পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা } আবখ্যকতা নাই। মেদিনীপুর জেলার সমান আয়তনের একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের অধীশ্বর পুরু জগদ্ধিজয়ী আলেকজাণ্ডারকে কি পরিমাণ বাধা দিয়াছিলেন তাহা আমরা দেখিয়াছি। পরবর্তী কালে খ্ৰীষ্টীয় দশম শতাব্দীর শেষে প্রায় সমগ্র পঞ্চনদ প্রদেশ জুড়িয়া এক ব্রাহ্মণ রাজবংশের রাজা বর্তমান ছিল। ইহাদিগকে শাহী-বংশ বলিত। ইহাদের রাজধানী ছিল উদকভাণ্ডপুর বা বর্তমান ওহিনে । এই রাজ্যেরই রাজা জয়পাল উত্তর-ভারতের অন্যান্য রাজগণের সহিত মিলিত হইয়া আমির সবুকৃতিগিনের পাৰ্ব্বত্য গজনীরাজ্য আক্রমণ করিয়াছিলেন । এই প্রত্যন্ত রাজ্যের রাজা এইরূপে নিজের কৰ্ত্তব্য ভাল করিয়াই করিয়াছিলেন। দৈব দুৰ্য্যোগে তিনি সফলকাম হইতে পারেন নাই, সে কথা স্বতন্ত্র। কাজেই বিভিন্নরাজ্যে বিভক্ত হইয়। ভারতের পতন হইয়াছে, অথবা রাজ্যগুলি প্রয়োজন কালে একত্র মিলিয়া কাৰ্য্য করিতে পারে নাই, ইহা সত্য নহে। (৩) পূৰ্ব্বে তিন নম্বরে রায় বাহাদুর ত্রযুক্ত মিত্র মহাশয়ের পুস্তক হইতে যেটুকু উদ্ধৃত করিয়াছি তাহা সত্য কি না, তাহ শ্ৰীযুক্ত মিত্র মহাশয়কেই পুনরায় বিবেচনা করিতে অনুরোধ করিতেছি । ভারতীয়ের কোনদিন নৌবিদ্যায় দক্ষতা লাভ করিতে পারে নাই, ইহা কি সত্য ? অতীতে ভারতবাসীর উদ্যমশীলতার অভাবের অভিযোগটাও কি সত্য ? ভারতবাসী কি সমুদ্র পার হইয়া দূর দেশে যাইয়। ঐ সকল দেশ অধিকার করিবার কল্পনা কখনও করে নাই ? এই ইতিহাসই কি আমাদের দেশের ভবিবাং আশাস্থলগণকে শিথিতে হহবে ? ভারতীয়গণ বিদেশ জয় করিয়াছে অধিকাংশস্থলেই সভ্যতা বিস্তার দ্বারা । মারিয়া-কাটিয়া দেশবাসিগণের রক্তে দেশ রঞ্জিত করিয়া দেশজয় করাকেই আমরা প্রকৃত বিজয় বলিয়া ভাবিতে অভ্যস্ত। তাই ভারত হইতে জ্ঞানের প্রদীপ হাতে লইয়া অসহ কষ্ট সহ করিয়া অসীম ধৈৰ্য্যের সহিত যে-সকল অধুনাবিস্ত মহাপ্রাণ মহাপুরুষ ভারতের নিকটবর্তী দেশসমূহে যাইয়া ঐ সকল দেশকে আলোকিত করিয়াছেন বা তাহাতে নবপ্রেরণা ভারতের ইতিহাসে প্রকৃতির প্রভাব 이8 জাগাইয়াছেন, তাহাদের বিজয় বৈজয়ন্তী কোনদিনই আমাদের চোখে তেমন করিয়া পড়ে না। অবশু ভারতের দেশ-বিজয় ব্যাপার সর্বত্রই এইরূপ রক্তপাত ছাড়া হয় নাই । ভারতের পূর্ব-দক্ষিণে, ভারতমহাসাগরের দ্বীপগুলিতে এরং নিকটবর্তী দেশগুলিতে প্রচলিত প্রথামত রক্তের স্রোত বহাইয়াই রাজ্য বিস্তার করিতে হইয়াছিল। ভারতীয়গণ কোনদিনই নৌবিদ্যায় দক্ষতা লাভ করে নাই এবং সমুদ্র পার হইয় রাজ্যজয় করে নাই, এমন কাচা কথা মিত্র মহাশয় কি করিয়া লিখিলেন ? সিঙ্গাপুর, স্বমাত্রা, জাভা, বলি, খাম, কাম্বোজ, চম্পা ইত্যাদি স্থানে হিন্দুরাজ্যের বিস্তার তবে কেমন করিয়া হইল ? এই সকল স্থানে হিন্দুরাজ্যের প্রতিষ্ঠা খ্ৰীষ্টাব্দের আরম্ভের দিকটায়, অথবা তাহারও পূৰ্ব্বে হইয়াছিল। আমাদের কিন্তু মনে হয়, মিত্র মহাশয় যাহা বলিয়াছেন, ঐতিহাসিক সত্য ঠিক তাহার বিপরীত । সমুদ্রপারের ভারতীয়গণ অতি প্রাচীন কাল হইতে নৌবিদ্যায় অসাধারণ দক্ষতা লাভ করিয়াছিল এবং তাহীদের চেষ্টায় ভারত-মহাসাগরের দ্বীপসমূহে এবং নিকটবর্তী দেশগুলিতে ভারতীয় প্রভুত্ব ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। মুসলমানগণ ভারতবর্ষ জয় করিয়া পঞ্চ শতাব্দীর অধিক কাল এই দেশ অধীনে রাখিতে সমর্থ হইয়াছিল। মুসলমানগণের পতনকালে দেশটা যখন ভিতরে বাহিরে সমস্ত রকমে পচিয়া গঁজিয়া উঠিয়াছিল, ঐ সুযোগে ইংরেজগণ দেশের মালিক হইয়া বসে। এইরূপে পর পর দুইটা বিজয় সম্মুখে রাখিয়া বিদেশী ঐতিহাসিক বখন ভারতের ইতিহাস লিখিতে বসিলেন, তখন তিনি কারণ খুজিতে আরম্ভ করিলেন যে, এই দেশটা এত সহজে পরপদানত হয় কেন ? ঐতিহাসিক প্রাকৃমুসলমান যুগের ভারতের ইতিহাসের কথা একেবারে ভুলিয়া গিয়া সিদ্ধান্ত করিয়া বসিলেন যে, এই দেশের প্রাকৃতিক অবস্থাই খারাপ—উহাতেই যুগে যুগে দেশবাসিগণকে দুৰ্ব্বল করিতেছে এবং পরপদানত করিতেছে। আমার মনে হয়, প্রাচীন ভারতের প্রকৃত দুর্বলতার কারণ অন্তবিধ। জাতিভেদ প্রথার এক ফল এই