ত প্রকৃতির ক্ৰন্দনই শুনিতেছিলেন। পায়ের তলায় অবিরাম কুলু ধ্বনিতে নদী এই বিলাপ গাথাই গাহিতেছে, আকাশে পাংশু সূৰ্য্য মেঘের আড়ালে শোকমলিন,-ওপারের ধূসর দিগন্ত ধেন চিতাধুমের বাপে স্তব্ধ হইয়া গিয়াছে। মাঠের পর মাঠ চলিয়াছে—তৃণশূন্ত–শস্যশৃন্ত—বৃক্ষশূন্ত । যেন আভরণহীন বাংলার সর্বহার বিধবা । শ্মশানের আশেপাশে খানিকটা জঙ্গল ও দুই চারিট বাবল গাছ। তার চারিপাশে নরকঙ্কালের রাশি। ঝোপের মধ্যে দিনের বেলায় শৃগাল মাংসের লোভে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কুকুর একটু দূরে একখানা হাড় লইয়া পরম আরামে চিবাইতেছে, গাছে বসিয়া বিকট কী—ক স্বরে কাক ডাকিতেছে । মানব-জীবনের লশ্বরতা এখানে আসিলে যেমন উপলব্ধি হয় এমন আর কোথাও নহে । নিৰ্ব্বাপিতপ্রায় চিতার পানে চাহিয়া শোকস্তব্ধ জননী বসিয়াছিলেন। নয়নে অশ্রু নাই, হৃদয়ে তরঙ্গ নাই, মুখে ব্যথার চিহ্ন নাই, মেন ধীর স্থির প্রশান্ত সিন্ধু। যেন খামবৃক্ষ পুষ্পপল্লবে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছিল, অকস্মাৎ বজ্র নামিয়া সব জালাইয়া দিয়াছে । যেন কুলপ্লাবী নদীর স্রোত কে শুষিয়া লইয়াছে ! ভূমিকম্পে নগর শ্মশান হইয়া গিয়াছে ! রাজমাত २१ হায়রে সংসার ! স্নেহের নীড় বাধিয়া কতই না যত্বে মাতুষ সুখকে আয়ত্তে আনিবার চেষ্টা করে, প্রতি নিঃশ্বাসে সে সুখ শিথিল বকুল ফুলের মতই পথের ধূলায় লুটাইয় পড়ে । ওই পরপারের রাজ্যেও কি কোন নিয়ম নাই ? মাহুষের আয়ু কি কোন হিসাবদক্ষ মুহুরীর খাতায় নির্ভুল করিয়া লেখা থাকে না ? মায়ের কোলে আসি৷ (* পুত্র একদিন জগতের পরিচয় লাভ করে, মায়ের স্নেহে যার দেহের প্রতি রক্তকণা বাড়িয়া উঠে, সে-ই আবার মায়ের বুকে শেল হানিয়া অকালে সেই মায়ের কোলেই নয়ন মুদে ! বৃদ্ধ পড়িয়া থাকে, শিশু চলিয়া যায়। কেন এ অনিয়ম ? মেনকা ডাকিল,—“মা, ওঠ, বাড়ী চল ।” শুদ্ধ পাষাণমূর্তির মতই মা একদৃষ্টে চিতার পানে চাহিয়া আছেন। মেনকা তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া কাদিতে কাদিতে বলিল, “ভগবানের কাছে আমরা কি অপরাধ- বুৰ্বে ছিলাম, মা, যে এত শাস্তি! উষা গেল, খুকী গেল, এক' মাস যেতে-নী-যেতে রমা ও আমাদের ছেড়ে গেল । আবার কমল—” মা কাদিলেন না, পূৰ্ব্বের মতই চিতার পানে চাহিয়৷ রছিলেন । মেনকা বলিল, “দোহাই মা, তুমি একবার কাদ, একবার চেচিয়ে কঁাদ । আমি জানি তোমার কি ব্যথা ! বুক ফেটে যাচ্ছে, একবার কাদ ।” ম। মেনকার পানে চাহিয়া একটি নিঃশ্বাস ফেলিয়। বলিলেন, “কাদতে যে আমি পারি না, মা ! যেন দম আটকে আসছে। খুকীর খেলাঘর তেমনি পাতান আছে, সেদিকে চেয়ে চোখে জল আসে না । রমণর ছেলের ছোট কথা বালিশ জামা মোজা তাকের ওপর তোল রয়েছে, সে সবও চেয়ে চেয়ে দেখি ; উষা ত অনেকদিন আগেই সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে গেছে। আবার কমল-" কথা শেষ না করিয়া তিনি চিতার পানে নিনিম্যে নয়নে চাহিয়া রহিলেন । - পরেশ আসিয়া মাকে বলিল, “আমি জানতাম সংসারে অর্থই সব, সে ভুল আমার ভেঙেছে । স্নেহ