পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ع (۹ অযোগ্য, তবুও আমি ক্ষমা চাই। দিদিকে বলিও ক্ষমা করিতে ।.তার একমাত্র কন্যাকে আমি এই সৰ্ত্তে বিবাহ . করিলাম যে, দিল্লী ছাড়িয়া আর কোথাও যাইব না,—বাংলার নাম মুখে আনিব না,— পুরাতন সম্পর্কের কথা ভুলিব। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আমি, অর্থের জন্য এই সৰ্বই মানিয়া লইলাম । ভাবিলাম,-- আপনাদের গোপনে অর্থ-সাহায্য করিব, কেহই বুঝিবে না, জানিবে না । তথন কি জানিতাম মোগল-রাজত্বে বাস করিয়৷ বাদশাহী আইন-কামুনে ইহার কেতাদুরস্ত হইয়াছে ; যাহাকে বন্দী করে তাহার চিস্তারাজ্য পর্য্যস্ত দখল করিয়া বসে । প্রথম দিন মণি অর্ডার করিতে গিয়া ধরা পড়ি, তিরস্কৃত হই। আমি কলের ম্যানেজার, মাস মাস হাতথরচ লইতাম- দু-শ’ তিন শ’ টাকা । সেই হইতে বিশ পচিশ টাকা বরাদ হইল। শুধু পানের খরচ ! মা, শুধু তাই নহে, এনেখ-শশুকে কেমন করিয়া বশে রাখিতে হয়, তাহা ইহার ভাল রকমেই জানে । আমার সঙ্গে সঙ্গে লোক ফেরে, অলক্ষ্যেও হয়ত ঘোরে এবং দিল্লী ষ্টেশন অভিমুখে আসিলে ইহাদের সর্বপ্রধান আশঙ্কা হয়—পশু শিকল ছিড়িল বুঝি । হায় রে দাসত্ব ! কিসের প্রলোভনে আজ জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষণ পূরণ করিতে গিয়া স্নেহ শাস্তি হার হইলাম ! আমার বিবাহ ! সেও ত বিধাতার অভিশাপ । অর্থও তাই । আজীবন এই অভিশপ্ত সুথের মধ্যে আমায় অসহ যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতে হইবে । যখনই রাজভোগ মুখে তুলি, মনে হয় ভগ্ন গৃহপ্রাস্তে সেই মোট চালের ভাত তোমার হস্তের অমৃত পরিবেশন । যখনই অর্থ লইয়া নাড়াচাড়া করি, মনে হয় যেন তীব্র আশীবিষ আমার প্রতি অঙ্গুলি লেহন করিতেছে। মা, শাস্তি আমি পাই নাই—হয়ত এ জীবনে পাইব না । জীবনভোর এই অগ্নিরাশির বোঝা বহিয়া সাধের লক্ষপতি সাজিয়া থাকিব এবং তুমিও ইহার খাতিরে রাজজননী আখ্যালাভ করিবে । কিন্তু আমাদের অস্তৱ ত এক মুহূর্তের তরেও এ কথা ভুলিতে দিবে না, প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড

কত বড় ময়মরীচিকর পশ্চাতে ছুটিয়া চলিয়াছি ও এই অন্তঃসারশূন্য খ্যাতির মূল্য কতখানি । আমার হাতখরচের টাকা হইতে কিছু টাকা এক পরিচিত লোকের হাতে গোপনে পাঠাইলাম । মণিঅডার করিতে সাহসী হইলাম না। জানি না, পাইবে কি না ? যদি প{ও অধম সস্তানের জিনিষ বলিয়। ঘূণা করিও ন, মা, সে উপেক্ষ আমায় মরণাধিক যন্ত্রণা দিবে ... ... সমস্ত পড়িয়া মেনকা ডাকিল, “ম৷ ” মা একমনে পত্রের কথা শুনিতেছিলেন, নয়ন হইতে দর দর ধারে অশ্র ঝরিতেছিল । স্নেহ-বঞ্চিত কোটিপতি পুত্রের বেদনায়ও পুত্রস্থখাথিনী দুঃখিনী মায়ের ব্যথার অশ্রু ঝরিয়া পড়ে । সে বঁাচিয়া আছে এবং জগতের শ্রেষ্ঠতম ঐশ্বৰ্য্যে বিশ্বকাম্য সুখের সিংহাসনেই বসিয়া আছে। তথাপি যাহার এ জগতের প্রান্ত হইতে চিরদিনের তরেই চলিয়। গিয়াছে—তাহাদের শোকের চেয়ে এ কি করুণ— মৰ্ম্মান্তিক । জগতের ভিতরে থাকিয় দিনাস্তে যে মাতৃস্নেহের এক বন্দুও উপভোগ করিতে পারে না, মায়ের কুশল-আশীৰ্ব্বাদ স্নেহ যার চিরদিনের তরেই রুদ্ধ হইয়া গিয়াছে—সে কোটিপতি হইলেও জগতের সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ভাগ্যহীন ও সেই পুত্ৰবঞ্চিত জননীর বেদনাও পুত্ৰশোকের চেয়ে মৰ্ম্মম্ভদ | বহুক্ষণ পরে সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলিয়। ধীরস্বরে মা বলিলেন, “জগতে হয়ত এইটাই সম্ভব । কৰ্ম্মফল কি ন!— জানি না, ব্যথার উপর ঘায়ের স্বষ্টি বিধাতাই করেন । আমরা মাতুষ, না স’য়ে কি ক’রবে, মা । মিনি, এক ছেলে রাগ ক’রে বাড়ী ছেড়ে গেল,—এক ছেলে অভিমান ক’রে জগত ছেড়ে পালালে,—আমার সবচেয়ে দরদী ছেলে অরুণ-আমাদের কষ্ট ঘোচাবার জন্য নিজেকে এ কি ফঁাসে জড়িয়ে ফেললে ? ছোটখোক কোথায় খেলা করিতে গিয়াছিল। ছুটিতে ছুটিতে আসিয়া মায়ের কোলে ঝাপাইয় পড়িয়া আদরের স্বরে বলিল, “ম খিদে পেয়েছে, খাবার দে ।”