পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ3Հ প্রবাসী—পৌষ ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড ASA SSASAeMAMMAMAAAA মুত্রিত হইয়া যায়। কিশোর বয়স হইতেই তাহারা জানিয়া রাখে, পরাজয় এবং পরাধীনতাই ভারতে বিধাতার ৰিধান। বড় হইয় তাহারা বখন স্বাধীনভাবে চিন্তা করিতে শিখে, তখন এই তথ্য সত্য কি-না, এই বিতর্ক তাহাদের মনে উদিতই হয় না । বৰ্ত্তমানে প্রচলিত কতকগুলি ম্যাটিকুলেশন পাঠ্যপুস্তক হইতে উদ্ধৃত করিতেছি। শ্ৰীযুক্ত ডাক্তার রমেশচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের “ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস" বহুলপ্রচার পাঠ্যপুস্তক। তাহাতে আছে : "প্রকৃতির_প্রভাব। ভারতে বিস্তৃত উর্বর ভূমি আছে। এইখানে নানাপ্রকার শস্ত এবং মামুষের প্রয়োজনীয় বহুবিধ দ্রব্য উৎপন্ন হয় । আবার খনি ক্ল সম্পদেও ভারত সমৃদ্ধ । এই দেশে লৌহ, তাম্র, স্বর্ণ, রৌপ্য, মণিমাণিক্য, মুক্তাহীরকাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । ভারতসমুদ্রের উপকূলে অনেকগুলি উৎকৃষ্ট বন্দর আছে। এই সকল কারণে এককালে ভারতবর্ষ ধনসম্পদে ও ঐশ্বর্ঘ্যে পৃথিবীর সমস্ত দেশকে অতিক্রম করিয়াছিল। “প্রকৃতির এই অপৰ্য্যাপ্ত দানে ভারতের ভাগ্যে শুভ ও অশুভ, দুই প্রকার ফলই ফলিয়াছে। খাদ্যদ্রব্য সহজলভ্য হওয়াতে ভারতবাসী প্রকৃতির নয়নমনবিমোহন অতুলনীয় সৌন্দর্য্যে বিভোর হইবার অবসর পাইয়া কাব্য ও দর্শনের চর্চায় নিবিষ্ট হইতে, পারিয়াছিল এবং এইজন্মই ভারতে ব্রহ্মবিদ্যা, দর্শন, শিল্প ও সাহিত্যের অসাধারণ উন্নতি সম্ভবপর হইয়াছিল । কিন্তু এই কারণেই আবার ভারতের জনসাধারণ উত্তরের পাৰ্ব্বত্য জাতিসমূহের মত কৰ্ম্মকুশল ও কষ্টসহিষ্ণু হইতে পারে নাই; কাজেই ভারতের সমৃদ্ধিদ্বারা আকৃষ্ট হইয়। ঐ সকল পাৰ্ব্বত্য জাতি অল্পায়াসে বার-বার ভারতবর্ষ জয় করিয়াছে । “এতদ্ব্যতীত এদেশের ভূমি ও জলবায়ু সহজ জীবনযাত্রায় পক্ষে অনুকূল হওয়ায় প্রকৃতির সহিত মানবের সংগ্রাম অন্য দেশের ন্যায় ভারতবর্ষে কখনও তীব্র হইয়া উঠে নাই। তাই পদার্থবিজ্ঞানের দিকে লোকের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয় নাই এবং এই বিষয়ের চর্চা ইউরোপের স্থায় এদেশে তেমন প্রসার লাভ করে নাই । “এই দেশের আয়তন বিশাল । ইহার পর্বতসমূহ গগনস্পশী, ইহার নদীগুলি দৈর্ঘ্যে ও বিস্তৃতিতে অতুলনীয়, এই সকল বাধার ফলে সমগ্র ভারতবাসী এক বিরাট সম্মিলিত জাতিতে পরিণত হইয়। উঠতে পারে মাই । অতীতকালে সমগ্র ভারতবর্ষ বা ইহার অধিকাংশ ভাগকে এক রাজশক্তির অধীনে আনয়ন করিবার চেষ্ট। অনেকবার হুইয়াছে । কিন্তু কোন স্থায়ী ফললাভ হয় নাই। বহু মায়াস সহকারে ধে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হইত, অনতিবিলম্বেই তাহ পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হইত। দেখিতে দেখিতে ভারত বহু ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হুইয়া পড়িত এবং উহাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রন্থের জার অন্ত পাকিত না । এইয়াপে দেখা যায় যে, ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক অবস্থা দেশবাসীর ইতিহাস ও স্বভাব গঠনে বিশেষ প্রভাব বিস্তায় করিয়াছিল।" অধ্যাপক ঐযুক্ত গুরুত্বন্ধু ভট্টাচাৰ্য্য তাহার ম্যাট কুলেশন পাঠ্য “ভারতবর্ষের নূতন ইতিহাস” নামক পুস্তকে এই সকল কথারই পুনরাবৃত্তি করিয়াছেন। রায় প্রযুক্ত খগেন্দ্রনাথ মিত্র বাহাদুর র্তাহার ম্যাটি কুলেশন পাঠ্য ভারতবর্ষের ইতিহাসে লিখিয়াছেন :– “ভারতবর্ষ তিনদিকে সমুদ্র-পরিবেষ্টিত হইলেও ভারতীয়ের কোনও দিন নেী-সাধনে বিশেষ দক্ষত লাভ করিতে পারে নাই।...কিন্তু দুই একটি জাতি ব্যতীত ভারতবাসীরা সমুদ্রের এত সন্নিধ্য সত্ত্বেও নাবিকবিদ্যায় দক্ষ হইতে পারে নাই। জলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার মত নৌবল কোনও দিন যে ভারতবাসীর ছিল, তাহ বোধ হয় না ...তাহার কারণ, প্রথমতঃ ইহার তটভাগ সুদীর্ঘ হইলেও, বৃহৎ বৃহৎ অর্ণবপোতের আশ্রয়স্থল হইতে পারে এরূপ সুবিধাজনক স্থান বড় বেশী নাই। দ্বিতীয় কারণ, এদেশের ভূমি স্বভাবতঃই শস্তশালিনী হওয়াতে লোকের উদ্যমশীলতার অভাব । তৃতীয় কারণ এই মনে হয় যে ভারতবাসীরা চিরদিনই শান্তিপ্রিয় । সমুদ্র পার হইয়া অন্য জাতিকে পরাভব করিয়া অর্থসম্পদ বুদ্ধি করিতে হইবে, এরূপ কল্পনা তাহীদের মনে আসিত না ।" এইবার এই ম্যাটিকুলেশন পাঠ্য পুস্তকের উপরে উদ্ধৃত উক্তিগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখা যাক, ইহাদের মধ্যে কতখানি সত্য আছে । (১) পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য জাতি অপেক্ষ ভারতবাসী অতীতে কষ্টসহিষ্ণুতার অভাব অথবা ভীরুতার পরিচয় দিয়াছে কি ন । কোন জাতি কষ্টসহিষ্ণু এবং সাহসী কি না, তাহ সেই জাতির অতীত ইতিহাস আলোচনা করিলেই বুঝিতে পারা যায়। জগতে সম্ভবত: এমন জাতি বা দেশ নাই যাহা কোন-না-কোন-সময়ে অন্য কোন প্রবলতর জাতি কর্তৃক বিজিত হয় নাই। যে-ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আজ পৃথিবীব্যাপী তাহারই মূল দেশ ইংলণ্ডের কথা ধরুন না কেন । ইতিহাসের আদি যুগ হইতে ইংলণ্ড বার-বার পরপদানত হইয়াছে। কিন্তু সেজন্য একথা কোনদিনই কেহ বলিতে সাহস করেন নাই যে, ইংলণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থার কোনো মারাত্মক ক্রটির জন্য ইতিহাসের আদিযুগ হইতে ইংলণ্ড এইরূপে বার-বার পরপদানত হইতে বাধ্য হইয়াছে। এইবার ভারতের কথ। বিচার করা যাউক । ইতিহাসে বলে, ভারতবর্ষ আর্ব্যগণের আদিনিবাস নহে, আৰ্ষ্যগণও এদেশে আগন্ধক মাত্র । আর্য্যগণ যখন এদেশে আগমন করেন তখন ভারতবর্ষ দ্রাবিড়গণের অধিকারে ছিল । জার্ষ্যগণ সম্ভবতঃ সভ্যতায় দ্রাবিড়গণ অপেক্ষা হীনতর