পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম.সংখ্যা ] মেনক ১তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া কহিল, “আয়, আমি খাবার দিচ্ছি। মা, কাপড় ছেড়ে ফেল, সন্ধ্যে হ’য়ে এল, এখনই ওদের বাড়ী না গেলে কালকের মত বকবিকি ক’রবে হয়ত । রান্নাও ত অনেক !” মা ত্র্যস্তে উঠিয়া ঘরের মধ্যে চলিয়া গেলেন ও বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ ○> কাপড় ছাড়িয়া উঠানে দাড়াইয়া কন্যাকে ডাকিলেন,~ “মিনি, তোর হ’ল ?” ছোট খোকাকে কোলে লইয়া মেনকা রান্নাঘরের বাহিরে আসিয়া বলিল, “হ্যা,-চল।” আসন্ন সন্ধ্যার অন্ধকারে মানমুখী মাত ও কল্প নিঃশব্দে পথ অতিবাহন করিতে লাগিলেন । ংলা ভাষার ভবিষ্যৎ শ্ৰীগোপাল হালদার ভাষার দৈবজ্ঞ-বৃত্তি বড়ই হাস্যকর জিনিষ । বেকন ছিলেন তাহার সমকালীন পণ্ডিতদের মধ্যে অগ্রগণ্য । তিনি স্থির সিদ্ধাস্তে পৌছিয়াছিলেন যে, পৃথিবীতে তখনকার দিনের কথিত ভাষাগুলি বেশী দিন টিকিবে ন, টিকিবে প্রাচীন ল্যাটিন বা ঐরূপ কোন দেব ভাষা । কিন্তু দেবতারা আজ লোপ পাইয়াছেন, লুপু দেবভাষাও অচল হইয়াছে ; এবং সেদিনকার ঘে আভিজাত্যহীন ভাষায় বেকন গ্রন্থ রচনা করিতে কুষ্ঠিত হইয়াছিলেন, আজ তাহাই প্রায় দেবতাহান পৃথিবীর দেবভাষা হইতে চলিল । ইহার পরে আর ছক পাতিয়া ভাষার করকোষ্ঠীর বিচার মূঢ়ের পক্ষেও শোভা পায় না । ভাষার জীবন মানুষের জীবন অপেক্ষাও এবং নারীর চরিত্র অপেক্ষাও বিসর্পিত । তাই ভাবীকালের ভাষা লইয়া ভবিষ্যদ্বাণী করিতে যাওয়া হাস্যকর ব্যাপার। তবুও, বৰ্ত্তমানের ভাষা লইয়া আলোচনা করিলে অদূর ভবিষ্যতে ইহার স্রোতে কোন ঢেউ উঠিবে-পড়িবে, তাহার কিছু আভাস যাওয়া যায় না কি ? ভাষার প্রবাহ ত নিরবচ্ছিন্ন নয়, বৰ্ত্তমান বাংলা ভাষাও আকাশ হইতে নামিয়া আসে নাই । তাহার জন্য অনেক আয়োজন চলিয়াছিল । তাহার ফলেই সে তার বর্তমান রূপ পাইয়াছে। তেমনি, ভাবীকালে জটিল বাংলা ভাষা যে রূপ পরিগ্রহ করিবে, আজিকার দিনেষ্ট তাঙ্গার জন্য আয়োজন চলিয়াছে। সেই আয়োজন ঘত সম্পূর্ণ, যত পূর্ণাবয়ব হইবে, ভাবীকালের বাংলা ভাষাও ততই মহীয়ান, ততই সুসমৃদ্ধ হইবে। এখন প্রশ্ন, তাঙ্গ কি হইতে চলিয়াছে ? *** . . . . বাংলা ভাষার বর্তমানের যাহা পুজিপাটা— যাহার উপর তাহার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে, তাহাকে দুইটি দিক হইতে যাচাই করা চলে। এক, ইহার গঠনের দকৃ—এদিক হইতে দেখা চলে, ইহা সত্যসত্যই জাতীয় ভাঘ, না কয়েকটি উপভাষার সমষ্টিমাত্র ; ইহা কতটা স্বতন্ত্র, কতটাই বা পরতন্ত্র ; ইহা কি পরিমাণে অনড, কি পরিমাণে বা নমনীয়, ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, উপযোগীতা ব৷ সার্থকতার দিক হইতেও ইহাকে যাচাই করা চলে— এদিক হইতে দেখিতে হইবে, ইহা কত লোকের ভাষা, কত লোকের একমাত্র আশ্রয় , তাহাদের মন ও বৃদ্ধির উৎকর্ষে ইহা কতটা সহায়ক ; তাহদের রসবোধ বা হৃদয়ের ধৰ্ম্মই বা ইহাতে কি পরিমাণে ক্ষুক্তিলাভ কৰে । তাহাদের সকল কথাকে, সকল ভাবকে ইহা প্রকাশ করিতে পারে কি না, না ইহাকে আশ্রয় করিলে তাহদেব কোন কোন কথা অকথিত থাকিয়া যায় । এই দুইটি দিক হইতেই আমরা বাংলা ভাষার ভবিষ্কং গণনা করিবার চেষ্টা করিব ।