পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"లిలి: প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড কহিল, ‘জানো বিষ্ণুদা, এই জ্যোৎস্নাকে আমার মনে হয় যেন বনজ্যোৎস্নার হাসি। এ আমার কল্পনার রূপ, সেই রূপই আমি চাদের আলোতে দেখি । তুমি বনজ্যোৎস্না জানে না, বিমুদা ?’ --‘ল |’ ঠিক আন্ধারে একটি মেয়ের মত করিয়া পরিমল কহিল, তার নামেই তো আমি কবিতা লিখি, বিহুদা, বনজ্যোৎস্নার নামে ।’ বিনয় চম্‌কাইয়া উঠিল। এই মুখ-চোরা ভীরু ছেলেটি আজ তাহাকে সহসা এসব কি কথা বলিতেছে ! সে কোনদিন কাহারও কাছে কবিতা লেখে বলিয়াই স্বীকার করিত না। তবে আজ কি জরের ঘোরে মনের সমস্ত গোপন-কথা প্রকাশ করিয়া দিবে ? বিনয় তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, “তুমি বেশী কথা কয়ে না পরিমল, তাতে জর বাড়বে ।’ পরিমল পাশ ফিরিয়া অভয়-দেওয়ার স্বরে কহিল, ‘না বিষ্ণুদা, আজ আমায় চুপ করতে বলে না, আজ আমার ভেতর কথার জোয়ার এসেছে ।" বিনয় চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। পরিমল ক্ষীণশ্বরে বলিয়৷ চলিল, তার নাম বনজ্যোৎস্না, কিন্তু আমার ছন্দের কোঠায় তাকে আমি একটু বদলে দিয়েচি - তোমার শৌরসেনী শুনতে ভাল লাগে না বিমুদ ! সেই,—হল পিয় সহি ? —"লাগে৷ ” —“তইতে তো তার নাম দিয়েছি বনবাসিনী। কখ মুনির আশ্রমের লতারই মত। নীল রঙের শাড়ি সে পরে, তেম্বনিতর তমুদেহ । না বিমুদ,রঙ তার জ্যোৎস্নার মত নয় সত্যি, কিন্তু হাসি তে ওরই মত।’ বিনয় নীরবে শুনিয়া গেল । পরিমলের কণ্ঠে একটা তৃপ্তির সুর জাগিয়া উঠিয়াছে, বাধা দিয়া তাহা ক্ষুঃ করিতে তাহার মন উঠতেছিল না। বাহিরের জ্যোংস্কা কেমন জাগর-স্নান হুইয়া উঠিয়াছে। তাহারই এক ঝলক সরিয়া আসিয়া রুগ্ন পরিমলের মুখের উপর পড়িল । গলাটা পরিষ্কার করিয়া পরিমল কহিল, ‘জানো বিহুদ, আমার কবিতাগুলি কিন্তু ভাষার মনেরই কথা। সে কথাগুলো গোপনে মনের ভেতর মৌমাছির মত গুনগুনিয়ে বেড়ায় তাদেরই আমি ছন্দের ভেতর দিয়ে বাইরে আনতে চাই। কিন্তু যে-সব কথা মনের ভেতরে একেবারে ঝলমল করে, বাইরে এলে তার রূপ যেন স্নান হয়ে যায়। সে আমার কি দুঃখ বিহুদা ! তবু কেন লিখি জানো ? --'কেন ?" —“আমার এ আনন্দ বাইরে প্রকাশ না করে আমি থাকৃতে পারি না বিমুদা।’ বিনয় স্তন্ধ বিস্ময়ে আবছা বিছানাটার পানে চাহিয়৷ রহিল। পরিমলের চোখদুটি জ্যোৎস্বালোকে যেন ছলছল করিতেছে। সে যে ই-না কি বলিবে তাহাই ভাবিয়া পাইল না। রজনী গভীর হইয়াছে। পৃথিবীর বুকে জীবনের একটু স্পন্দনও নাই। আর রুগ্ন পরিমল কবিতার মত করিয়া বোধ হয় বা প্ৰলাপই বকিয়া যাইতেছে। কথার ভিতরও কেমন একটা জড়তা । –‘বিহুদা !’ —"কেন ? —“তার কথা ভেবেই তো আমি কবিতা লিখি বিমুদ, কিন্তু সে খবর ও একটুও জানে না।’ —“তুমি ওকে বলনি ? —“আমি বলব ? না বিষ্ণুদা, অত সাহস তো আমার নেই। ওর চোখে চোখেও কি আমি চাইতে পারি ? ওকে তো আমি এড়িয়েই চলি । কিন্তু তোমাকে আমার মনের কথাটি বললুম বিষ্ণুদা, বনজ্যোৎস্নাকে আমি ভালবাসি |’ ষে কাহিনী অন্য সময় শুনিলে বিনয় ছোট ছেলেটার পক্কতায় আর দুঃসাহসে বিরূপ হইয়া উঠিত তাহা আর এই নিস্তন্ধ রাতে জ্যোৎস্বালোকে তেমন দোষের মনে হইল না। এ স্বরের ভিতর উপহাসের বস্তু আর নাই, শুধু কেমন একটা করুণতার আভাস জাগিয় উঠিয়াছে। ইহার পর চুপ করিয়া দুজনে আরও খানিকক্ষণ কাটাইল । ঘুম-ভাঙা একটা পার্থী শিস দিয়া দূর হইতে