পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] সমাধান ×ბ¢ზ শ্বশুর, শাশুড়ী, স্বামী সকলকে ভক্তি করিতে হইবে । লতিকা কিন্তু এই সহজ কথাটা কিছুতেই বুঝিল না। তাহার বাবা মা এত টাকা ঢালিয়া বিবাহ দিয়াছে, আবার সে কাজও করিবে ? একে ত এই বিশ্ৰী খড়ের ঘরে তাহার প্রাণ বাহির হইয়া আসিতেছে, এথানে থাকিবার কোনোই সুবিধা নাই । পুকুরে গিয়া স্বান করিতে কাপড় কাচিতে হয়, থাকিয়া থাকিয়া উইমাটির ঢেল মাথার উপর ঝরিয়া পড়ে, একদিন না কি সাপও একটা রান্নাঘরের চাল হইতে পড়িয়াছিল । পাড়াগায়ের মেয়ে হইলে কি হয়, সে এতদিন দিব্য আরামে যত্নে, থাকিয়াছে, তাহার এ সব বড়ই অসহ্য ঠেকিতে লাগিল । চুপ করিয়া থাকিবার মেয়ে সে নয়, কথাবাৰ্ত্তায় মনের ভাব বেশ ফুটিয়া বাহির হইতে লাগিল। সঙ্গের ঝি-টা স্বদ্ধ এমন নাক সিটকাইয়া রহিল যেন সেও স্বয়ং নবাব খাঞ্জা খার প্রপৌত্রী । গৃহিণী ছুটিলেন কৰ্ত্তার দরবারে নালিশ করিতে। সব শুনিয়া কৰ্ত্ত হু কাট। হাত হইতে নামাইয়। রাখিয় বলিলেন, “এই রকম যে হতে পারে সে ভয় আমার ছিল । তা দেখ, আমাদের এখনি কিছু বলতে যাওয়া ভাল দেখায় না। বদ্‌নাম রটে যাবে যে এক কঁাড়ি টাকা গিলে এখন মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছি। দত্তজাকেও রাগাতে চাই না, টাকাওয়ালা মানুষ, খাতির রাখলে অনেক স্থবিধা হয়ে যেতে পারে। এখনকার মত চেপে যাও। বরং কালীকে আড়ালে ডেকে বল, সে বুঝিয়ে বললে বউ শুনবে ” গৃহিণী গরগর করিতে করিতে চলিয়া গেলেন, “ওম, এমন কাগু কথনও শুনিনি, মা ! বাপের টাকা আছে বলে কি বউ মাথায় চড়ে নাচবে ? এই যে আমার ভাই-বেীর এসেছিল কত বড়মানুষের ঘর থেকে, কিন্তু সাত চড়ে তাদের মুখে রা শুনেছ কেউ ?” ছেলেকে ডাকিয়া বলিলেন, “দেখ, কালু, তুই বউকে একটু বুঝিয়ে বল, যেন সামূলে চলে। আমি কিছু বলতে গেলে বউর্কাটকী ব’লে নাম বেরবে এখনি। আর ঐ কি মাগীকে বিদায় করতে বল, আমাদের সংসারে ও-সব পোষাবে না ।” কালীমোহন বলিল, “আর ত দুদিন পরে ওর চলেই যাবে, তার জন্তে এত হাঙ্গাম কেন ? ছ’টা দিন যখন কেটেছে, তখন বাকী ক’টা দিনও কাটবে।” গৃহিণী বলিলেন, “শোন কথা, একি দুদিন চারদিনের ব্যাপার নাকি ? বিটাই না হয় আর আসবে না, বউও কি আস্বে না, না কি ? এই পূজোর মাসট পার হয়ে গেলেই তাকে আবার নিয়ে আসব না ?” ছেলে বলিল, “তোমাদের খুশী । আমি সাম্নের সপ্তাহে কলকতায় যাচ্ছি, একটা ছেলে পড়ানোর কাজ জুটেছে। এম্-এ পড়ব ঠিক করেছি। পাশ করে, চাকরি-বাকরী জুটলে তবে স্ত্রী নিয়ে যাব । ততদিন যেখানে তোমাদের এবং তাদের সুবিধে হয়, ব্যবস্থা কোরে । বোঝাতে-টােঝাতে আমি পারব না, বড়লোকের মেয়ে যখন এনেছিলে তখন এ সবের জন্যে তৈরি থাকাই উচিত ছিল।” মায়ে ছেলেয় একপাল। ঝগড়া হইয়া গেল। কালীমোহন বাহিরু হইয়া গেল এবং পাশের ঘরে বসিয়া লতিকা প্রতিজ্ঞ করিল যে, স্বামী যদি না থাকেন, তাহ হইলে তাহাকে কাটিয়া ফেলিলেও সে এই অঙ্গ পাড়াগায়ে আর আসিবে না। কাৰ্য্যতঃ হইলও তাহাই । মেয়ে লইয়া গিয়া রসময় দত্ত রাখিয়াই দিলেন। রাধামোহন যতবার লইয়া যাইবার নাম করিলেন, একট-ন-একটা বাধা উপস্থিত হইল । কখনও মেয়ের অস্থখ, কখনও তার মায়ের অসুখ, কখনও বা ভাইয়ের বিয়ে, কখনও বা দিন ভাল নয়। আসল ব্যাপার বুঝিতে কৰ্ত্ত গিল্পীর বাকি রহিল না, র্তাহাদের সংসারের খাটুনী খাটিতে বড়মানুষের মেয়ে আসিবে না । গৃহিণী চটিয়া বলিলেন, "ছেলের আবার বিয়ে দেব । ঠাকার দেখ না, মেয়ের বিয়ে দিয়েছে যখন, তখন তার উপর দাবি কিসের ?” কৰ্ত্ত বলিলেন, "ছেলে ভাল হ’লে কি আর এত লাঞ্ছনা সইতে হ’ত ? কেমন বউ না জাসত দেখতাম। একবার বিয়ে দিতেই জিব বেরিয়ে গিয়েছে, তার আবার বিয়ে দেব। কুলাঙ্গার পেটে ধরেছিলে ?”